সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা না হলেও নির্বাচন নিয়ে বিদ্যমান সংশয়-শঙ্কার অবসান হয়েছে। তবে নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে দেশে-বিদেশে সবার প্রত্যাশিত সর্বদলীয় ভিত্তিতে হচ্ছে না। দেশের মোট ভোটারের ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ
ভোটারের অংশগ্রহণে ভোট হবে। অর্থাৎ ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভোটারের নির্বাচনের বাইরে থেকে যাওয়ার সমূহ শঙ্কা রয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার অন্তর্বর্তীকালীন হলেও এর মেয়াদ শেষ পর্যন্ত কত বছরে শেষ হয়, তা নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও সংশয় রয়েছে। দিন যত যাচ্ছে, এই সংশয় ততই যেন ঘনীভূত হচ্ছে। নির্বাচন আগামী তিন-চার বছরেও অনুষ্ঠান করা হয় কি না এবং এই অনির্বাচিত সরকারকে অন্য কোনো নামে এই সময় পর্যন্ত টেনে নেওয়া হয় কি না, সে সংশয় ও শঙ্কা রয়েছে। লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর নির্বাচনকেন্দ্রিক ধোঁয়াশা, সংশয়, শঙ্কা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। তবে এর মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সংকটেরও জন্ম হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, অপরাপর দলকে বাইরে রেখে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করা হলো কেন? এতে করে কি বিএনপিকে আগামী সরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস নেওয়া হলো? এ প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার পর সরকারের পক্ষে অন্যতম উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রয়োজনে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়েও প্রধান উপদেষ্টা আলোচনা করতে পারেন। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে সরকারের মুখরক্ষার জন্য এমনটা জানানো হলেও জামায়াতসহ কোনো দলই এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। রাজনৈতিক ময়দানে আওয়ামী লীগ নেই। জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো যদি কোনো কারণে নির্বাচন বর্জন করে এবং আগামী নির্বাচন যদি বিএনপি ও তার অনুগামী কয়েকটি ছোট ছোট দলকে নিয়েই করতে হয়, সে ক্ষেত্রে সেই নির্বাচনের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। আগামী বছরের এপ্রিলে নির্বাচন করতে চাওয়ার ব্যাপারে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচনা স্থির হয়। কিন্তু জামায়াত, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও তাদের অনুগামীরা তা মেনে নিতে পারেনি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি ছাড়া নিবন্ধিত অন্য কোনো দলের শীর্ষ নেতার বৈঠক বা আলোচনার কথাও শোনা যায়নি।
সূত্র জানায়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির নিয়ন্ত্রণমূলক শক্তি বাংলাদেশে জামায়াত ও তার নেতৃত্বে ইসলামী শক্তিগুলোর প্রতিষ্ঠা চায়। তাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ অবস্থান তাদের লক্ষ্য। কিন্তু আঞ্চলিক সর্বাধিক প্রভাবশালী দেশটি তার পক্ষে নয়। ধর্মীয় শক্তি এবং তাদের বলয়ে থাকা উগ্র দক্ষিণপন্থী ধর্মীয় শক্তিগুলোর উত্থান ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিচলিত প্রতিবেশী দেশটি। তারা, তাদের সব সমাজশক্তি, রাজনৈতিক শক্তি ও সামরিক শক্তি প্রখর দৃষ্টি রাখছে বাংলাদেশের চলমান ঘটনাপ্রবাহের প্রতি। ধর্মীয় উগ্রবাদী শক্তি প্রতিবেশী ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অনাকাঙ্খিত নানা ঘটনা ঘটাতে পারে এবং ধর্মীয় উগ্রবাদ, সন্ত্রাসের প্রসার ঘটাতে ভূমিকা রাখতে পারে মর্মে সংশয়-শঙ্কা প্রবলভাবেই কাজ করছে প্রতিবেশী দেশটির সামাজিক-রাজনৈতিক ও অন্যান্য শক্তির মধ্যে। এ অবস্থাটা সামাজিক-অর্থনৈতিক বিকাশ ও উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধ সমাজ, দেশ গঠনে সহায়ক নয় জেনেও সতর্ক পদচারণায় অগ্রসর হতে হচ্ছে। যার ফলে কাঙ্খিত উন্নয়ন হচ্ছে না কারোই। সমাজ ও রাষ্ট্র দেশগুলোর গণমানুষের ভাগ্যোন্নয়নে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারছে না। এই বাস্তবতা বিবেচনায় রেখেই দেশগুলার রাজনীতি, অর্থনীতি, সরকার এগিয়ে চলেছে।
আগামী নির্বাচনে ব্যাপক জনসমর্থন পাবে বলে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীও গভীরভাবে আশাবাদী। এদের পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা আরেক শক্তি হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। যদিও দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এদের নিয়ে তেমন একটা আগ্রহ, কথাবার্তাও শোনা যায় না। সাংগঠনিক-রাজনৈতিকভাবে তারা এক বছরেও নিজেদের প্রসার ঘটাতে পারেনি। এমন কোনো কর্মকাণ্ডও তাদের নেই, যার ফলে দেশের মানুষ তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। তার পরও তারা ক্ষমতার প্রশ্নে অনেক বেশি আশাবাদী, যা সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রশ্নের উদ্রেক ঘটিয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফসল ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে অবাধ, নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ পালাবদল সম্ভব হবে কি না, সে প্রশ্নও সামনে আসছে। অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতিতে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে বাংলাদেশ!