Thikana News
২৯ অগাস্ট ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের হাঁসের মাংস বিলাসিতা

আজ যারা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের হাঁসের মাংস খাওয়ার বক্তব্য ঘিরে সমালোচনায় মেতে উঠেছেন, তারা ৫ আগস্টের আগে কোথায় ছিলেন? ষোলো বছরের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কতবার প্রতিবাদ করেছেন? রূপপুর বালিশ কাণ্ড, ফরিদপুরের পর্দা কাণ্ড, এস আলমের ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ারবাজার ধ্বংস নিয়ে কোনো দিন মুখ খুলেছিলেন?
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের হাঁসের মাংস বিলাসিতা
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া হাঁসের মাংস খাওয়ার কথা বলে সমালোচনার মুখে পড়েন। যদিও সমালোচকদের বড় একটি অংশ তারুণ্যের এই নেতৃত্ব মেনে নিতে পারেননি শুরু থেকেই, তাই সুযোগ পেলেই তাদেরকে নিয়ে সমালোচনায় ভাসিয়ে দেন। অবশ্য সমালোচকদেরও ছাড় দিচ্ছেন না নেটিজেনরা।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের হাঁসের মাংস খাওয়ার বক্তব্য ঘিরে রাষ্ট্রের উচ্চ পদে থাকা ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধা বা বেতন-ভাতার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। এ যেন রাজ্যে একপ্রকার তুলকালাম কাণ্ড! আচ্ছা, বাংলাদেশে হাঁসের মাংস খেতে কি দুর্নীতি করা লাগে? নাকি উপদেষ্টাদের হাঁসের মাংস খেতে নেই? তবে কেন আসিফ মাহমুদকে নিয়ে এত সমালোচনা?

যদি বলি সমস্যা আসলে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার হাঁসের মাংস খাওয়া নয়, সমস্যা অন্য জায়গায় আর তা হলো রাজনীতি। জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানের অগ্রনায়ক এই তরুণেরা রাজনীতিতে না জড়ালে তাদেরকে সবকিছুতে এত সমালোচনায় পড়তে হতো না। মূলত জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা সমালোচকদের কেউই মেনে নিতে পারছেন না।
সম্প্রতি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন, তখন ভোররাতে পূর্বাচলে হাঁসের মাংস খেতে যাওয়া অথবা ওয়েস্টিন হোটেলে যাওয়ার প্রসঙ্গটি আনেন তিনি।

উপদেষ্টা আসিফ বলেন, রাতে যখন কাজ শেষ হয়, কখনো কখনো ভোর হয়ে যায়। ওই সময় বাসায় এলে খাওয়াদাওয়া দেওয়ার মতো কেউ থাকে না। আমি মাঝেমধ্যে বেশির ভাগ সময়ই যাই তিনশ ফিটের নীলা মার্কেটে। ওইখানে হাঁসের মাংস খুব ভালো পাওয়া যায়। ওইখানে হয়তো যাই চার-পাঁচজন মিলে আবার মাঝেমধ্যে ওইটা বেশি ভোর হয়ে গেলে বন্ধ থাকে, তখন ওইদিকে ওয়েস্টিনে যাওয়া হয়।
আজ যারা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের হাঁসের মাংস খাওয়ার বক্তব্য ঘিরে সমালোচনায় মেতে উঠেছেন, তারা ৫ আগস্টের আগে কোথায় ছিলেন? ষোলো বছরের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কতবার প্রতিবাদ করেছেন? রূপপুর বালিশ কাণ্ড, ফরিদপুরের পর্দা কাণ্ড, এস আলমের ব্যাংক ডাকাতি, শেয়ারবাজার ধ্বংস নিয়ে কোনো দিন মুখ খুলেছিলেন? শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ওপর গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন কখনো?

৫ আগস্টের আগে দেশে জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যার বিরুদ্ধে যে বা যারাই মুখ খুলেছে, তাদের সবারই করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। কাউকে গুম করা হয়েছে, কেউ আয়নাঘরে বন্দিজীবন কাটিয়েছে, কেউ জেলখানায় তো কাউকে দুনিয়া থেকেই চিরতরে বিদায় করেছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার।
ষোলো বছরের সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন, অন্যায়-অবিচারে শিকলবন্দী জাতিকে ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্ত করতে উপদেষ্টা আসিফদের মতো একঝাঁক তরুণ নিজেদের জীবন বিপন্ন জেনেও জুলাই ২৪ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সহপাঠী বন্ধুদের লাশ পাশে দেখেও পালিয়ে যাননি তারা। টানা এক মাসের রক্তক্ষয়ী আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে অবশেষে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জাতিকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার নামক পরাধীনতার শিকল থেকে অবমুক্ত করেছেন।
আজ কিছু মানুষ আসিফ মাহমুদের হাঁসের মাংস খাওয়াকে বিলাসিতার পর্যায়ে নিয়ে সমালোচনায় ব্যস্ত রয়েছেন। দুঃখ লাগে আমাদের দেশের কিছু মানুষের এরকম দ্বিমুখী আচরণ দেখে।

