ভারতের রাজনীতিতে বিরোধী শিবিরের সবচেয়ে বড় মুখ রাহুল গান্ধী। বর্তমানে তিনি বিহারজুড়ে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ কর্মসূচি নিয়ে জনতার মধ্যে ঘুরছেন। কিন্তু রোববার (২৪ আগস্ট) পূর্ণিয়ায় ঘটে গেল এমন এক ঘটনা, যা তার নিরাপত্তা ঘিরে গভীর প্রশ্ন তুলেছে। বাইক র্যালিতে অংশ নেওয়া অবস্থায় ভিড়ের মধ্য থেকে এক যুবক হঠাৎ তার কাছে পৌঁছে গিয়ে গালে চুম্বন করে বসেন। ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে স্তব্ধ হয়ে পড়েন রাহুল। পরে কংগ্রেস কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই যুবককে সরিয়ে দেন। সমর্থকদের একাংশ সপাটে চড়ও কষায়। কয়েক সেকেন্ডের এ ঘটনা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
কংগ্রেসের অভিযোগ, বিরোধী দলের শীর্ষ নেতার চারপাশে নিরাপত্তাবলয় থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এমন ফাঁক রয়ে গেল, সেটাই বড় প্রশ্ন। ঘটনাটি যদি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ঘটত, তাহলে ভয়াবহ পরিণতিও হতে পারত। তাই শুধু চুম্বনের কাণ্ড নয়, বরং বিরোধী নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী পরিবারের সদস্যের নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্ক আরও জোরালো হলো।
রাহুল গান্ধীর এ যাত্রা সাধারণ রোড শো নয়। ভারতের নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি বিহার, পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধন কার্যক্রম শুরু করেছে। ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ বা এসআইআরের আওতায় বহু সাধারণ মানুষের নাম বাদ পড়তে পারে বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই রাহুল ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ শুরু করেছেন। পথে পথে বাইক র্যালি, সভা, মিছিল করে তিনি মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। তার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদবও রয়েছেন।
রোববার বিহারের আরারিয়া থেকে পূর্ণিয়া পর্যন্ত রাহুলের বাইক র্যালির সময় ভিড় ছিল উপচে পড়া। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে রাহুল-তেজস্বীকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন। এমনই ভিড়ের মধ্য থেকে লাল জামা পরা এক যুবক আচমকা বাইক থামিয়ে দেন। মুহূর্তে চমকে যান রাহুল। যদিও পরে তিনি শান্ত ছিলেন। তার সঙ্গে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা ওই যুবককে সরিয়ে দেন। এ দৃশ্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, এ ধরনের ঘটনা রাহুলের কর্মসূচিকে আরও আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে গেল। ভোটাধিকার বঞ্চনার প্রশ্নকে সামনে রেখে যে যাত্রা শুরু হয়েছে, সেটি সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপুল সাড়া ফেলছে। কিন্তু একই সঙ্গে নিরাপত্তাসংক্রান্ত দুর্বলতাও সামনে এল। ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশের বিরোধী নেতার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তার প্রভাব শুধু রাজনীতির গণ্ডিতেই সীমিত থাকে না, আন্তর্জাতিক মহলেও তা আলোচনার জন্ম দেয়।
রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক অভিযানের মূল লক্ষ্য সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করা এবং ভোটের অধিকার রক্ষার দাবি তুলতে উদ্বুদ্ধ করা। চুম্বনকাণ্ড সে যাত্রাকে এক নতুন মাত্রা দিলেও নিরাপত্তার ফাঁকফোকর যে বড় ইস্যুতে পরিণত হবে, তা বলাই বাহুল্য।
ঠিকানা/এনআই