নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক মেয়র প্রাইমারিতে জয়ী হয়েছেন জোহরান মামদানি। ১ জুলাই মঙ্গলবার নতুন ভোট গণনা নিশ্চিত করেছে এই অভাবনীয় ফলাফল, যা সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোর বিরুদ্ধে তার বিস্ময়কর জয়কে পাকাপোক্ত করে। এই ফলাফল মামদানিকে ডেমোক্রেটিক মনোনীত প্রার্থী হিসাবে আগামী ৪ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ করে দিল।
সিটির র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং সিস্টেমের ফলাফলে দেখা যায়- মামদানি ক্যুমোকে ১২ শতাংশ ভোটে পরাজিত করেছেন।
জোহরান মামদানি বলেছেন, প্রাইমারিতে প্রাপ্ত সমর্থনে তিনি বিনম্র এবং এখন নভেম্বরের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘২৪ জুন মঙ্গলবার, ডেমোক্রেটরা একটি পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন-একটি সাশ্রয়ী শহর, ভবিষ্যতের রাজনীতি এবং এমন একজন নেতার পক্ষে, যারা কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভয় পান না।’
৩৩ বছর বয়সী ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানি ২০২১ সাল থেকে স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য। প্রাথমিকভাবে প্রায় অজানা এই প্রার্থী তার প্রচারণা শুরু করেন সাহসী পপুলিস্ট আইডিয়াগুলোর ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু তিনি একটি শক্তিশালী প্রচারণা গড়ে তোলেন, যা ক্যুমোর প্রচারণাকে ছাপিয়ে যায়। ক্যুমো যৌন হয়রানির কেলেঙ্কারির পর চার বছর আগে গভর্নর থেকে পদত্যাগ করেন এবং এখন একটি পরিমিতপন্থী অবস্থান থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করছিলেন।
প্রাইমারির দিন রাতে ভোট গণনার পর জোহরান মামদানি বড় ধরনের লিড নেওয়ার পরেই জয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও তিনি ৫০ শতাংশ ভোটের সামান্য নিচে ছিলেন, যা র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং অনুযায়ী পুনরায় গণনার প্রয়োজন হয়। এই পদ্ধতিতে যদি শীর্ষ প্রার্থী বাদ পড়ে, তবে ভোটারদের পরবর্তী পছন্দগুলো গণনায় ধরা হয়।
এখন মামদানি সাধারণ নির্বাচনে মুখোমুখি হবেন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস, স্বতন্ত্র প্রার্থী জিম ওয়ালডেন এবং রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়ার।
মাঠ ছাড়েননি ক্যুমো : সাবেক গভর্নর ক্যুমো প্রাইমারির রাতে পরাজয় স্বীকার করলেও একটি স্বতন্ত্র ব্যালট লাইন থেকে নির্বাচনে থাকার বিষয়ে ভাবছেন। ১ জুলাই মঙ্গলবার ভোট গণনার পর ক্যুমোর মুখপাত্র রিচ আজ্জোপার্ডি বলেন, ‘আমরা এখনো সিটির বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘চরমপন্থা, বিভাজন এবং খালি প্রতিশ্রুতি এই শহরের সমস্যার সমাধান নয়। প্রাইমারির এই ফলাফল কেবল আমাদের একটি নির্দিষ্ট ভোটারের অংশের মনোভাব প্রকাশ করে, যা মোট জনমতের প্রতিনিধিত্ব করে না।’
মামদানির বিজয়ে রাজনীতিতে ভূকম্পন : মামদানির প্রচারণা যেখানে জীবনের খরচ কমানো, ফ্রি সিটি বাস, ফ্রি চাইল্ড কেয়ার, রেন্ট-কন্ট্রোল অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়ার ওপর স্থগিতাদেশ, সরকার চালিত মুদি দোকান এবং ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি- ডেমোক্রেটদের জন্য একটি নতুন মডেল হিসেবে সামনে এসেছে। যারা ট্রাম্পের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের মুখে প্রায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন।
ডেমোক্রেটিক প্রতিষ্ঠান মামদানিকে সাবধানে গ্রহণ করেছে। অনেক বড় নেতারা তার প্রচারণার প্রশংসা করলেও এখনো পুরোপুরি সমর্থন দিতে প্রস্তুত নয়। কারণ, তার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সম্পর্কে অতীত সমালোচনা, গাজার প্রসঙ্গে ইসরায়েলকে ‘গণহত্যাকারী’ বলা, এবং ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ পরিচয় কিছু দলের সদস্যদের জন্য অস্বস্তিকর।
উগান্ডায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিবারে জন্ম নেওয়া মামদানি সাত বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং ২০১৮ সালে নাগরিকত্ব পান। তিনি নির্বাচিত হলে নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হবেন। তিনি হবেন অন্যতম কনিষ্ঠ মেয়রও।