স্বীকৃতি বড়ুয়া ১৯৭১ সালে কিসিঞ্জার যেমন পাকিস্তানের পরাজয় মেনে নিতে পারেননি। তাই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তেমনি বর্তমান মার্কিন প্রশাসনও বাংলাদেশের উন্নয়ন ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে মেনে নিতে পারছে না, তাই আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
গত ১৯ আগস্ট শনিবার নিউইয়র্ক সময় দুপুর ২ টায় জুম কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের আলোচনা সভা যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডঃ নুরুন নবী ও সহসভাপতি নজরুল আলম এবং সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রানা হাসান মাহমুদ। আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাউদারন ইলিনয় ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডঃ মিজান আর মিয়া, উইস্কন্সিন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডঃ জামিল তালুকদার ও নর্থ ক্যারোলিনা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডঃ এবিএম নাসির। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দও এই সভায় সংযুক্ত হন।
আলোচনা সভায় সভাপতি ডঃ নুরুন নবী বলেন, ১৯৭১ সালে বিজয় ছাড়া আমাদের যেমন আর কোন অপশন ছিল না, তদ্রূপ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় বসানো ছাড়া আমাদের কাছে কোন বিকল্প নেই। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য এবং আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা যেন আবারো ক্ষমতায় না আসতে পারেন, দেশে বিদেশে সে ষড়যন্ত্র চরম আকার ধারণ করেছে। এই চ্যালঞ্জ মোকাবিলা করতে না পারলে, বাংলাদেশের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস এবং শেখ হাসিনার যে অর্জন সবিকছু ম্লান হয়ে দেশ এবার পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে যাবে।
সভার প্রধান আলোচক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, তার কয়েকমাস পরে ৩ নভেম্বরে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার প্লান বাংলাদেশ সৃষ্টির আগেই হয়েছিল। যারা বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার বিরোধিতা করেছিল, যারা ৭০এর নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করেছিল, তারাই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারেনি, ভারত এবং সেভিয়েত ইউনিয়নের চাপে। তিনি দেশে ফিরে এসে যখন একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন, এবং মাত্র ৪ বছরে একটি সঠিক অবকাঠামোতে দাঁড় করিয়েছিলেন, ঠিক সেই সময় যারা বাংলাদেশ চায়নি, তারাই বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমেরিকার প্রকাশিত দলিলে আমরা দেখতে পাই, ১৫ আগস্টের পূর্বে এই ষড়যন্ত্রকারীরা কমপক্ষে চারবার আমেরিকান অ্যাম্বেসিতে গিয়েছিল। পাকিস্তান, আমেরিকা, মোস্তাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, শাহ মোয়াজ্জেম, এরা সবাই এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল। আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে, তিনি তার পিতার স্বপ্নপূরণ করছেন অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে, কিন্তু তার বিরুদ্ধেও হচ্ছে ষড়যন্ত্র।
বিশেষ অতিথি অধ্যাপক ড. মিজান আর মিয়া তার বক্তব্যে বলেন, আমি অবাক হয়ে যাই, বুকে এতো ব্যাথা নিয়ে, কতোটা মনোবল নিয়ে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিভাবে এই দিনটি অতিবাহিত করেন। ১৯৭৫ সনে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পূর্বে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশে যে অরাজগতার সৃষ্টি করা হয়েছিল, আমার ভয় হয় সেই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশে আবারো একই পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে। এইসব ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করতে হবে।
সাধারণ সম্পাদক রানা হাসান মাহমুদ যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক মহলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের কথা উল্লেখ করেন। অধ্যাপক ডঃ জামিল তালুকদার তার বক্তব্যে বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী স্বাধীনতার পরে অতি স্বল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু কিভাবে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করেছিলেন তা তুলে ধরেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কিভাবে বাংলাদেশে অর্থনীতির মজবুত ভিত্তি তৈরি করেন তা তুলে ধরেন।
সভায় অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহসভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নাসরিন আহমেদ মুন্না, ক্যালিফোর্নিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহভাপতি শেখ সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শহীদের সন্তান তাসনিম মিতু,। সভায় আরও সংযুক্ত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা যথক্রমে এম এ সালাম, অধ্যাপক সাহদাত হাসান ও অধ্যাপিকা হুসনে আরা, সংগঠনের সহসভাপতি যতাক্রমে রাফায়েত চৌধুরী, ফাহিম রেজা নূর, সফেদা বসু বিন্দু,ও খালেদ শরফুদ্দিন, সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ মাহাবুবুর রহমান ভুঁইয়া, সদস্য শেখ আতিকুল ইসলাম, ক্যালিফোর্নিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা মোমিনুল হক বাচ্চু,ও সহসভাপতি রানা বিল্লাহ, ম্যাসাচুসেটস শাখার সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল বড়ুয়া, বিপাশা চৌধুরী, ওমর আলী, প্রমুখ। সার্বিক সহযোগীতায় ছিলে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া।