রাজধানী ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের কবর কোথায় হবে, সেটা নির্ধারণ করবে তাদের বাবা-মা। সবাই উত্তরায় কবর না-ও দিতে পারে। তাই এটা সরকার ঠিক করতে পারে না। ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন টকশোতে এসে এমন মন্তব্য করেছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার।
২১ জুলাই সোমবার মাইলস্টোনে বিমান আছড়ে পড়ে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এর পরদিন মঙ্গলবার ফেসবুক পোস্ট দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর জানিয়েছে, স্কুলের অদূরে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের সিটি করপোরেশন কবরস্থানে নিহতদের দাফন করা যাবে। পরে এই কবরস্থান তাদের স্মৃতি রক্ষায় সংরক্ষণ করা হবে। এ ধরনের ঘোষণার কোনো দরকার ছিল না বলে মনে করেন ডা. আব্দুন নূর তুষার। তিনি বলেন, উত্তরার কবরস্থানে শিক্ষার্থীদের কবর স্থায়ী হবে, নাকি অস্থায়ী হবে, সেটা কিন্তু সরকার স্পষ্ট করেনি। কবর নির্ধারণ করা আসলে সরকারের এক ধরনের প্রচারের কৌশল। এই প্রবণতা ঠিক নয়, বলেন তিনি।
২২ জুলাই মঙ্গলবার এই টকশোতে অতিথি হিসেবে আরো ছিলেন সাবেক সচিব ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবু আলম মো. শহীদ খান। নিউইয়র্ক সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) এই অনুষ্ঠান সরাসরি দেখা গেছে ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউব চ্যানেলে। প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা নিয়ে নিজ নিজ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন দুই অতিথি।
মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে মঙ্গলবার বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হয়। এরইমধ্যে দিনভর ঢাকা শহরে ছিল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন দুই উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও সি আর আবরার এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সেই স্কুলে তারা অন্তত ৯ ঘন্টা অবরুদ্ধ ছিলেন। অন্যদিকে শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে সচিবালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এর কারণ হিসেবে সাবেক সচিব ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, ‘দেশে এখন মবতন্ত্র চলছে। সরকার এমনিতে বলছে, মব করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে সহযোগিতা করছে। কারণ বিভিন্ন মবের ঘটনার পর সরকার মবকারীদের দাবি মেনে নিয়েছে। তাই মাইলস্টোনের ট্র্যাজেডিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরাও মবের মাধ্যমে তাদের দাবি আদায় করতে চেয়েছে। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা সামলাতে সরকারের অব্যবস্থাপনাও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করার অন্যতম কারণ।’
বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ সচিবালয়েও ঢুকে পড়েছিল- একে অন্তর্বর্তী সরকারের অদক্ষতা হিসেবে দেখছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার। তিনি বলেন, এই সরকার যে চাইলে বিক্ষোভ দমাতে বলপ্রয়োগ করতে পারে সেটা কিন্তু গোপালঞ্জে দেখা গেছে। অথচ এই সরকারের সময়ই শিক্ষার্থীরা একাধিকবার বিক্ষোভ করতে করতে সবিচালয়ে ঢুকে পড়েছে। অথচ সেখানে পুরো দেশের সমস্ত নথি রয়েছে। তাই সচিবালয় এভাবে অরক্ষিত থাকলে পুরো দেশই ঝুঁকিতে থাকবে- মনে করেন তিনি।
এদিকে মাইলস্টোনের ঘটনায় রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দ্রুত নেওয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার এইচএসসি পরীক্ষা হবে না, এটা জানানো হয় রাত তিনটায়। এই কারণে শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত দুপুর তিনটার মধ্যে নেওয়া যেত বলে মনে করেন সাবেক সচিব ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবু আলম মো. শহীদ খান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টার দিনে কেনো কার্যক্রম দেখা যায় না। তারা মধ্যরাতে সক্রিয় হন। রাত তিনটায় পরীক্ষা স্থগিত করার ঘোষণা শোকাহত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক ধরনের মজা করার সামিল। আর ঘটনার পর শিক্ষা সচিবকে প্রত্যাহার করা মানে একজনের কাঁধে দায় চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা। পরীক্ষা স্থগিত হবে কি না, এই সিদ্ধান্ত সচিব একা নিতে পারেন না, এর সঙ্গে শিক্ষা উপদেষ্টা শুধু নয়, প্রধান উপদেষ্টারও নির্দেশনার ব্যাপারও থাকে, বলছেন আবু আলম মো. শহীদ খান।
ঠিকানা/এএস