Thikana News
২২ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪
মেয়র এরিক অ্যাডামসের সংবাদ সম্মেলন

নিউইয়র্কের মসজিদের মাইকে ভেসে আসছে আজানে ধ্বনি

নিউইয়র্কের মসজিদের মাইকে ভেসে আসছে আজানে ধ্বনি
‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার’ এই সুমধুর আজানের ধ্বনির মুগ্ধতা এখন ছড়িয়ে পড়ছে নিউইয়র্কের বাতাসে। আগে নিয়ম ছিল কেবল মসজিদের ভেতরেই নিউইয়র্কের মসজিদের মাইকে মাইকে আজানের ধ্বনি হবে। আজানের শব্দ বাইরে যাবে না। এখন আর চার দেয়ালের ভেতরে আজানের ধ্বনি সীমাবদ্ধ থাকবে না। এখন থেকে প্রকাশ্যে মাইকে শোনা যাচ্ছে আজানের ধ্বনি। ২৪ আগস্ট থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে।
২৯ আগস্ট নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন মসজিদে মাইকে শব্দ করে আজান দেওয়ার ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, রমজান মাসে এবং শুক্রবার জুমার দিনে মাইকে শব্দ করে আজান দেওয়া যাবে। তিনি বলেছেন, শব্দ করে আজান দেওয়া ইসলাম ধর্মের মানুষের অধিকার। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মেয়র অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ, পুলিশ কমিশনার কাবানসহ বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ। মেয়রের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয় আজানের মধ্য দিয়ে। সেখানে একজন ইমাম আজান দেন এবং ইংরেজি ভাষায় আজানের অনুবাদ করে শোনান।
অনুষ্ঠানে মেয়র অফিসের মুসলিম কমিউনিটির সিনিয়র লিয়াজোঁ মোহাম্মদ বাহে, মেয়র অফিসের চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ মীর বাশার, ডিএইচ কেয়ারের সিইও শাহরিয়ার রহমান, আল আমিন জামে মসজিদের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি জয়নাল আবেদীন, কমিউনিটি লিডার মাজেদা উদ্দিনসহ যারা মাইকে উচ্চস্বরে আজানের ব্যবস্থা করার পেছনে কাজ করেছেন তাদের অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, মাইকে উচ্চস্বরে সিটিতে আজানের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে মেয়র অফিসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাহে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। সেই কারণে অনেকেই তাকে ও মীর বাশারকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি মেয়র অফিসের অন্যান্য মুসলিম কর্মকর্তারা বিশেষভাবে সহায়তা করার কারণেই মেয়র আজানের বিষয়টি আরো বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আল আমিন মসজিদ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, ২৯ আগস্ট মেয়র তার ঘোষণায় বলেছেন, রমজান মাসে এবং শুক্রবার জুমার নামাজের আজান মসজিদে শব্দ করে দেওয়া যাবে। কিন্তু আগে আমরা যে চিঠি পেয়েছি, সেখানে বলা হয়েছে, সকাল নয়টার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অর্থাৎ আটটা পর্যন্ত শব্দ করে আজান দেওয়া যাবে। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন মসজিদে আজান দেওয়াও শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন মেয়রের ঘোষণা অনুযায়ীই মসজিদগুলোতে আজান দিতে হবে। তবে আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, যেন সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত যে কটি নামাজের ওয়াক্ত থাকবে, সে অনুযায়ী যাতে আজান দেওয়ার ব্যবস্থা বহাল রাখা হয়। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, মসজিদে আজান দেওয়ার কারণে যাতে অন্য ধর্মের প্রতিবেশীদের সমস্যা না হয়। তাই ধীরে-সুস্থে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।
এর আগে নিউইয়র্কের মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য ঐতিহাসিক এই অনুমতি দিয়েছে সিটি কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন ধরে মসজিদে মাইকে জোরে শব্দ করে আজান দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন মুসলমানরা। অবশেষে তাদের প্রতীক্ষার অবসান হলো। এখন থেকে নিউইয়র্কের মসজিদগুলোতে মাইকে আজান দেওয়ার পাশাপাশি বাইরেও শব্দ যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। এই ঘোষণায় সিটিতে বসবাসরত ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। ইতিমধ্যে জ্যামাইকা মুসিলম সেন্টারসহ বিভিন্ন মসজিদের বাইরে আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আফতাব মান্নান বলেন, আগে আমরা কেবল শুক্রবার জুমার নামাজের আজান মাইকে দিতাম। আমরা বিশেষ অনুমতি নিয়েই এটা করছিলাম। অন্যান্য ওয়াক্তে কেবল মসজিদের ভেতরেই আজান শোনা যায়, সে রকম শব্দধ্বনি ব্যবহার করতাম। এখন থেকে আর সেটি হবে না। এখন থেকে মসজিদে কেবল সকাল ও রাতের নামাজের আজান বাদে অন্য সব ওয়াক্তের আজানের শব্দ বাইরে