যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করা ও এখানকান সিটিজেনশিপ পাওয়া অনেকের কাছে স্বপ্নের বিষয়। অনেকেই আছেন, বছরের পর বছর ইংরেজি না জানার কারণে সিটিজেনশিপ পরীক্ষা দিতে পারছেন না। অপেক্ষো করছেন ৬৫ বছর হওয়ার এবং ইংরেজিতে ছাড় পাওয়ার। কিন্তু এখনকার মতো সহজ পরীক্ষা আর থাকছে না। সিটিজেনশিপ পরিষেবা বর্তমানের চেয়ে কিছুটা পরিবর্তন করা হবে এবং ইংরেজি জানা মানুষেরাই পাস করতে পারবেনÑএমনটাই করার পরিকল্পনা চলছে। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম আমলে সিটিজেনশিপ পরীক্ষায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ১০০ প্রশ্নের জায়গায় প্রশ্নের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছিল। ফলে ওই সময়ে এই পরীক্ষা কিছুটা কঠিন হলেও বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তারা ২০০৮ সালের পরীক্ষা বহাল করে। ফলে এখনো সেই ২০০৮ সালের নিয়ম অনুযায়ীই পরীক্ষা হচ্ছে। তবে এখন চেষ্টা চলছে নতুন পদ্ধতি চালু করার। নতুন পদ্ধতি চালু হলে আরও বেশি সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পাশাপাশি একটি ছবি দেখানো হলে সেই ছবিটির ব্যাখ্যাও দিতে হবে ইংরেজিতে। যারা ইংরেজি জানেন, পারেন ও বোঝেন, তাদের সমস্যা হবে না। যারা পারেন না, বোঝেন না এবং জানেন না তাদের জন্য ওই সব ছবির বর্ণনা করা কঠিন হয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিটিজেনশিপ পরীক্ষায় কিছু কিছু পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা খুবই বেশি। তবে পরীক্ষা কঠিন হলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। কারণ প্রয়োজন ও বাস্তবতা মানুষকে সবকিছু শিখিয়ে দেয়। যারা ইংরেজি জানেন না, তারা প্র্যাকটিসের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ করে তুলবেন। এ ছাড়া সিটিজেনশিপ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ইউএসসিআইএস সিভিক টেস্টের গাইড, ইংরেজি লেখা ও পড়ার জন্য নিয়মকানুন শেখার মেটেরিয়ালস সরবরাহ করে। এর মধ্য দিয়েই একজন মানুষ ইংরেজিতে দক্ষতা বাড়িয়ে তুলতে পারেন। ইউএসসিআইএস বলছে, নাগরিকত্ব পরীক্ষার জন্য পড়ালেখা করতে হবে। নাগরিকত্বের সাক্ষাৎকারের আগে প্রস্তুতির জন্য তাদের বিনা মূল্যের সংস্থান ব্যবহার করে ইংরেজি এবং নাগরিকত্ব পরীক্ষার জন্য অধ্যয়ন করতে হবে। ইংরেজি পরীক্ষার সংক্ষিপ্তসারের বিষয়ে বলা হয়, ন্যাচারালাইজেশন পরীক্ষার ইংরেজি অংশের জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান প্রদর্শন করতে হবে, যার মধ্যে মৌলিক ইংরেজি পড়া, লেখা এবং কথা বলার ক্ষমতাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইংরেজি বলার এবং বোঝার ক্ষমতা একজন ইউএসসিআইএস অফিসার দ্বারা আবেদনকারীর যোগ্যতার সাক্ষাৎকারের সময়, ফর্ম এন-৪০০, নাগরিকত্বের আবেদনপত্রে নির্ধারিত হবে। পড়ার পরীক্ষার জন্য, ইংরেজিতে পড়ার ক্ষমতা প্রদর্শনে পরীক্ষার্থীকে তিনটি বাক্যের মধ্যে একটি সঠিকভাবে জোরে জোরে পড়তে হবে। লেখার পরীক্ষার