সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও তার স্ত্রী রোজালিন কার্টার, জর্জিয়ার প্লেইন্সে বাড়িতে জীবনের অন্তিম পর্যায়ে ‘এখনো পরস্পরের হাত ধরে’ আছেন। শনিবার পিপল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে জিমি কার্টারের নাতি জোশ কার্টার একথা জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, তার দাদা-দাদি বলেছেন ‘এটা স্পষ্ট যে আমরা চূড়ান্ত অধ্যায়ে আছি।’ এই দম্পতি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত হোয়াইট হাউসে ছিলেন।
৯৮ বছর বয়সী জিমি কার্টার জীবনের বাকি সময় পরিবারের সাথে বাড়িতে কাটানোর লক্ষ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে হসপিস কেয়ারে প্রবেশ করেন।
এরপর মে মাসে কার্টার পরিবার ঘোষণা করে যে রোজালিন কার্টার (৯৬) ডিমেনশিয়ায় ভূগছেন।
জোশ কার্টার বলেন, ‘আমার দাদা-দাদী সবসময় বিনোদনকারী ছিলেন। কিন্তু এখন আমাদের উল্টো তাদেরকে বিনোদন দিতে হবে। এটা ভিন্ন একটা যুগ।’
তিনি বলেন, ‘দাদা এখনো পুরোপুরি জিমি কার্টার। তিনি শুধু ক্লান্ত। আমি বলতে চাচ্ছি যে তার বয়স প্রায় ৯৯ বছর কিন্তু তিনি এখনো ভালোবাসা অনুভব করেন।’
জোশ বলেন, ‘আমার দাদী এখনো বেশিরভাগ অংশে জানে যে আমরা কে, আমরা একটি পরিবার। আমার দাদি এখনো নতুন স্মৃতি তৈরি করতে সক্ষম।’
কার্টার ৭৭ বছর আগে ১৯৪৬ সালে বিয়ে করেন। জিমি কার্টার ১৯৭১ সালে জর্জিয়ার ডেমোক্র্যাটিক গভর্নর হওয়ার আগে মার্কিন নৌবাহিনীতে কাজ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালের দ্বিশতবার্ষিক নির্বাচনে রিপাবলিকান জেরাল্ড ফোর্ডকে পরাজিত করে হোয়াইট হাউসে উঠেন।
চার বছরের অশান্ত সময় ক্ষমতায় থাকাকালে রোজালিন কার্টার হয়ে উঠেন একজন প্রভাবশালী ফার্স্ট লেডি, যাকে অনেকেই ‘স্টিল ম্যাগনোলিয়া’ নামে চেনেন। ১৯৮০ সালে হোয়াইট হাউসের একজন অভ্যন্তরীণ ব্যক্তি পর্যবেক্ষককে বলেছিলেন যে রোজালিন কার্টার ‘প্রতিরক্ষার একটি দুর্দান্ত দ্বিতীয় লাইন’। তিনি তার স্বামীকে ‘তার মন পরিবর্তন করাতে’ সক্ষম।
রোজালিন কার্টার বলেন, ‘আমি ইতিহাসের নজরে আছি। আমি জানি আমার প্রভাব আছে এবং আমি এটা উপভোগ করি।’
জোশ কার্টার বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের জন্য তার স্ত্রীকে ডিমনেশিয়ায় ভূগতে দেখা ‘কঠিন হতে পারে’, কিন্তু একসাথে যা করতে পারেন তা তারা অনুভব করেন। আমি মনে করি তারা এখনো একসঙ্গে আছেন-এটাই চমৎকার।
তারা এখনো হাত ধরে আছেন ... এটা আশ্চর্যজনক।
রিপাবলিকান রোনাল্ড রিগ্যান ১৯৮০ সালে জিমি কার্টারকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৪ সালে ৯৩ বছর বয়সে মারা যান। রিগ্যানের রিপাবলিকান উত্তরসূরি জর্জ এইচডব্লিউ বুশ ২০১৮ সালে ৯৪ বছর বয়সে মারা যান। কার্টার সবচেয়ে দীর্ঘজীবী প্রেসিডেন্ট।
ক্ষমতার বাইরে কার্টার কূটনৈতিক মিশন পরিচালনা করেন এবং দাতব্য কাজে চ্যাম্পিয়ন হন। ‘আন্তর্জাতিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার জন্য ২০০২ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে এগিয়ে নিতে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য তার কয়েক দশকের অক্লান্ত প্রচেষ্টার জন্য তিনি এই পুরস্কার পান।’