Thikana News
১২ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

প্রবাসে কোরবানির ঈদ

প্রবাসে কোরবানির ঈদ



 
তখন ভোর সাড়ে পাঁচটা। নিউইয়র্কের আকাশে ঈদের চাঁদের আলো নেই, কিন্তু তারেকের মনে অদ্ভুত এক আলোড়ন। ঈদের দিনের সেই চেনা অনুভূতি যেন বুকের কোথাও জমে আছে, অথচ গায়ে লাগছে না।

বাসার ছোট্ট ডাইনিং টেবিলে রাখা সেমাইয়ের বাটি তারেকের স্ত্রী রুনা তৈরি করেছে। ছেলেটা-আরিয়ান-ঘুম থেকে উঠে এসে বলল, ‘বাবা, আজ ঈদ? আমরা কি বাংলাদেশে যাব?’
তারেক মুচকি হেসে বলল, ‘না রে, এইবারও প্রবাসেই ঈদ। কিন্তু তুই চাইলে দুপুরে নানার সাথে ভিডিও কল করব।’

বাড়ির পাশে মুসলিম কমিউনিটির মসজিদে ঈদের নামাজ শেষ করে ফিরে আসে তারা। সবার মুখে ঈদ মোবারক, কোলাকুলি হলেও কোথায় যেন কিছু একটা অনুপস্থিত।
শুধু নামাজে নয়, সারা শহরে কোথাও গরুর রশিতে ধরে টানাটানি করে ছোটার শব্দ নেই, নেই বাচ্চাদের হৈহৈ, নেই সেই ভোরবেলার আজান শুনে নতুন জামা পরে কোরবানির প্রস্তুতির ব্যস্ততা।
এখানে কোরবানির গরু দেখা যায় না। শুধু ফোনে বুক করা হয়, আর পরে ফ্রিজে প্যাকেট হয়ে আসে মাংস। কসাই নেই, ছুরি শান দেওয়ার শব্দ নেই। পাড়ায় কেউ কাউকে ডাকছে না, ‘আরে ভাই আসেন, কোরবানির মাংস নিয়ে যান!’ গরিব-দুঃখী মানুষের মাংস চাওয়ার হুড়োহুড়ি নেই, নেই তাজা মাংস রান্নার সেই স্বাদ-এসব যেন শুধুই স্মৃতি।

দুপুরে বাসায় বসে মা-বাবার সাথে ভিডিও কলে কথা হয়। ওপার থেকে মা বলেন, ‘এইবার গরুটা তোর ছোট ভাই নিজে জবাই দিল, তুই থাকলে তোরা দু’ভাই মিলে দিতি...’
চোখ বুজে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তারেক। আরিয়ান পাশে এসে বলে, ‘বাবা, বাংলাদেশে গেলে আমিও গরু দেখতে যাব, ঠিক আছে?’

তারেক ছেলেকে জড়িয়ে ধরে, হেসে ফেলে... সেই হাসিতে বিষাদ মেশানো।
কারণ প্রবাসে ঈদের আনন্দ আছে, কিন্তু বাংলাদেশের ঈদের মতো রং নেই, গন্ধ নেই, হৃদয়ের টান নেই। যেটুকু আছে-তা শুধুই স্মৃতি, আর কিছু অপূরণীয় শূন্যতা।

কমেন্ট বক্স