ডিআরইউতে যে ‘মব’ হয়েছে, সেটা স্বতস্ফূর্ত নয়। কারো ইন্ধনে হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন টকশোতে এসব কথা বললেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) একটি গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করেছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামে সংগঠন। কিন্তু ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয় দিয়ে একদল ব্যক্তি শুরুর আগেই পণ্ড করে দেয় সেই অনুষ্ঠান। তারা হেনস্থা করেন সেখানে অতিথি হিসেবে আসা সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে। এই ঘটনার নিন্দা জানান রাজনীতিক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে যেভাবে প্রশ্ন করা হচ্ছিল, তিনি জুলাই আন্দোলনের পক্ষে নাকি বিপক্ষে ছিলেন। গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ছিলেন, সেটা তিনি জানিয়েছেন। কিন্তু কাউকে এভাবে জেরা করা, অনুষ্ঠান বন্ধ করা কোনোভাবেই কাম্য নয়- মন্তব্য করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি।
২৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার এই টকশোতে অতিথি হিসেবে আরো ছিলেন রাজনীতি বিশ্লেষক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আশরাফ কায়সার। নিউইয়র্ক সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) আলোচনা অনুষ্ঠানটি সরাসরি দেখা গেছে ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউব চ্যানেলে। যেখানে বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কথা বলেন দুই অতিথি।
‘মবের’ নামে মতপ্রকাশের পথ রুদ্ধ করার কোনো পথ অবলম্বন করা ঠিক নয় বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যেভাবে পালাতে বাধ্য হয়েছে, সেখান থেকে শিক্ষা নিলে ‘মব’ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারা নাজুক একটা সময়ের সুযোগ নিচ্ছে। এর পেছনে নৈরাজ্যবাদী কয়েকজন সোশাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারও দায়ী। এরা মনে করে দেশটা স্থিতিশীল হলে তাদের প্রভাব কমে যাবে, মন্তব্য করেন আশরাফ কায়সার।
দেশের সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতার পেছনে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে বলে মনে করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তবে তিনি বলেন, উপদেষ্টাদের সদিচ্ছার অভাবে আছে এমনটি নয়। তারা এক ধরনের স্বপ্ন নিয়েই দায়িত্বভার নিয়েছিলেন। নানা বাধায় তারা এখন কাজ করতে পারছেন না। এই কারণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একবার দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন, বলেন মান্না।
তবে কাজ না করতে পারলে সেই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আশরাফ কায়সার। তিনি বলেন, কাজ করতে না পারা শক্ত যুক্তি মনে হয় না। আসলে অনেক উপদেষ্টা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাই ধারণ করেন না। কিছু ঘটনায় তাদের দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার কথা বলেও একটি গোষ্ঠী আইন হাতে তুলে নেওয়ার সাহস দেখাতে পারছে- অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিক আন্দোলনের ঐতিহ্য বহন করে। সম্প্রতি সেখানে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নানা কথা বলা হচ্ছে। প্রশাসনও যেন বিরাজনীতির ধারাটা এগিয়ে নিতে চায়। ডাকসু নির্বাচনে সেই প্রভাব আছে। এটা কোনোভাবেই ঠিক নয় বলে মনে করেন তিনি।
ডাকসু নির্বাচনের চিরায়ত যে ধারা, এবার পরিস্থিতি তার থেকে ব্যতিক্রম বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষক আশরাফ কায়সারও। এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনীতি সেভাবে প্রতিষ্ঠিত জায়গায় নেই। তাই ডাকসু নির্বাচনে দলের বাইরে গিয়ে ব্যক্তি পরিচয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী দেখা যাচ্ছে। সে হিসেবে এটা নতুন একটি মাত্রা। কিন্তু একটি নির্বাচনে কে জিতবে- এ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা, সেটাই ভোটের আসল সৌন্দর্য্য। এ হিসেবে ভালো একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, মনে করেন তিনি।
ঠিকানা/এসআর


ঠিকানা অনলাইন


