ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো শহরে অনুষ্ঠিত হলো লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল-এর ১০৭তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন, যা বিশ্বজুড়ে মানবসেবার অঙ্গীকারকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে। বিশ্বের ১৯৫টি দেশের প্রায় ২০ হাজার প্রতিনিধি এই মহতী আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন, যা এটিকে সেবামূলক সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ মিলনমেলায় পরিণত করেছে।
গত ১২ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই কনভেনশন অরল্যান্ডো কনভেনশন সেন্টারকে বিশ্ব লায়ন্সদের পদচারণায় মুখরিত করে তুলে। ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো শহরে চলমান লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল-এর ১০৭তম মহা সম্মেলনে বিশ্বজুড়ে লায়ন্স নেতৃবৃন্দের মিলনমেলায় এক উজ্জ্বল উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে নিউইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট ২০-আর২-এর নবনির্বাচিত গভর্নর আসেফ বারীর। তার সঙ্গে এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে অংশ নিয়েছেন তার সহধর্মিণী লায়ন মুনমুন হাসিনা বারী এবং তাদের সন্তান আদিব বারী। তাদের উপস্থিতি এবারের সম্মেলনকে আরো বিশেষ করে তুলেছে। এবারের সম্মেলনটি বিশেষত ২০২৫-২৬ মেয়াদের নবনির্বাচিত লায়ন্স গভর্নরদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গত ১৩ জুলাই রাতে প্রায় ৭৪০ জন নতুন গভর্নরের জন্য এক বর্ণাঢ্য ‘সেলিব্রেশন’-এর আয়োজন করা হয়। এই বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সব গভর্নরকে লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল থেকে একই রঙের শার্ট প্রদান করা হয়, যা তাদের ঐক্যের প্রতীক।
কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত গভর্নররা তাদের পরিবার এবং সহকর্মীদের নিয়ে অংশ নেন। মনোজ্ঞ সঙ্গীত পরিবেশনা, সুস্বাদু খাবার এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমে এই সেলিব্রেশনটি এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এটি কেবল একটি সামাজিক আয়োজন ছিল না, বরং নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানানো এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য স্থাপনের এক চমৎকার সুযোগ তৈরি করেছে।
গত ১৩ জুলাই রাতে আয়োজিত এক বর্ণাঢ্য সেলিব্রেশন ডিনারে আসেফ বারী তার পরিবার নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। এই ডিনারটি ছিল ২০২৫-২৬ মেয়াদের নবনির্বাচিত গভর্নরদের জন্য একটি বিশেষ সংবর্ধনা, যেখানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭৪০ জন নতুন গভর্নর একত্রিত হয়েছিলেন। এই আয়োজনটি ছিল চোখ ধাঁধানো এবং স্মরণীয়, যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে আগত গভর্নররা তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দঘন মুহূর্ত কাটান। সুস্বাদু খাবার, লাইভ মিউজিক এবং বিভিন্ন বিনোদনমূলক আয়োজনের মাধ্যমে এই সেলেব্রেশনটি একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
গত ১৪ জুলাই সকালে অনুষ্ঠিত হয় লায়ন্স কনভেনশনের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক ‘প্যারেড অফ নেশনস’। বিশ্বের প্রতিটি দেশের এবং লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের প্রতিটি ডিস্ট্রিক্টের প্রতিনিধিরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীকী পোশাক পরিধান করে এই বর্ণিল শোভাযাত্রায় অংশ নেন। এই প্যারেডে লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের ইনকামিং প্রেসিডেন্ট এপি সিং, প্রাক্তন প্রেসিডেন্টরা এবং বিশ্বের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় লায়ন্স নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এই বর্ণিল শোভাযাত্রায় আসেফ বারী শুধু নিউইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট ২০-আর২-এর প্রতিনিধিত্ব করেননি, একজন বাঙালি বংশোদ্ভূত লায়ন্স নেতা হিসেবে তিনি বাংলাদেশ থেকে আগত লায়ন্স সদস্যদের সঙ্গেও তাদের প্যারেডে অংশ নেন। তার এই দ্বৈত অংশগ্রহণ বিশ্বজুড়ে লায়ন্সদের মধ্যে বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির এক চমৎকার বার্তা বহন করে। প্যারেড চলাকালীন গভর্নর আসেফ বারী লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের ইনকামিং প্রেসিডেন্ট এপি সিংসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক পরিচালক এবং নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন, যা তার ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক পরিচয়ের ইঙ্গিত দেয়। হাজার হাজার লায়ন্স সদস্য নিজ নিজ দেশের পতাকা হাতে, বিভিন্ন রঙের পোশাকে সেজে এই প্যারেডে অংশ নেন, যা বিশ্বজুড়ে লায়ন্সদের একতা ও বৈচিত্র্যের এক চমৎকার প্রদর্শনী ছিল। এটি শুধু একটি শোভাযাত্রা ছিল না, বরং মানবতার সেবায় নিবেদিত এই বিশাল পরিবারের বিশ্বজনীন বন্ধনের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। আসেফ বারীর মতো নবীন ও উদ্যমী নেতৃত্বের আগমন লায়ন্স ইন্টারন্যাশনালের ভবিষ্যৎ পথচলায় নতুন গতি আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। তার নেতৃত্ব নিউইয়র্কের ডিস্ট্রিক্ট ২০-আর২-তে সেবামূলক কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করবে এবং কমিউনিটির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল সারাবিশ্বে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ এবং যুবকদের ক্ষমতায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করে যাচ্ছে। নবনির্বাচিত গভর্নররা এই লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। অরল্যান্ডোর এই সম্মেলন কেবল একটি মিলনমেলা নয়, এটি বিশ্বজুড়ে মানবিক সেবার অঙ্গীকারকে পুনরুজ্জীবিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। আসেফ বারীর মতো নেতৃত্বের মাধ্যমে লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল আগামী দিনগুলোতে আরো বৃহত্তর পরিসরে মানব কল্যাণে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।