জন্য, ইংরেজিতে লেখার ক্ষমতা প্রদর্শনে পরীক্ষার্থীকে তিনটি বাক্যের মধ্যে একটি সঠিকভাবে লিখতে হবে। নাগরিকত্বের পরীক্ষা (২০০৮ সংস্করণ) বিষয়ে বলা হয়, ন্যাচারালাইজেশন পরীক্ষার নাগরিকত্বের অংশটি একটি মৌখিক পরীক্ষা। ইউএসসিআইএস অফিসার পরীক্ষার্থীকে ১০০টি নাগরিকত্ব পরীক্ষার প্রশ্নের তালিকা থেকে ১০টি পর্যন্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবেন। নাগরিকত্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তাকে ৬টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে।
আরও বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব পরীক্ষায় নির্বাচন বা অ্যাপয়েন্টমেন্টের কারণে কিছু উত্তর পরিবর্তিত হতে পারে। আবেদনকারীর নাগরিকত্ব সাক্ষাৎকারের সময় কর্মরত কর্মকর্তার নাম দিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। নাগরিকত্ব রিসোর্স সেন্টারের ইমেইল আপডেট পেতে সাইন আপ করে রাখলে সুবিধা হবে। নাগরিকত্ব ফ্ল্যাশ কার্ড, ইন্টারেক্টিভ অনুশীলন পরীক্ষা, অধ্যয়ন পুস্তিকা, ভিডিও এবং আরও অনেক কিছু রয়েছে। সেগুলোও সংগ্রহ করা যেতে পারে। ন্যাচারালাইজেশন টেস্ট এবং স্টাডি রিসোর্স নামেও একটি সাইট রয়েছে। সেই সাইটে গিয়েও পড়ালেখার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করা সম্ভব।
ফ্যামিলি লার্নিং সিভিক্স টুগেদার টুলকিট নামে টুলস আছে। এর মাধ্যমে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সঙ্গে একসাথে নাগরিকত্ব এবং নাগরিকত্ব অন্বেষণ করতে ব্যবহার করতে পারেন। এই টুলকিটটি নাগরিক সম্পৃক্ততার জন্য দুই-প্রজন্মের পদ্ধতির প্রচার করে এবং অনুশীলনকারী এবং পরিবার উভয়ের জন্যই সংস্থান রয়েছে। পরীক্ষার আপডেট বিষয়ে বলা হয়, নির্বাচন বা অ্যাপয়েন্টমেন্টের কারণে নাগরিক বিজ্ঞান পরীক্ষার উত্তরগুলোর কোনো আপডেট পরিবর্তন হতে পারে কি না, তা পরীক্ষা করতে হবে।
অ্যাটর্নি খায়রুল বাশার বলেন, একজন আবেদনকারীর আগের ফাইলে কী আছে আর এখনকার ফাইলে কী আছে, এটা তিনিই একমাত্র ভালো করে জানেন। একই অ্যাটর্নির মাধ্যমে হলে তার অ্যাটর্নি জানতে পারেন। যদি গ্রিনকার্ড ও সিটিজেনশিপ ফাইল একই আইনজীবীর অফিস থেকে করেন আর তিনি যদি আবেদন করার সময় কোনো কারণে তথ্য গোপন করেন, সেটি আইনজীবীর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে ইমিগ্রেশন অফিসারের কাছে ফাইল যাওয়ার আগে সব ধরনের তথ্যই জানা সম্ভব, যখন কারও ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয়। এ ক্ষেত্রে যদি ধরা পড়ে যে আবেদনকারী অন্যায় করেছেন, ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, সত্য গোপন করেছেন, আইন ভঙ্গ করেছেন, তাহলে তার জন্য বিপদ অপেক্ষা করবে। যাদের ব্যাকগ্রাউন্ড ক্লিন, তাদের কোনো সমস্যা নেই। তারা সিটিজেনশিপের জন্য এখনই আবেদন করতে পারেন। একবার সিটিজেন হয়ে গেলে আর ইমিগ্রেশন-সংক্রান্ত কাজ থাকে না। একজন আমেরিকান নাগরিক যত দিন খুশি এ দেশে থাকতে পারবেন আবার অন্য দেশেও থাকতে পারবেন। তাদের জন্য কোনো সময়সীমা বাঁধা নেই।