যুক্তরাষ্ট্রে জালিয়াতির মাধ্যমে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য যারা ফাইল করেন, তাদের কারও কারও ফাইলের গল্প প্রায় মিলে যায়। কারণ যাদের কেস অনুমোদন হয়, ঠিক সেই কেসের মতো হুবহু অনেকে কেস ফাইল করেন। কেউ কেউ আছেন, সাক্ষাৎকারে কী বলতে হবে, সেটাও তাদের ক্লায়েন্টদের শিখিয়ে দেন।
এমনও দেখা গেছে, রাজনৈতিক নির্যাতনের একটি গল্প যিনি তৈরি করেন, তা তিনি তার প্রত্যেক আবেদনকারীর ক্ষেত্রে পুনর্ব্যবহার করেন। প্রস্তুতকারীর অনুরোধ ও নির্দেশে একাধিক আবেদনকারী তাদের আশ্রয় আবেদনে একই মিথ্যা গল্প অন্তর্ভুক্ত করেন। তারা যখন কাজটি করেন, তখন ধরা পড়ে না বলে তারা আরও নতুন নতুন কেস জমা দিতে থাকেন। যারা এ ধরনের কাজ করছেন, তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকার ও ইউএসসিআইএস কাজ করছে। ইতিমধ্যে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত একজনকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিচ্ছে। সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য কেউ যদি অন্যায় পন্থা অবলম্বন করেন, যে পদ্ধতি ইউএসসিআইএস অনুমোদিত নয়, তাহলে ঘটনার সত্যতা প্রকাশ পেলে ওই ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন। তার সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও আড়াই লাখ ডলার পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এ ধরনের কেসের ক্ষেত্রে অপরাধ প্রমাণের জন্য ইউএসসিআইএস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সব ধরনের সহায়তা করে থাকে। সম্প্রতি এমন একাধিক ঘটনা ইউএসসিআইএস চিহ্নিত করেছে। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আটকও করেছে। আগামী নভেম্বর মাসে এসব ঘটনার পরবর্তী শুনানি হবে।
ইউএসসিআইএস কার্লোস অ্যাডলফো হেকারম্যান কার্ডেনাসের তদন্তে উল্লেখযোগ্য সহায়তা প্রদান করেছে, যিনি ফেডারেল আদালতে ইউএসসিআইএসে কয়েক ডজন মিথ্যা এবং প্রতারণামূলক আশ্রয় আবেদন জমা দেওয়ার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরির জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন।
ফ্লোরিডার ডোরালে বসবাসকারী কলম্বিয়ার নাগরিক হেকারম্যান (৬২) ২০২৪ সালের ১৩ নভেম্বর একটি ফেডারেল গ্র্যান্ড জুরি দ্বারা অভিযুক্ত হন। ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তর জেলায় মার্কিন অ্যাটর্নি অফিস কর্তৃক ঘোষিত আবেদন চুক্তির অধীনে হেকারম্যান চারটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন, যার প্রতিটিতে তাকে অভিবাসন নথিতে মিথ্যা বিবৃতিতে সহায়তা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
দোষ স্বীকার করে হেকারম্যান বলেছেন, তিনি প্রথমে কলম্বিয়া এবং তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা পরিচালনা করতেন, যেখানে তিনি কলম্বিয়ার নাগরিকদের মার্কিন ভিসা এবং আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাইড করার জন্য ফি নিতেন। এর মধ্যে ছিল তার ক্লায়েন্টদের তাদের আবেদনপত্রে এবং তাদের সাক্ষাৎকারে কী বলতে হবে তা বলা, যাতে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে বা সেখানে থাকার অনুমতি পেতে পারেন। বিশেষ করে, হেকারম্যান প্রায়ই তার ভিসা-আবেদনকারী ক্লায়েন্টদের কলম্বিয়ার প্রতি তাদের পেশাদার মর্যাদা এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ককে বাড়িয়ে মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তাদের বিশ্বাস করাতে নির্দেশ দিতেন যে আবেদনকারীরা তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ না করেই কলম্বিয়ায় ফিরে আসবে। তিনি প্রায়ই মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তাদের প্রতারণা করার জন্য এবং তার ক্লায়েন্টদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য কলম্বিয়ায় নির্যাতনের গল্পগুলোকে সাজিয়েছিলেন এবং কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি মনগড়া ঘটনা উল্লেখ করেছিলেন।
হেকারম্যান যে চারটি অভিযোগে দোষ স্বীকার করেছেন, তা হলো নভেম্বর ২০১৯ থেকে মে ২০২০ সালের মধ্যে হেকারম্যানের চার ক্লায়েন্টের জমা দেওয়া আশ্রয় আবেদন। এই চারটি আবেদনের ক্ষেত্রে হেকারম্যান রাজনৈতিক নির্যাতনের একটি গল্প তৈরি করেছিলেন, যা তিনি চার আবেদনকারীর প্রত্যেকের মধ্যে পুনর্ব্যবহার করেছিলেন। হেকারম্যানের অনুরোধ এবং নির্দেশে এই চার আবেদনকারীই তাদের আশ্রয় আবেদনে মিথ্যা গল্পটি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। হেকারম্যান স্বীকার করেছেন, তিনি আরও কয়েক ডজন জালিয়াতি আশ্রয় আবেদনের ওপরও কাজ করেছেন।
মার্কিন অ্যাটর্নি ক্রেগ এইচ. মিসাকিয়ান এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কূটনৈতিক নিরাপত্তা পরিষেবার অপরাধ জালিয়াতি তদন্ত শাখার প্রধান জেফ রুসিনেক জানিয়েছেন, হেকারম্যানকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ৫ নভেম্বর দুপুর একটায় মার্কিন জেলা জজ ভিন্স ছাব্রিয়ার সামনে তার সাজা শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। প্রতিটি অভিযোগে হেকারম্যানের সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার জরিমানা হতে পারে।