তীব্র গরমে নিউইয়র্কে বাসা-বাড়িতে এসির (এয়ারকুলার) ব্যবহার বেড়েছে কল্পনাতীত। ফলে অত্যধিক চাপ বেড়েছে বিদ্যুতের ব্যবহারে। আর এই ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিদ্যুৎবিহীন অসংখ্য বাড়ি, কোথাও লো-ভোল্টেজ
পরিবাহ করতে পারছে না কন-এডিসনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে নিউইয়র্ক রাজ্যের বহু এলাকায় বাসা-বাড়ি বিদ্যুতবিহীন হয়ে পড়ে। এতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে।
একটানা তীব্র গরমে এখনো ট্রাই-স্টেট অঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে আছে। ২৪ জুন মঙ্গলবার সকালে হাজার হাজার বাসিন্দা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় দিন শুরু করেছেন। কুইন্সে এবং লং আইল্যান্ড সীমান্ত সংলগ্ন কয়েকটি এলাকায় ২৩ জুন সোমবার রাতে প্রায় হাজারো গ্রাহক বিদ্যুৎ হারান।
কন এডিসন-এর কর্মীরা সোমবার রাতভর গ্লেন ওকসে কাজ করেছেন। তারা বাসিন্দাদের শুকনো বরফ বিতরণ করেছেন এবং সবাইকে অনুরোধ করেছেন যাতে ওয়াশিং মেশিন, ড্রায়ার, মাইক্রোওয়েভ ও এসি ব্যবহারে তারা সংযমী হন, যাতে ভবিষ্যতে আরও ব্ল্যাকআউট এড়ানো যায়।
একজন বাসিন্দা বলেন ‘আমরা সবাই সুপারস্টর্ম স্যান্ডির কথা মনে রেখেছি - তখন আমরা আট দিন বিদ্যুৎবিহীন ছিলাম।’ তিনি আরও জানান, তার পরিবারে একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু এবং একজন বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি রয়েছেন। তাদের নিয়ে তিনি খুব উদ্বিগ্ন।
আরেকজন বাসিন্দা, ‘বাইরে কেনাকাটা শেষে বাসায় ফিরে দেখি প্রচণ্ড গরম, আর পুরো অ্যাপার্টমেন্ট অন্ধকার। কোনো আলো নেই, সবকিছু খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে নিউইয়র্ক সিটির কিছু অংশে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ক্রেতারা চলে যাওয়ায় অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। কিছু ব্যবসা খোলা রাখলেও অন্ধকারেই কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছে, সীমিত যন্ত্রপাতির ওপর নির্ভর করে।
ইউটিলিটি কোম্পানিগুলো বলছে, শুধু বেশি বিদ্যুৎ চাহিদা নয়, গরমটাই মূল সমস্যা। তারা বলছেন - যখন সবাই একসাথে এসি চালান, তখন পুরো সিস্টেম ওভারলোড হয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টা শুধু বিদ্যুৎ ব্যবহারের নয় - তার, ট্রান্সফর্মার সবকিছুই অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। তখন যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে পারে।
কন-এডিসন ইস্টার্ন ব্রুকলিনের বাসিন্দাদেরও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অনুরোধ জানিয়েছে, বিশেষ করে এসি ব্যবহারে। ওই এলাকায় তারা অস্থায়ীভাবে ভোল্টেজ ৮% কমিয়ে দিয়েছে, যাতে বড় ধরনের ব্ল্যাকআউট ঠেকানো যায়।
এক্স-এ (সাবেক টুইটার) প্রকাশিত এক বার্তায় কন-এডিসন কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা ব্রুকলিনের বেডফোর্ড-স্টাইভেসান্ট, বুশউইক, গ্রিনপয়েন্ট ও উইলিয়ামসবুর্গ এলাকায় ভোল্টেজ ৮% হ্রাস করেছে, যন্ত্রপাতি রক্ষা এবং মেরামতের সময় সেবা চালু রাখতে।
এখন পর্যন্ত অন্তত চারটি ব্রাউনআউটের (আংশিক বিদ্যুৎ বিভ্রাট) খবর পাওয়া গেছে। ট্রান্সফর্মার ও তার অতিরিক্ত গরম হওয়ায় কোম্পানিগুলো সতর্ক করেছে, আগামী দিনে আরও বিভ্রাট হতে পারে যদি চাহিদা বাড়তেই থাকে।
ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস জানিয়েছে, নিউআর্ক, লাগুয়ার্ডিয়া, কেনেডি ও আইসলিপে রেকর্ড পরিমাণ গরম পড়েছে; জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টে দুপুরের পরেই তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছুঁয়েছে ২০১৩ সালের পর প্রথমবার।
২৫ জুন বুধবার থেকে কিছুটা তাপমাত্রা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে প্রকৃত স্বস্তি পেতে বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে, যখন তাপমাত্রা কমবে এবং আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকবে। এটি থেমে গিয়ে সপ্তাহান্ত পর্যন্ত মাঝে মাঝে বৃষ্টি ও আর্দ্রতা নিয়ে আসবে।-