পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস-এ আক্রান্ত নারীদের ক্ষেত্রে তাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ও প্রজনন সমস্যার মধ্যে যোগসূত্র থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, পিসিওএস-এ আক্রান্ত নারীদের অন্ত্রে নির্দিষ্ট এক ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়। এসব ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হলে শরীরে হরমোনের সমস্যা, ডিম্বাণু তৈরিতে অসুবিধা বা প্রজননক্ষমতার ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হচ্ছে প্রজননক্ষম বয়সের নারীদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হরমোনজনিত সমস্যা। বন্ধ্যাত্বের অন্যতম প্রধান কারণ পিসিওএস হলেও এখনপর্যন্ত এ সম্পর্কে খুব কমই জানেন ডাক্তাররা, বিশেষ করে এর প্রকৃত কারণ কী বা এর কার্যকর চিকিৎসা কী হতে পারে তা এখনও অজানা বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ।
অনিয়মিত বা বন্ধ পিরিয়ড, দেহে অতিরিক্ত লোম হওয়া, বিশেষ করে মুখ, বুক বা পেটে এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে পিসিওএস হতে পারে, যেটি নারীদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও এন্ডোমেট্রিয়াল বা জরায়ুর ভেতরের স্তরে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
এ গবেষণার জন্য চীনের ৪৪টি শহরের ২২০ জন নারীর ওপর গবেষণা চালিয়েছেন দেশটির ‘ঝেজিয়াং ইউনিভার্সিটি’র গবেষক আইশিয়া লিউ ও তার সহকর্মীরা, যাদের মধ্যে অর্ধেকেরই পিসিওএস রয়েছে। এসব নারীর বয়স ছিল ৩৫ বছরের নিচে এবং গবেষণার জন্য রক্ত, মল ও জরায়ুর ভেতরের স্তরের নমুনা দিয়েছেন তারা।
গবেষকরা বলছেন, যেসব অংশগ্রহণকারীর পিসিওএস রয়েছে ও যাদের নেই– এ দুই দলেরই গর্ভধারণের হার ছিল প্রায় সমান। তবে যাদের পিসিওএস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে গর্ভকালীন জটিলতা হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ। এসব জটিলতার মধ্যে রয়েছে গর্ভপাত, অকাল প্রসব ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। গর্ভধারণের হার এক হলেও পিসিওএসে আক্রান্ত নারীদের জন্য গর্ভকালীন স্বাস্থ্যঝুঁকি ছিল বেশি।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, যাদের পিসিওএস রয়েছে তাদের অন্ত্রে ‘প্যারাব্যাকটেরয়েডস মারডে’ নামের উপকারী এক ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা অন্যদের চেয়ে প্রায় অর্ধেক ছিল। এ ব্যাকটেরিয়া দেহের বিপাক, হরমোন নিয়ন্ত্রণ ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এ হরমোনের ঘাটতির সঙ্গে যোগসূত্র থাকতে পারে পিসিওএসের।
গবেষকরা বলছেন, সংক্ষেপে ‘পি মারডে’ নামের এ উপকারী ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রে থাকা ‘আইসোলিউসিন’ নামের এক ধরনের পুষ্টি উপাদানকে ‘শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিডে’ রূপান্তর করে যা নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যর জন্য ভালো। তবে পিসিওএস আক্রান্ত নারীদের অন্ত্রে এ ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কম থাকার কারণে তাদের দেহে অতিরিক্ত পরিমাণ আইসোলিউসিন জমে যায়। কারণ আইসোলিউসিনকে ‘শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড’-এ রূপান্তের জন্য দেহে যথেষ্ট ‘পি মারডে’ থাকে না। এ অসামঞ্জস্য প্রজনন সমস্যার সম্ভাব্য একটি কারণ হতে পারে।
গবেষকরা জরায়ুর কোষে অতিরিক্ত আইসোলিউসিন দিয়ে দেখেছেন, এসব কোষ তাড়াতাড়ি বার্ধক্যে পৌঁছে যায় ও জরায়ুর স্বাভাবিক কার্যসক্ষমতা নষ্ট করতে পারে, যা নারীদের গর্ভধারণে সমস্যা বা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, ‘পি মারডে’ ব্যাকটেরিয়ার অভাব থাকার ফলে অন্ত্রে আইসোলিউসিনের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা বিভিন্ন প্রজনন কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে, নারীদের গর্ভধারণ কঠিন হয়ে পড়ে।
গবেষকরা বলছেন, অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তন করে প্রজনন সক্ষমতা উন্নত করা যেতে পারে। তবে এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন কিছু চিকিৎসক। কারণ এ ধারণাটি এখনও পুরোপুরি প্রমাণিত নয়, ফলে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
নিউ ইয়র্ক শহরের ‘আইকান স্কুল অফ মেডিসিন অ্যাট মাউন্ট সিনাই’-এর আন্দ্রেয়া ডুনাইফ বলেছেন, তার নিজের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পিসিওএসে আক্রান্ত নারীদের প্রজনন সক্ষমতা অনেক সময় ৩০-এর কোঠায় গিয়ে ভালোও হতে পারে।
তবে নতুন গবেষণায় বলছে, পিসিওএসের কারণে জরায়ুর কোষ দ্রুত বার্ধক্যে পৌঁছে যেতে পারে।
গবেষকরা বলেছেন, ভবিষ্যতে পিসিওএস আক্রান্ত নারীদের জন্য উন্নত চিকিৎসার পথ উন্মোচিত করতে পারে এ গবেষণা।
ঠিকানা/এসআর