Thikana News
১৯ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


 

রিজার্ভ ২১ বিলিয়নে নেমে যাওয়ার শঙ্কা

রিজার্ভ ২১ বিলিয়নে নেমে যাওয়ার শঙ্কা


চলতি বছরের মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিভিন্ন শর্ত মেনে চলছে সরকার। সংস্থাটির পরিমাণগত কর্মক্ষমতা মানদণ্ড অনুযায়ী, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চলতি বছরের জুনে ২৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার এবং ডিসেম্বরে ২৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে থাকতে পারবে না। অথচ বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ২৩ বিলিয়ন ডলারের সামান্য বেশি। কিন্তু সেপ্টেম্বরে রিজার্ভ আরও কমে ২১ বিলিয়নের ঘরে নেমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ আগামী মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) পেমেন্ট বাবদ এক বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে। গত বছর আকু পেমেন্ট দুই বিলিয়নের কাছাকাছি থাকলেও আমদানি কমে যাওয়ায় বিগত কয়েক কিস্তিতে আকু পেমেন্ট সোয়া বিলিয়নের আশপাশে থাকছে। দুই মাস পরপর এশিয়ার দেশগুলোকে এ দায় পরিশোধ করতে হয়। সর্বশেষ গত ৬ জুলাই মে-জুন মাসের দায় বাবদ ১১০ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে। নির্ধারিত পরিমাণ রিজার্ভ মজুত করতে ব্যর্থ হওয়ায় আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের ক্রেডিট লাইন কমে যাওয়াসহ নানামুখী সমস্যা দেখা দিচ্ছে। রিজার্ভ ধরে রাখতে গিয়ে নির্ধারিত সময়ে বকেয়া পরিশোধ না করায় বিশ্বের বিভিন্ন ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে ডিমেরিট দিচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দিন দিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
এদিকে দেশের অন্য সব আর্থিক সূচকে এগিয়ে থাকলেও রিজার্ভের অপর্যাপ্ততার কারণেই ব্রিকস জোটে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ব্রাজিল, ভারত, চীন, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত বৈশ্বিক জোট ব্রিকসে নতুন ছয় দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চেষ্টা করেও এ জোটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেনি বাংলাদেশ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আর্থিক এ জোটে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে যেসব সূচক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, তার অধিকাংশই বাংলাদেশ পূরণ করেছে। নতুন যে ছয়টি দেশকে এ জোটের সদস্য করা হয়েছে কিংবা যারা আগে থেকেই এ জোটে আছে, তাদের কারও কারও থেকে বাংলাদেশে জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বেশি। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পর্যাপ্ততা না থাকায় এ জোটে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হয়নি। কারণ কোনো দেশের রিজার্ভ স্থির না থাকলে জিডিপি অর্জন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ব্যাহত হতে পারে মাথাপিছু আয়ের কাক্সিক্ষত হার।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রের তথ্যমতে, বৈদেশিক মুদ্রার অন্তর্মুখী প্রবাহ কমে যাচ্ছে। কাক্সিক্ষত হারে রেমিট্যান্স আসছে না। রপ্তানি আয়েও তেমন গতি নেই। কিন্তু বিপরীতে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হচ্ছে, তার ব্যয় পরিশোধের পাশাপাশি আমদানির বকেয়া দায়ও পরিশোধ করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার অন্তঃপ্রবাহের চেয়ে বহিঃপ্রবাহ বেশি। যার প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত বছরের ২৩ আগস্ট বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ছিল যেখানে ৩ হাজার ৯৩৫ কোটি ডলার, চলতি মাসের একই সময়ে তা কমে নেমেছে ২ হাজার ৯৩২ কোটি ডলারে। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমেছে ১ হাজার ৩ কোটি বা ১০ বিলিয়ন ডলার। তবে আইএমএফের শর্ত পরিপালন করতে প্রকৃত হিসাবের যে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক দিচ্ছে, তাতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত মজুত (গ্রস রিজার্ভ) আরও কমে নেমেছে ২ হাজার ৩১৬ কোটি ডলারে। এ হিসাবে আলোচ্য সময়ে মজুত কমেছে ১ হাজার ৬১৯ কোটি বা ১৬ বিলিয়ন ডলার। শুধু বৈদেশিক মুদ্রার মজুতই কমছে না, একই সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১৪ দশমিক ২১ শতাংশ। গত বছরের ২৩ আগস্ট এক ডলার পেতে ব্যয় করতে হতো ৯৫ টাকা, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে তার জন্য ব্যয় হচ্ছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। তবে এ হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাস্তবে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন হচ্ছে ১১২ থেকে ১১৩ টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি দরে।
রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ডলারের বাজারে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলা করতে দেশীয় মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এতে বেড়ে যায় পণ্যের আমদানি ব্যয়। অন্যদিকে ডলার বাজারের অস্থিরতা কমাতে এবং জরুরি পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে। এর মাধ্যমে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা আয় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বাংলাদেশকে ব্রিকসে কেন নেয়নি, সে আলোচনার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যাদের নিয়েছে তাদের অবস্থান পর্যালোচনা করা। তাদেরকে প্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, কারণ তাদের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে ভালো।’

কমেন্ট বক্স