দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই মহাপরিকল্পনা চূড়ান্তের পথে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর বর। ৮ আগস্ট (শুক্রবার) মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত এক বছরে পরিবেশ সুরক্ষা, বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় মন্ত্রণালয় বেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছে।
দীপংকর বর বলেন, দ্বীপটির জন্য একটি মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প আয়ের সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। দ্বীপটির প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য (দ্বীপের প্রকৃতির ক্ষতি কমিয়ে আবার সুস্থ ও জীবন্ত করে তোলার লক্ষ্যে) সেখানে পর্যটন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দূষণ কমাতে সারা দেশের শপিংমলগুলোতে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা হয়েছে। পলিথিন উৎপাদন কারখানা, কাঁচাবাজার ও অন্যান্য স্থানে এর ব্যবহার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া পলিথিনের বিকল্প হিসেবে সাশ্রয়ী মূল্যে পাটের ব্যাগ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ৮৩০টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং ঢাকার সাভার ও আশুলিয়াকে ‘দূষিত বায়ুমণ্ডল’ এলাকা হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অবৈধ সীসা কারখানা বন্ধ করা হয়েছে, আর শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তরুণদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। গাজীপুরের গাছা খাল দূষণের জন্য দায়ী নয়টি কারখানার সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং সব পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের জন্য নতুন কর্মসূচি অনুমোদন করা হয়েছে এবং এর নিজস্ব ৩৭টি অফিস ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাহাড় সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১৬ জেলার তালিকাভুক্ত পাহাড়ের তথ্য অনলাইন ডেটাবেজে যুক্ত করা হয়েছে এবং নিয়মিত নজরদারি চালানো হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ৩৫১ কোটি টাকার ৪১টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এ ছাড়া ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। কক্সবাজার ও সোনাদিয়ায় বিভিন্ন কাজে বরাদ্দকৃত ১০ হাজার ৩২২ একর বনভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। পূর্বাচলের ১৪৪ একর এলাকা বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গত এক বছরে বেদখল হওয়া ৫ হাজার ৯৩ একর বনভূমি পুনরুদ্ধার করে সেখানে পুনরায় বনায়ন করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের চারা উৎপাদন ও রোপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মধুপুর শালবন পুনরুদ্ধারে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাতির চলাচলের পথ নিশ্চিত ও জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে চুনতি ও শেরপুরের বন পুনরুদ্ধারের কাজও চলছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে মানব-হাতি সংঘাত কমাতে ১৫৯টি ‘এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি)’ গঠন করা হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় ময়ূর ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, বিপন্ন প্রজাতিগুলোকে সুরক্ষায় নেওয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ। জলাভূমিকে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন অভিযানে ২৯৩টি অভিযানের মাধ্যমে ৫ হাজার ৬৮৪টি প্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় উদ্যান ও ইকোপার্কগুলোতে প্লাস্টিক ব্যবহার এবং পিকনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যপ্রাণী আইন আধুনিকীকরণ এবং নতুন আইন, বিধি ও নির্দেশিকা প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের এসব উদ্যোগ দেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এগুলো জলবায়ু সহনশীল ও টেকসই বাংলাদেশ গঠনের পথে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
ঠিকানা/এএস