মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত থেকে রপ্তানিকৃত পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক (অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ) আরোপের প্রতিবাদে নয়াদিল্লি যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। এটি ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে ভারতের অসন্তোষের প্রথম স্পষ্ট লক্ষণ।
অন্যদিকে, প্রতিবাদস্বরূপ ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর ওয়াশিংটন সফরও বাতিল করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ৮ আগস্ট (শুক্রবার) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গত ৬ আগস্ট (বুধবার) ট্রাম্প রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ‘শাস্তি’ হিসেবে ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যার ফলে মোট শুল্ক বেড়ে ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ট্রাম্পের দাবি, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য অর্থায়ন করছে। তবে ভারত এই শুল্ককে ‘অন্যায্য, অযৌক্তিক’ বলে অভিহিত করেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আলোচনা স্থগিত করার খবর মিথ্যা ও বানোয়াট এবং ক্রয় কার্যক্রম বিদ্যমান পদ্ধতি অনুযায়ী এগিয়ে চলছে।
ভারতের কর্মকর্তারা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা যখন তাদের স্বার্থে মস্কোর সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, তখন শুধু ভারতকে লক্ষ্যবস্তু করা অন্যায্য।
রয়টার্স-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে জেনারেল ডাইনামিক্স ল্যান্ড সিস্টেমস দ্বারা তৈরি স্ট্রাইকার যুদ্ধ যান এবং রেথিয়ন ও লকহিড মার্টিন দ্বারা তৈরি জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্র কেনার আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া, ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ছয়টি বোয়িং পি-৮১ রিকনেসান্স বিমান কেনার প্রস্তাবিত তিন দশমিক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি নিয়েও আলোচনা বন্ধ রাখা হয়েছে।
ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, শুল্ক ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে স্পষ্টতা পেলে আবারও আলোচনা শুরু হতে পারে, তবে তা যেভোবে আশা করা হয়েছিল তত তাড়াতাড়ি নয়।
চীনকে মোকাবিলা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের গভীরতর নিরাপত্তা অংশীদারত্ব গড়ে উঠলেও রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবে ভারতের শীর্ষ অস্ত্র সরবরাহকারী। যদিও সম্প্রতি ভারত পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে অস্ত্র আমদানি বাড়িয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের নীতির কারণে মোদি সরকারের জন্য রাশিয়া থেকে সরে আসা রাজনৈতিকভাবে কঠিন হয়ে উঠেছে।
এদিকে, মস্কো সম্প্রতি দিল্লিকে তাদের অত্যাধুনিক এস-৫০০ ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মতো নতুন প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি কেনার জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু ভারত বর্তমানে রাশিয়া থেকে নতুন অস্ত্র কেনার প্রয়োজন মনে করছে না।
একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে দশকের পর দশক ধরে চলমান অংশীদারত্বের কারণে ভারতীয় সামরিক ব্যবস্থার জন্য মস্কোর সহায়তা অব্যাহত থাকবে। তাই দিল্লি সহজে রাশিয়ার অস্ত্র থেকে সম্পূর্ণরূপে নিজেদের মুক্ত করার সম্ভাবনা কম।
ঠিকানা/এএস