জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে কোনো সরকারই তা কার্যকর করেনি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগামী নির্বাচনে লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিকেও ভোটাধিকারের আওতায় আনতে চায়।
নির্বাচন কমিশনও (ইসি) সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রবাসীদের জন্য ভোটের ব্যবস্থা করতে চায়। সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কর্মশালা করেছে। সেমিনারে আলোচনা করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত কোন পদ্ধতিতে প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা করা হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি। অন্যদিকে এ ভোট সম্পন্ন করতে নতুনভাবে ভাবছে ইসি। ইসি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশন থেকে প্রথমে প্রক্সি ভোটের কথা ভাবা হলেও তাতে রাজনৈতিক দলগুলো ভেটো দেয়। দলগুলোর বক্তব্য ছিল, প্রক্সি সিস্টেমে ভোট হলে যে প্রতীকে ভোট পড়ার কথা, তা নাও পড়তে পারে। ফলে সেখান থেকে খানিকটা সরে আসে ইসি। এ ছাড়া অনলাইনে ও পোস্টাল পদ্ধতির কথা আলোচনায় ছিল।
এসব আলোচনার পর ইসি ডিজিটাল পোস্টাল ব্যালট নিয়ে নতুনভাবে ভাবছে। এ পদ্ধতিতে ভোট আগের পোস্টাল সিস্টেমেই হবে। তবে তার আগে অনলাইনে প্রবাসী ভোটারের সব তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তবে এই পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করতে হলে ভোটারপ্রতি ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হবে। লাখ লাখ প্রবাসীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে। বিশাল এই ব্যয়ের বিষয়টি নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে ইসিকে।
ইসির এক কর্মকর্তা জানান, প্রবাসীদের ভোটদান পদ্ধতি নির্ধারণে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল বিদ্যমান পোস্টাল ব্যালটকে ডিজিটালে রূপান্তর করে তা ব্যবহারের পক্ষে মতামত দিয়েছে। আর প্রক্সি ভোট পদ্ধতিতে সন্দেহ প্রকাশ করছে। যার ফলে কমিশনও ছোট পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিকে কীভাবে আরও কার্যকর করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা করছে। ইতিমধ্যে ডাক বিভাগ, ফেডএক্স, ডিএইচএল প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তথ্য প্রযুক্তি কমিটি।
ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, বেসরকারিভাবে কুরিয়ার সার্ভিসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ‘পোস্টাল ব্যালট সার্ভিস’ এর চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয় বৈঠকে। তাতে ভোটার প্রতি গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা এবং ডাক বিভাগের ইএমএস সার্ভিসে ভোটপ্রতি গড়ে ৫০০ টাকা ব্যয় হতে পারে বলে জানানো হয়। তবে কোন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি ইসি।
ডিজিটাল পোস্টাল ব্যালটের দিকে আগ্রহ ইসির
প্রক্সি ভোটদান পদ্ধতির ভাবনা ছেড়ে এখন ডিজিটাল পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির দিকে ধাবিত হচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে কীভাবে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিকে আরও কার্যকর করা যায়, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
প্রবাসীদের ভোটদান পদ্ধতি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রক্সি পদ্ধতিটি সহজ ছিল, অর্থ সাশ্রয়ী ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এর পক্ষে তেমন নেই। আবার অনলাইন পদ্ধতিটিও অনেক দেশ দীর্ঘদিন ধরে চালু করতে পারেনি। যাদের জন্য এই পদ্ধতি তাদেরই তো আগ্রহ কম। প্রক্সি পদ্ধতিটি নিয়ে আলোচনা যেভাবে রয়েছে, আপাতত সেভাবেই থাকছে। আর পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিটি এগিয়ে নিতে চাই আমরা।
আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, একজন নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে এ সংক্রান্ত কমিটি ডাক বিভাগ ও বেসরকারি পোস্টাল সার্ভিসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে। আইটি বেইজড পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিটি সহজতর ও ব্যয় সাশ্রয়ী করতেই কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। এখন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিকে আরও সহজতর করার জন্য কাজ চলছে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, অনলাইন ও প্রক্সি পদ্ধতি চালু সম্ভব না হলেও আগামীতে তিনটি পদ্ধতির বিষয়ে ব্যবহারের সুযোগ রাখতে আইনে অন্তর্ভুক্ত রাখা হবে কি না, তা নিয়েও পর্যালোচনা করা হবে কমিশনে।
ঠিকানা/এনআই