ইন্টারনেট থেকে যতটুকু জানতে পারি, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নের আকুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন এবং মাতা রোকসানা বেগম। তিনি নাখালপাড়া হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।

রাজনীতিতে তার সক্রিয় যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। এরপর ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রথম সম্মেলনে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। তবে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠায় তিনি ও তার নেতৃত্বাধীন পুরো কমিটি পদত্যাগ করেন। একই বছরের ৪ অক্টোবর গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়কের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। বর্তমানে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তিনি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, কঠোর নজরদারি এবং জীবননাশের হুমকির মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় দেখান। আন্দোলনের গতিপথ রক্ষায় তিনি ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে নেওয়ার মতো ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। গুম, নির্যাতন, নজরদারি এবং বহু সহযোদ্ধার মৃত্যু সত্ত্বেও তিনি মানুষের মুক্তির সংগ্রাম চালিয়ে যান।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা এবং ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক।
এবার আসুন দেখি, সরকারিভাবে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধায় একজন উপদেষ্টা রাজধানীর অদূরে ৩০০ ফিট নীলা মার্কেটে হাঁসের মাংস খাওয়ার যোগ্যতা রাখেন কি না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা মন্ত্রী সমমর্যাদা হওয়ায় তাদের বেতন-ভাতাও মন্ত্রীদের সমপরিমাণ, যা ২০১৬ সালের মিনিস্টার অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল অনুযায়ীই নির্ধারিত। এই আইন অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টা মন্ত্রীর সমপরিমাণ বেতনই পেয়ে থাকেন। যার পরিমাণ মাসিক এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা। ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা এবং চিফ হুইপরাও সমান বেতন পান।

নিয়ম অনুযায়ী, একজন মন্ত্রী দৈনিক ভাতা পান ২ হাজার টাকা। নিয়ামক ভাতা পান মাসে ১০ হাজার টাকা। স্বেচ্ছাধীন তহবিল থাকবে ১০ লাখ টাকা। এর পাশাপাশি মোবাইল ফোন কেনার জন্যও ৭৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া সরকারি খরচে সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য গাড়ি পাবেন। ঢাকার বাইরে অফিশিয়াল ট্যুরের জন্য অতিরিক্ত একটি জিপগাড়ি পান, যার যাবতীয় খরচও বহন করে সরকার। মন্ত্রী পদমর্যাদা হওয়ায় বর্তমান উপদেষ্টারাও এই সুবিধা পেয়ে থাকেন।

একজন মন্ত্রী উপসচিব পদমর্যাদার একজন একান্ত সচিব, সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন সহকারী একান্ত সচিব এবং ক্যাডারের বাইরে থেকে আরেকজন সহকারী একান্ত সচিব ও জাতীয় বেতন স্কেলে দশম গ্রেডের দুজন কর্মকর্তা পান। এ ছাড়া আরও একজন জমাদার ও একজন আরদালি, দুজন এমএলএসএস এবং একজন পাচক বা পিয়ন পেয়ে থাকেন। এসব সুবিধাও দেওয়া হয় সরকারিভাবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টা পাবেন প্রধানমন্ত্রীর সমপরিমাণ সুযোগ-সুবিধা। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহাবুব হোসেন জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর মতো রাষ্ট্রের নির্বাহী দায়িত্ব পালন করবেন। উপদেষ্টারাও মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। সে ক্ষেত্রে তারা রাষ্ট্রের বিদ্যমান সব সুযোগ-সুবিধাই পাবেন।

অতীতে বাংলাদেশের একজন পূর্ণ মন্ত্রী বা সমমর্যাদায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির জীবনাচরণ কল্পনা করলেই বোঝা যাবে, আজকের এই তরুণ উপদেষ্টারা কতটা বিলাসী জীবনযাপন করছেন।
 

কমেন্ট বক্স