Thikana News
২৩ জুলাই ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫

পিআর ও জুলাই সনদ নিয়ে বাড়ছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব

পিআর ও জুলাই সনদ নিয়ে বাড়ছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি (পিআর) ও জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো পিআর পদ্ধতিতে আগ্রহী নয়। অপরদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)সহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। 
অন্যদিকে রাজনীতিতে আবার আলোচনায় জুলাই ঘোষণাপত্র। উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা থাকলেও সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে এককভাবে ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা জানায় এনসিপি। এ নিয়ে ফের রাজনীতিতে বিভেদ ও বিরোধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানান একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা। এমনকি বিএনপির আশঙ্কা বহুল আলোচিত লন্ডন বৈঠকের পর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দূর হওয়া অনিশ্চয়তার মেঘ ফের জমতে শুরু করতে পারে এই ঘোষণাপত্র ঘিরে। বিরোধ চাঙা হলে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায়ও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে তাদের ধারণা।
আনুপাতিক হারে ভোট দাবিকারীরা দেশ-জাতির সর্বনাশ করতে চাচ্ছে বলে গত ২৯ জুন এক সমাবেশে মন্তব্য করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ৩০ জুন বলেছেন, পিআর ইস্যু নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারীরা দেশের আদর্শে বিশ্বাসী নয়। তারা নিজের আদর্শে বিশ্বাস করে, তাদের নিজেদের দলীয় আদর্শে বিশ্বাস করে।
এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারা পিআর পদ্ধতিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। গত ২৮ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো ছাড়া বাকি সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)সহ অন্যান্য দল পিআর পদ্ধতিতে ভোটের দাবি তোলে। তা ছাড়া ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকেও এসব দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছে।
গত ২৫ জুন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, তার দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চায়। পরবর্তীতে দলটির আরও কয়েকজন নেতা একই ধরনের কথা বলেন। 
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। সংসদের প্রস্তাবিত উভয় কক্ষেই এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে বলে দাবি জানান তিনি।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের প্রস্তাবে ইতোমধ্যে প্রায় সব দল একমত হয়েছে; কিন্তু দুয়েকটি দলের কারণে এটি করা সম্ভব হচ্ছে না। তার দাবি বাংলাদেশকে নতুন কাঠামোতে পরিচালিত করতে হলে অবশ্যই পিআর পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে হবে।
এদিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাক্সক্ষাকে সুসংহত রাখার প্রত্যয়ে’ ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনা হয়। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছিলেন, ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র উত্থাপন করা হবে। ঘোষণাপত্রে দুটি মৌলিক বিষয় হিসেবে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ আখ্যায়িত করে এর ‘কবর রচনা করা ও নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক’ ঘোষণা করার কথা বলা হয়। পরদিন ৩০ ডিসেম্বর রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরি করা হবে। পরবর্তীতে জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ার কিছু বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করে।
দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি কয়েকটি বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে। পরবর্তীতে বিএনপি তাদের লিখিত প্রস্তাব জমা দেয়। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছে। এর বাইরে সরকার কিছু করলে বিএনপি তাতে একমত হবে না। এমন কিছু হলে এ নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে, যা জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
এনসিপি নেতারা বলছেন, সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কী করছে, তারা তা জানেন না। সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের সময়সীমা দিয়েছিল তা পেরিয়ে গেছে। কেন প্রকাশ হচ্ছে না সে বিষয়েও কিছু বলছে না। সরকার কথা না রেখে প্রতারণা করেছে। এটি ষড়যন্ত্র। তাই এনসিপি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তা প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে। এটির সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করলে কোনো রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি হবে না। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এটি সাদরে গ্রহণ করবে। জুলাই অভ্যুত্থানের আন্দোলন ছাত্ররা শুরু করলেও পরে রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে না এলেও এই আন্দোলনে একমত হয়ে শরিক হয়।
এ বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ দিনের সময় নেওয়া হয়। এরপর উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের কথা বলা হয়। সেটিও পার হয়ে গেছে। সরকার তাদের কথা রাখেনি, প্রতারণা করেছে। সুতরাং জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমরাই প্রকাশ করব।
প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সেক্রেটারি ফয়েজ আহম্মদ বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার খুবই সিরিয়াস। সব মত-পথের মানুষ যারা অভ্যুত্থানের শক্তি তাদের নিয়ে জুলাই ঘোষণাপত্রের জন্য কাজ হচ্ছে। এটি যেন ঐক্যের সনদ হয়, এমনটা সবাই চায়। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের তত্ত্বাবধানে জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব এটি প্রকাশ করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার দায়িত্ব নিয়েছে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে। এককভাবে করলে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বাড়বে।

কমেন্ট বক্স