মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থানের জন্য বাংলাদেশ ওভারসিস এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল)-এর মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য নতুন নিয়োগ অনুমোদন দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। গত বছরের ৩১ মে’র মধ্যে যারা যেতে পারেননি, তাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত কর্মীদের এবার কনস্ট্রাকশন এবং ট্যুরিজম সেক্টরে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। ১ আগস্ট (শুক্রবার) কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে হাইকমিশন জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্মীদের আনায়নের লক্ষ্যে ডিমান্ড লেটার বা চাহিদাপত্র সত্যায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এজন্য ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (এফডব্লিউসিএমএস) অনলাইন পোর্টালে চেকলিস্ট অনুযায়ী নির্ধারিত সব তথ্যাদি দাখিল করতে হবে।
দাখিলকৃত ডকুমেন্টেসের মধ্যে রয়েছে, কোম্পানির পক্ষ থেকে অনুমোদনপত্র, যা ম্যানেজার পর্যায়ের বা তদূর্ধ্ব কোনো কর্মকর্তার হতে হবে; বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমাকৃত সত্যায়ন ফি-এর মূল ব্যাংক স্লিপ; ৪-৫ জন কর্মীর সর্বশেষ বেতন স্লিপ; এবং কোম্পানির প্রোফাইল, যার মধ্যে কোম্পানির প্রোফাইল, বর্তমান কর্মীর সংখ্যা (স্থানীয় ও বিদেশি), প্রয়োজনে ২/৩ জন বাংলাদেশি কর্মীর মোবাইল নম্বর এবং বিগত তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট থাকতে হবে। এবং ব্যাংক ব্যালান্সও যথাযথ হতে হবে—যেমন ১০০ জন কর্মীর জন্য ন্যূনতম দুই লাখ মালয়েশিয়ান রিংগিত ব্যালান্স থাকা প্রয়োজন।
এছাড়া, ফরেন ওয়ার্কার্স কম্পেনসেশন স্কিম (সকসো) এবং ফরেন ওয়ার্কার্স হাসপাতালাইজেশন ও সার্জিকাল স্কিমের নমুনা দলিল, কর্মীদের আবাসন সংক্রান্ত জেটিকে সার্টিফিকেট, নির্মাণ চুক্তিপত্র, অঙ্গীকারনামা বা গ্যারান্টি লেটার, ডিরেক্টরের স্বাক্ষরিত ডিমান্ড লেটার, পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি, নিয়োগপত্র, বোয়েসেল ও নিয়োগকারীর মধ্যে চুক্তিপত্র এবং মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত কোটার অনুমোদনপত্রও দাখিল করতে হবে।
পাশাপাশি, অনলাইনে দাখিলকৃত তথ্যাদির মূল কপি এবং এক সেট ফটোকপি বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
এদিকে, দীর্ঘ অনিশ্চয়তা ও প্রশাসনিক জটিলতার পর মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য শর্তসাপেক্ষে পুনরায় উন্মুক্ত হওয়ার আভাস মিলেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের মধ্যে নতুন সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুযায়ী নির্ধারিত কোটা, খরচ নিয়ন্ত্রণ ও নিয়োগ পদ্ধতি স্বচ্ছ রাখার শর্তে কর্মী পাঠানো আবারও শুরু হতে পারে।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া সরকার ‘সিলেক্টভি রিক্রুটমেন্ট’ মডেল চালু করতে চায়, যেখানে কেবল নিবন্ধিত এবং সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত এজেন্সির মাধ্যমেই কর্মী পাঠানো যাবে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়, যাতে বাংলাদেশ সরকার কিছু সংশোধনী প্রস্তাব করেছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা)-এর একজন জ্যেষ্ঠ নেতা জানান, ‘আমরা চাই একটি স্বচ্ছ ও বৈধ প্রক্রিয়ায় অভিবাসন হোক, যেখানে দালাল চক্রের কোনো সুযোগ থাকবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কর্মী প্রতি সর্বোচ্চ খরচ নির্ধারণ, মেডিকেল ও ভিসা প্রসেসিং সময় নির্ধারণ এবং নিয়োগকারী কোম্পানির বাস্তব যাচাই বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব বাংলাদেশ দিয়েছে। ‘
বাংলাদেশ সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ মালয়েশিয়ায় কাজ করতে ইচ্ছুক তার শ্রমিকদের শোষণের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। দু’সপ্তাহ আগে বাংলাদেশি সরকার এবং মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের মধ্যে কুয়ালালামপুরে একটি বৈঠকের সময় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ধরে রাখতে হলে শুধু চুক্তি নয়, বাস্তবায়ন পর্যায়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় প্রায় ৫ লাখ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও নানা অনিয়ম ও কোটা বাণিজ্যের অভিযোগে তা মাঝপথেই স্থগিত হয়ে যায়।
ঠিকানা/এএস