২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। দেশটিতে খুচরা বিক্রি বাড়ার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক লক্ষণ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। বিপরীতে ইউরোপীয় দেশগুলোয় মূল্যস্ফীতির হার এখনো উচ্চে। দক্ষ জনবল ও সংশ্লিষ্ট সংকটের কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী গতি পাচ্ছে না উৎপাদন কার্যক্রম ও বিক্রি, যার প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতির সূচকে। সম্প্রতি ব্লুমবার্গের বরাতে এমনটাই তুলে ধরেছে ইকোনমিক টাইমস।
চীনের অর্থনীতি থেকে উদ্বেগ এখনো দূর হয়নি। জাপানের পরিষেবা খাতে প্রবৃদ্ধি জুলাইয়ে ৩০ বছরে প্রথমবারের মতো ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মালয়েশিয়ার জিডিপি প্রত্যাশার তুলনায় কম হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা মোকাবেলায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো অভ্যন্তরীণ ব্যয় বৃদ্ধির দিকে ঝুঁকেছে। এদিকে তাইওয়ানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চলতি বছর ২ শতাংশের কম থাকবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বিশ্বজুড়েই চাহিদা সংকুচিত হয়ে পড়ায় উদ্বেগ জন্ম নিয়েছে দেশটির রফতানি খাতে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার আরো বাড়লেও অর্থনীতি শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াবে। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদহার বৃদ্ধির এ ঝোঁক অক্ষুণ্ন রাখবে। মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বেড়েছে, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক হাওয়া লাগার ইঙ্গিত দেয়। মূল্য হিসেবে ক্রয়কৃত খুচরা পণ্য বিক্রি বেড়েছে দশমিক ৭ শতাংশ। ৩০ বছরে মেয়াদি মর্টগেজ রেট গত সপ্তাহে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১৬ শতাংশে, যা ২০০১ সালের পর সর্বোচ্চ। যদিও বাসা ক্রয়ের জন্য মর্টগেজের আবেদন কমে গেছে।
যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল প্রত্যাশার চেয়ে বেশি, বিশেষ করে পর্যটন ব্যয় ও ছুটির দিনের খরচ আরো বেড়ে গেছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সুদহার আরো এক দফা বাড়াতে পারে। ভোক্তামূল্য সূচক জুলাইয়ে ৬ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা পূর্বাভাসের তুলনায় বেশি। অর্থনীতিবিদরা সূচক ৬ দশমিক ৭-এ থাকার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। গত ছয় মাসে পঞ্চমবারের মতো সূচক প্রত্যাশার তুলনায় বেশি হলো। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড মূল্যস্ফীতিকে ২ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি এখনো তার তিন গুণ অবস্থায় রয়েছে।
দক্ষ শ্রমশক্তির অভাবে জার্মানির শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ইউরোপজুড়ে কোম্পানি বেড়ে চলছে, তার পরও শ্রমশক্তি একটা বড় অনুঘটক হয়ে দেখা দিয়েছে। ইউরোপের নয় হাজার ফার্মের অন্তত ৪৩ শতাংশ ফার্মই জানিয়েছে, তারা দক্ষ জনবলের সংকটে রয়েছে। এপ্রিলে এ হার ৪২ শতাংশ ছিল। ২০২২ সালের জুলাইয়ে এ হার ছিল সবচেয়ে বেশি ৫০ শতাংশ।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে কলম্বিয়ার অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সংকুচিত হয়েছে। আগামী মাসগুলোয় সুদহার কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে। লাতিন আমেরিকার অধিকাংশ শক্তিশালী দেশই সুদহার কমানোর ব্যাপারে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। মূল্যস্ফীতি অঞ্চলটিতে নিম্নমুখী রূপ নিয়েছে, যা আরো ইতিবাচক দিকে ধাবিত হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক অপ্রত্যাশিতভাবে সুদহার কমিয়েছে। সেখানকার অর্থনীতি আবাসন খাতের অস্থিতিশীলতা ও চাহিদা সংকোচন ধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে জুলাইয়ে দ্বিতীয় মাসের মতো নিম্নমুখী রয়েছে বাসার মূল্য। একই সময় শিল্পোৎপাদন ও খুচরা বিক্রিও ছিল হতাশাজনক। এ সময় সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত ব্যাংক অব চায়নার জন্য বেশ অপ্রত্যাশিত ছিল।
ডলারের বিপরীতে লিরার অবমূল্যায়নের কারণে তুরস্কের মূল্যস্ফীতি ক্রমেই নেতিবাচক দিকে বাঁক নিচ্ছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা সেখানে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন। চীনের পাশাপাশি উরুগুয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিউজিল্যান্ডও আর না বাড়ানোর ব্যাপারে একমত। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক অল্প বাড়িয়েছে সুদহার। ডলারের বিপরীতে মুদ্রাকে স্থিতিশীল রাখতে আরো এক দফা সুদহার বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে এর মধ্যে। নরওয়ে ২০০৮ সালের পর আমানতের সুদহার সর্বোচ্চে রেখেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি এখনো মহামারী-পরবর্তী ক্ষত কাটিয়ে ওঠেনি। তবে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধ ও ২০২৪ সাল অনেক দেশের জন্যই ইতিবাচক প্রমাণিত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।