Thikana News
১৮ অক্টোবর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪


 

পর্দার আড়ালে হচ্ছেটা কী?

পর্দার আড়ালে হচ্ছেটা কী?


আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে অতীত স্টাইলে হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক সময়     পার করার পর দ্বাদশে যুক্ত হয়েছে ভিনদেশি পাল্লা। একসময় দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া বিএনপির প্রধান ব্যক্তিরা সাজাপ্রাপ্ত। আগামী নির্বাচনে তাদের সরাসরি ভোটের লড়াইয়ের সুযোগ অনেকটা রুদ্ধ। আবার দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব দেওয়ায় তাদের আদর্শে প্রশাসনিক শক্তিবলয় বেশি হয়েছে। আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে গেলে বিএনপির একাদশের মতো ভরাডুবি হবে- এটা অনেকটা নিশ্চিত। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, এ সরকারের অধীনে কোনো ভোট নয়। আন্দোলনের পথে হাঁটলেও সংঘাত-সহিংসতায় বিদেশিরা আগ্রহী নয়। বিএনপির মূল টার্গেট যেকোনো উপায়ে সরকারের পদত্যাগ ও বিদায়।
এ অবস্থায় দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয়েছে বিরাট রাজনৈতিক সমীকরণ। রাজনৈতিকপাড়ায় আলোচনা-বিশ্লেষণের প্রতিযোগিতা। বিদেশপাড়ার সরগরমে ক্ষণে ক্ষণে উত্তেজনা। রাজনীতিতে ইসলামি আদর্শের উত্থানের শঙ্কা। ডান-বামের হিসাবও তুঙ্গে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও এ নিয়ে নেই খুব একটা ঢাকঢোল। রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের মধ্যেও যেন ভোট উৎসবে অনাগ্রহ। রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যেও গুমোট আভাস। সার্বিক পরিস্থিতিতে জনমনে প্রশ্ন, দুই দলের রাজনীতি-নির্ভর বাংলাদেশে পর্দার আড়ালে হচ্ছেটা কী? জনগণের অধিকার লুণ্ঠিত হয়ে তৃতীয় শক্তি, নাকি রাজনৈতিক সমঝোতায় ভিন্ন কিছু- এখন এটিই দেশের প্রধান খবর। রাজপাড়ার ভাষ্য, অতীতের ইয়াজউদ্দীন, ফখরুদ্দীন ও মঈনুদ্দীন- এই তিন উদ্দীনের সরকারের তিক্ততার পরও এবার এখনো রাজনৈতিক টেবিলে হয়নি মজবুত কোনো সমঝোতা। বিশেষপাড়ার খবর, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বলয়ের বাইরে গিয়ে বিশেষ শক্তির উত্থানের শঙ্কা প্রবল।
দেশের রাজনীতির এমন গুমোট আবহাওয়ার মধ্যে বহু মামলায় চাপে থেকেও হঠাৎ আলোচনায় ৮৩ বছর বয়সী নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার বিষয়ে রাজনৈতিকপাড়ায় বহু কিছু চাউর হচ্ছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকেরা মানি লন্ডারিং মামলাও করেছেন। এর আগে দানকর মামলায় উচ্চ আদালতেও তিনি পরাজিত হয়েছেন। আরও দুটি মামলা ঝুলে আছে। বিশেষ করে, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করার জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়ে তিনি ক্ষমতাসীন দলের তোপের মুখে পড়েন বলেও অনেকে মনে করছেন। দেশের ভূমিকায় তার বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল নেতিবাচক। এমন পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের জন্য প্রভাবশালী দেশ ও ব্যক্তিরা ইতিবাচক বক্তব্য দেওয়ায় হিসাবের খাতায় ভিন্ন কিছু যুক্ত হচ্ছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
২৮ আগস্ট সোমবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির মামলা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় দেড় শতাধিক ব্যক্তি। তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেল বিজয়ী রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজওয়্যার তাদের ওয়েবসাইটে এই চিঠি প্রকাশ করেছে। চিঠিদাতাদের মধ্যে বারাক ওবামা, শিরিন এবাদি, ওরহান পামুক, জোসেফ স্টিগলিৎজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শতাধিক নোবেল বিজয়ী আছেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, যুক্তরাজ্যের ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ধনকুবের স্যার রিচার্ড ব্রানসনসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন। চিঠিতে ড. ইউনূসের বিচার স্থগিত, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি দেখেছি, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং নির্বাচনে প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল।’ উল্লেখ্য, এর আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের ৪০ বিশ্বনেতা খোলা চিঠি লিখেছিলেন।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের রাজনীতি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্ভরশীল। এবার যদি রাজনৈতিক শক্তির ব্যর্থতায় অরাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতা গ্রহণ করে তৃতীয় শক্তির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তবে প্রথমে তার ভিকটিম হবেন রাজনীতিবিদেরাই। যেমন ওয়ান ইলেভেনের সময় তৈরি হয়েছে। ত্রিমুখী হিসাবের মধ্যে এখনো ঝুলে আছে দেশের অবস্থা। তবে দেশের অর্থনীতি, আইন-আদালতের ভঙ্গুর অবস্থা, মানবিক ও নাগরিক অধিকার সুনিশ্চিতে রাজনীতির বাইরেও কাউকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বড় অংশই বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তনে যে আগ্রহী, সেটিরই বেশি মতামত পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে এক রাতেই আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেবে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, তারা ক্ষমতায় যেতে নয়, পরিবর্তন ও দেশ সংস্কারই বেশি প্রয়োজন। অজানা লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের মধ্যে ভোটের রাজনীতির রেওয়াজ যে ভিন্ন দিকে, তা অনেকটাই দৃশ্যমান।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনীতি করেন দেশের মানুষের উন্নয়ন ও শান্তির জন্য। কাজেই আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় আনতে হবে। রাজনীতিবিদদের মধ্যে ঐক্য না থাকলে তৃতীয় শক্তি ক্ষমতা নিয়ে যাবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, খুব শিগগিরই দেশে পরিবর্তন আসছে। সরকারপ্রধান বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কিন্তু কেউ কথা বলছেন না। আমেরিকা তো বিপক্ষে গেছেই; যারা উন্নত দেশ, তারাও বিপক্ষে গেছে। বর্তমান সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। যাদের দিয়ে টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করে, এরাও থাকবে না। এদের পতন হবেই। এটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

কমেন্ট বক্স