Thikana News
২৮ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের ১২টি সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য : আলী রীয়াজ

‘‘রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা চলছে, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আলোচনা সমাপ্ত হবে”
রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের ১২টি সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য : আলী রীয়াজ
বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে না পারলেও এ পর্যন্ত মোট ১২টি সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য হওয়ার কথা বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
২৭ জুলাই (রবিবার) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার ঊনবিংশতম দিনের বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।

আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের অব্যাহত আলোচনায় এ পর্যন্ত ১২টি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সমাপ্ত হবে বলে আশা করছি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাবে সেগুলো নিয়ে ‘জুলাই সনদ’ বা ‘জাতীয় সনদ’ চূড়ান্ত করা হবে। এর মধ্যে জাতীয় সনদের প্রাথমিক খসড়া সোমবার রাজনৈতিক দলগুলোকে মতামত দেওয়ার জন্য পাঠানো হবে বলে কমিশনের সহসভাপতি জানিয়েছেন।

সকালে বৈঠক শুরুর আগে তিনি বলেছিলেন, ওই খসড়া নিয়ে সংলাপে আলাদা করে আলোচনা করা হবে না। যদি বড় রকমের মৌলিক আপত্তি ওঠে, তাহলে আলোচনায় আনব, না হলে আনব না। আপনাদের পক্ষ থেকে মতামত দেওয়া হলে তা সন্নিবেশিত করে প্রাথমিক সনদে... সেখানে ভূমিকা পটভূমি থাকবে এবং কমিটমেন্টের জায়গা থাকবে। জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের জন্য সংলাপে একটি দিন বরাদ্দ করা হবে বলেও আলী রীয়াজ জানিয়েছেন।

যে ১২ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে––
১. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন
২. সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব
৩. নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ
৪. রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান
৫. উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ
৬. পর্যায়ক্রমে উপজেলায় পর্যায়ে নিম্ন আদালত স্থানান্তর
৭. জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা
৮. প্রধান বিচারপতি নিয়োগ
৯. নির্বাচন কমিশন গঠন পদ্ধতি
১০. প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান সংস্কার
১১. প্রধানমন্ত্রী পদে ১০ বছরের বেশি নয়
১২. স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন

মূলনীতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি
আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্রের মূলনীতি বিষয়ে যে আলোচনা, এটি আজকে চতুর্থ দিনের মত ছিল। এই চার দিনের আলোচনায় আমরা দেখেছি, সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে যেসমস্ত প্রস্তাব কমিশনের পক্ষ থেকে সংশোধিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল (সাম্য ও মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি), এগুলো কীভাবে সংবিধানে উল্লেখিত হবে তা নিয়ে ঐকমত্যে আসা যাচ্ছে না।

বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ রয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এর বদলে পাঁচটি মূলনীতি সুপারিশ করছে। সেগুলো হল–সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতি।

সিপিবি, বাসদ, বাসদ-মার্কসবাদী ও বাংলাদেশ জাসদ–এই চার বামপন্থি দল বলছে, বিদ্যমান মূলনীতিগুলো বাদ দেওয়া যাবে না। বরং কমিশন প্রস্তাবিত নতুন মূলনীতি এর সঙ্গে যোগ করা যেতে পারে। বিদ্যমান মূলনীতিগুলো বাদ দিলে তারা আলোচনা বয়কট করবে।

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হওয়া ‘আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস’ রাখার কথা বলে আসছিল। তবে কমিশন এখন যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে তাদের আপত্তি নেই।
আর জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি বলেছে, কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে তারা একমত।

আলী রীয়াজ বলেন, আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, এ বিষয়ে ঐকমত্যে আসা যাচ্ছে না। কমিশন এখন এটাকে পুনর্বিবেচনার জন্য নিয়েছে। কমিশনকে এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আমরা আশা করছি, ৩১ জুলাইয়ের আগেই আমরা এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত দেব।

স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনে ঐকমত্য
আলী রীয়াজ বলেন, শৃঙ্খলাবাহিনী হিসেবে পুলিশের আইনানুগভাবে ও প্রভাবমুক্ত হয়ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা, পুলিশবাহিনীর যে কোনো সদস্যের উত্থাপিত অভিযোগ এবং নাগরিকদের পক্ষ থেকে পুলিশবাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে একটি 'স্বাধীন পুলিশ কমিশন' গঠনের প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

নয় সদস্য বিশিষ্ট কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, যার বয়স ৭৫ বছরের উর্ধ্বে হবে না। অতিরিক্ত পুলিশ মহা-পরিদর্শকের নিচে এবং ৬২ বছরের উর্ধ্বে নয় এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা হবেন কমিশনের সদস্যসচিব।

এছাড়া জাতীয় সংসদের সংসদ নেতার প্রতিনিধি, বিরোধীদলীয় নেতার প্রতিনিধি, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের একজন করে প্রতিনিধি, সচিব পদমর্যাদার নিচে নয় এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা (জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন), জেলা জজ পদমর্যাদার নিচে নয় এমন একজন বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তা অথবা সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের তালিকাভুক্ত একজন আইনজীবী যার আইন পেশায় ন্যূনতম ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং একজন মানবাধিকার কর্মী যার দেশে বিদেশে নিবন্ধিত মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থায় ন্যূনতম ১০ বছরের কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে– এমন ব্যক্তিরা কমিশনের সদস্য হবেন। কমিশনের সদস্যদের মধ্যে অন্তত দুইজন নারী সদস্য থাকবেন।

ঐকমত্যের যাত্রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রোববারের আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, বাসদ মার্কসবাদীসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।
গত অক্টোবরে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত জানতে চায় ঐকমত্য কমিশন। দলগুলোর মধ্যে ৩৩টি তাদের মতামত দিয়েছে।

২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের সংলাপ শেষ করে ঐকমত্য কমিশন। এরপর ২ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু করে কমিশন, যা এখনো চলছে। এই আলোচনায় যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, তা যুক্ত করে জাতীয় সনদ তৈরি হবে, রাজনৈতিক দলগেুলো তাতে স্বাক্ষর করবে। জাতীয় সনদে যেসব সংস্কারের কথা লেখা থাকবে, সেসব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগামীতে যে দলই ক্ষমতায় যাক না কেন, সনদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তারা সেভাবে সংস্কার এগিয়ে নেবে।

ঠিকানা/এসআর

কমেন্ট বক্স