যাবে। নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের অফিস থেকে বিষয়টি আমাদেরকে চিঠি দিয়ে জানানোর পর আমরা ২৬ আগস্ট থেকে মাইকে আজান দেওয়া শুরু করি। আমাদের লাউন্ড স্পিকারের ব্যবস্থা আগে থেকেই ছিল বলে নতুন করে কিছু করতে হয়নি। তবে আমরা এখনো অনেক জোরে সাউন্ড দিচ্ছি না, যাতে অন্য মানুষের সমস্যা হয়। আমরা এমনভাবে আজান দিচ্ছি, যাতে প্রতিবেশীদের কোনো সমস্যা না হয়। এ ছাড়া আমরা আশপাশের সবার সঙ্গে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলেছি যে আমরা আজান দিলেও তারা বিরক্ত হবে না। তারা জানে, ইসলাম ধর্মে কী কী অনুষ্ঠান উদ্্যাপন করা হয়। আজান ও নামাজের বিষয়েও তারা অবহিত। তিনি আরও বলেন, এই সুযোগ দেওয়ার জন্য আমরা সিটি মেয়রকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এটি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। তিনি তা বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি বলেন, কেয়ার, ইকনা, মুনাসহ বিভিন্ন সংগঠন জোরে আজান দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছিল। অবশেষে সফলতা এসেছে।
গত ২৪ আগস্ট নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর ডেপুটি কমিশনার মার্ক টি স্টুয়ার্ট স্বাক্ষরিত ঘোষণায় নিউইয়র্ক সিটিতে মসজিদের বাইরে জোরে আজানের শব্দ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। নিউইয়র্ক সিটির শব্দ আইন অনুযায়ী সকাল নয়টার আগে এবং সূর্যাস্তের পরে অনুমতি ছাড়া কোথাও উচ্চ আওয়াজ/মাইক ব্যবহার করা যাবে না। সে কারণে ফজর ও এশা ব্যতীত এখন থেকে জোহর, আসর ও মাগরিব এই তিন ওয়াক্ত নামাজের আজানের জন্য আর অনুমতি লাগবে না। তবে মেয়রের নতুন ঘোষণায় কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা স্টেটের মিনিয়েপলিস সিটি কাউন্সিলের পর নিউইয়র্ক সিটি হলো দ্বিতীয় সিটি, যেখানে মাইকে আজান দেওয়া ও আজানের শব্দ মসজিদের বাইরে আশপাশের মানুষের শোনার সুযোগ দেওয়া হলো।
একসময় নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে নূর আল ইসলাম মসজিদে আজান প্রচারিত হতো মাইকে। কয়েক বছর আগে এলাকার ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা সিটি প্রশাসনে আপত্তি জানালে সেই বিধি বাতিল করা হয়। এর পর থেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে সিটি কাউন্সিলে লবিং শুরু হয়।
এদিকে মসজিদগুলোতে মাইকে আজানের অনুমতি সংক্রান্ত খবর ছড়িয়ে পড়ার পর নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমান সম্প্রদায় আনন্দ প্রকাশ করছে। তারা মহান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করে নিউইয়র্ক সিটির মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, নিউইয়র্ক সিটির এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই আমাদের জন্য সুসংবাদ। আমাদেরকে নিউইয়র্ক সিটির ভলিউম ল’ মেনেই এ চর্চা করতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে, যাতে এ ব্যাপারে অন্য কমিউনিটির লোকজন বিরক্ত বা আপত্তি না তোলে।
এ ব্যাপারে কমিউনিটি লিডার মাজেদা উদ্দিন বলেন, আসলে সকল মুসলিমের সহায়তায় এটি করা সম্ভব হয়েছে। ১৯৮২ সালে মাওলানা ইমাম বাকী শব্দ করে আজান দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। আমিও ১৯৯৬ সালে এতে স্বাক্ষর করেছি। তিনি চেষ্টা করেছেন সবার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়ার। মাঝখানে কেবল রমজান মাসে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এখন ফজর ও এশা বাদে বাকি তিন ওয়াক্তে মাইকে আজান দেওয়া যাবে। এটা আসলে নিউইয়র্কের সকল মুসলমানের জয়।
মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকার (মুনা) ন্যাশনাল এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আরমান চৌধুরী বলেন, এটি অবশ্যই মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য সুসংবাদ। তবে এ অধিকারের চর্চা আমাদের সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। অন্য কমিউনিটির লোকজন যেন বিরক্ত না হন কিংবা আপত্তি না তোলেন, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমরা কাজটি করব। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গেও মসজিদগুলোর সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে। আজানের ভলিউম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারলে কোনো সমস্যা হবে না।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটিতে ইহুদি সম্প্রদায়ের পর মুসলমানদের স্থান। সিটিতে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মুসলমান বাস করেন এবং নিউইয়র্ক মেট্রোপলিটন সিটিতে এ সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি। এখানে বাংলাদেশিদের পরিচালিত ৩৫টিসহ মোট ১৭৫টি মসজিদ রয়েছে বলে জানা গেছে।
 

কমেন্ট বক্স