জসিমউদ্দিন আকাশ : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাসপাড়ের স্বপ্নবাজ তরুণ শুভেচ্ছা চক্রবর্তী। তিনি অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ে। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে সবার বড় শুভেচ্ছা। অন্নদা গভর্নমেন্ট হাইস্কুল, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক কলেজের পাট চুকিয়ে ভর্তি হন বাংলাদেশ মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বা এমআইএসটিতে। এমআইএসটিতে পড়া অবস্থায় তিনি নিজেকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। সেই ভাবনা থেকেই শুরু করেন স্বপ্নের পথে হাঁটা। এখনও হাঁটছেন তিনি স্বপ্নের পথে!
এমআইএসটি থেকে বোয়িংয়ে : সে যাক, এমআইএসটির অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী শুভেচ্ছা চক্রবর্তী। ২০১২ সালে স্নাতক শেষ করে ঠিক দুই বছর পর ২০১৪ সালে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের উইচিটায়। সেখানে এসে উইচিটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে টিচিং ও রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। যদিও শিক্ষকদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন তারও আগে। সেই সম্পর্ক, নিজের মেধা ও একাগ্রতায় ভর করে মাঝে রোবটিক্স, অটোমেশন, অ্যারোস্পেস-সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেন তিনি। এরপর গত মে মাসে যোগ দেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমান প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ে। যদিও বোয়িংয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছিল আরো দুই মাস আগে। একে একে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সব দেয়াল টপকে শুভেচ্ছা ঠিকই তাঁর স্বপ্নের বন্দরে পৌঁছান।
যে কাজ করছেন বোয়িংয়ে : প্রাথমিকভাবে বোয়িংয়ের তিনটি বিভাগ- বোয়িং বাণিজ্যিক বিমানবন্দর; বোয়িং ডিফেন্স, স্পেস অ্যান্ড সিকিউরিটি এবং গ্লোবাল সার্ভিস। শুভেচ্ছা চক্রবর্তী এর মধ্যে ডিফেন্স, স্পেস অ্যান্ড সিকিউরিটি বিজনেস ইউনিটে কাজ করছেন। শুভেচ্ছা এ বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী। বোয়িংয়ের একটি বিমান বানাতে প্রায় ২০ লাখ ছোটবড় যন্ত্রাংশ লাগে। নানা মডেলের ছোটবড় বিমান বোয়িং প্রতি মাসেই বানায়। তাই প্রয়োজন অসংখ্য যন্ত্রাংশ, যা বোয়িংয়ের পক্ষে বানানো অসম্ভব। ফলে বাইরের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে হয়। প্রতিষ্ঠানের ভেতর ও বাইরের এসব সরবরাহকারীর কাজ তত্ত্বাবধান এবং মূল্যায়ন করেন শুভেচ্ছা। তা ছাড়া বোয়িং ডিফেন্স, স্পেস অ্যান্ড সিকিউরিটি বা বিডিএস টিমের প্রত্যেকের কাজ হলো বোয়িংকে নিরাপদ রাখা। মহাকাশে বিভিন্ন সমস্যা এবং বিভিন্ন পরিষেবা দেয়ার ক্ষেত্রেও এ বিভাগ কাজ করে। বিভাগটি আগে বোয়িং ইন্টিগ্রেটেড ডিফেন্স সিস্টেম নামে পরিচিত ছিল।
কম্পিউটার বিজ্ঞান থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে : মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বা এমআইএসটিতে শুরুতে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন শুভেচ্ছা। সপ্তাহখানেক ক্লাস করার পর সুযোগ আসে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ার। সুযোগটা হাতছাড়া করেননি শুভেচ্ছা। যদিও পরিচিত এবং আশপাশের সবাই তাঁকে বলেছিলেন কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ার জন্য। নিজের সিদ্ধান্তে অটল শুভেচ্ছা। মন দিলেন অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে।
নাসার কাছ থেকে পাওয়া উপহার : স্নাতক শেষে ২০১৩ সালে একটি রোবটিক্স প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নাসায় আসার সুযোগ পান শুভেচ্ছা। সেই প্রতিযোগিতায় দলগতভাবে তারা বেশ ভালো করে আলোচনায় আসেন। নাসার তৎকালীন পরিচালকের হাত থেকে পুরস্কার নিয়ে দেশে ফেরেন তারা। সেখানেই শেষ নয়! দেশে ফেরার পর একাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে নিজেদের দলগত ছবি দেখে অবাক হয়ে যান শুভেচ্ছা। নাসার কাছ থেকে পাওয়া সেই উপহার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বইয়ে তাদের নিয়ে যা লেখা হয়েছিল, তা দেখে নড়েচড়ে বসেন শুভেচ্ছা। নিজেকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে থাকেন। সেই স্বপ্ন তাঁকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে বলে মনে করেন তিনি।
আগামীর স্বপ্ন : আগামীতে দেশের শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে চান এই তরুণ। তাছাড়া এইটুকু বয়স থেকে বাবাকে নিজের আদর্শ হিসেবে মেনে আসা এই তরুণ তাঁর প্রিয় বাবার স্মৃতি রক্ষায় নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কিছু করতে চান; যার মাধ্যমে উপকৃত হবেন সমাজ ও দেশের সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া বিমান বাংলাদেশের ডাক পেলে সেই ডাকে সাড়া দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও কাজ করতে চান তিনি।