ঠিকানার গত ২১ মে সংখ্যার দুটি খবর। প্রথম পাতাতেই প্রকাশিত হয়েছে। তবে নিচের দিকে সিঙ্গেল কলামে। দুটি সংবাদই রাষ্ট্র ও জনজীবনের নিরাপত্তা প্রশ্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভয়ংকর দুটি সংবাদের শিরোনাম : ১. ‘বন্ধ হচ্ছে না মব সন্ত্রাস’ এবং ২. ‘৬০০০ লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের হদিস নেই’। দুটি সংবাদই ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয় জীবন সর্বক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং শঙ্কার উদ্রেককারী। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাও আশঙ্কামুক্ত নয়।
‘বন্ধ হচ্ছে না মব সন্ত্রাস’ এবং ‘৬০০০ লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের হদিস নেই’ সংবাদ দুটি পৃথক মনে হলেও, প্রতিক্রিয়া অভিন্ন, অযৌক্তিক বলা যাবে না। বাংলাদেশে যেমন ‘মব সন্ত্রাসের মহামারি চলছে, তেমনি যারা আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ভাবেন, তাদের আশঙ্কা, লাইসেন্সকৃত যেসব অস্ত্রের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না, সেসব অস্ত্র সন্ত্রাসীর হাতে পড়ে যেমন আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে, তেমনি নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও ভয়ংকর শঙ্কার জন্ম দিচ্ছে। অস্ত্রের চরিত্র নির্ধারিত হয় অস্ত্র কার হাতে এবং কী লক্ষ্যে ব্যবহার হচ্ছে, তার ওপর। যদি সৎ এবং মানবিকতায় বিশ্বাসী কোনো হাতে পড়ে এবং জগৎ সংসারের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়, তবে তাতে ক্ষতির কোনো আশঙ্কা থাকে না। আর যদি অমানবিক এবং অসৎ কোনো কাজে অস্ত্র ব্যবহৃত হয়, সেটা বিশ্ব ধ্বংসের আশঙ্কাও সৃষ্টি হতে পারে।
‘বন্ধ হচ্ছে না মব সন্ত্রাস’ সংবাদটি শুরু হয়েছে এভাবে, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা গত কয়েক মাস ধরে একাধিকবার ‘আর মব সন্ত্রাস দেখা হবে না’ বলে হুঁশিয়ারি দিলেও এখনো চলছে মবের রাজত্ব। প্রশ্ন হচ্ছে, এতে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না কেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করছে? মব সন্ত্রাস বাংলাদেশে এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে এই মব সন্ত্রাস থেকে কেউই রেহাই পাচ্ছে না। দিনে-রাতে মব সন্ত্রাস চলছে। নিরীহ মানুষ দোকান-পাট, শহর-গ্রাম, এমনকি মব সন্ত্রাস থেকে পুলিশ সদস্যরাও রেহাই পাচ্ছে না। এখন সন্ত্রাস এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে দেশের গণমাধ্যমগুলো মব সন্ত্রাসের খবর পরিবেশনে ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ’ আরোপ করে। তাই সব সময় মব সন্ত্রাসের সঠিক খবরও পাওয়া যায় না। ট্যাগ লাগিয়েও ভয়ংকরভাবে মব সন্ত্রাস চালানো হয়।
অন্যদিকে ‘৬০০০ লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের হদিস নেই’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটিও ভয়াবহভাবে শঙ্কা জাগায়। খবরে বলা হয়েছে, ‘ক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ক্ষমতার তিন মেয়াদে সারা দেশে ১৯ হাজার ৫৯৪টি অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছিল। সবগুলোই দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়। গণ-অভ্যুত্থানের পর এসব লাইসেন্স ও লাইসেন্সের বিপরীতে ইস্যুকৃত অস্ত্র নিয়ে নানা সমালোচনা শুরু হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত বছর এসব লাইসেন্স বাতিল করে দেয়। যাদের কাছে এর পরও অস্ত্র থেকে যায়, তাদেরকে সে অস্ত্র থানায় জমা দেওয়ার জন্য ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। তবে লাইসেন্স স্থগিত করার পর থানায় জমা পড়েছে ১৩ হাজার ৩৪৯টি অস্ত্র। সে হিসাবে ১৯ হাজার ৫৯৪টি লাইসেন্সের বিপরীতে ৬ হাজার ২৪৬টি অস্ত্র জমা পড়েনি।
এসব অস্ত্র কাদের হাতে আছে বা কালোবাজারি হয়ে কোনো কালো বা অপরাধ জগতের কারও হাতে পড়ে বিভিন্ন ক্রিমিনাল কর্মে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, তা-ও সঠিক করে বলা যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কথা হচ্ছে অস্ত্রগুলো দ্রুত উদ্ধার করা না গেলে আগামী দিনে বড় কোনো সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বহু দেশে বহু বিপর্যয় ঘটিয়েছে এসব অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে অন্ধকার জগতের মানুষেরা।
বাংলাদেশের মানুষের জীবনেও সেই বিপর্যয় নেমে আসুক, তা কেউ কামনা করে না। তাই যত দ্রুত এসব অস্ত্র উদ্ধার করা যাবে, সমাজের-রাষ্ট্রের ততই মঙ্গল। এ ক্ষেত্রে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের দায় সর্বাধিক। দেশের মানুষ তাদের সক্রিয় ও আন্তরিক পদক্ষেপ দ্রুত দেখতে চায়। এ বিষয়ে গাফিলতি বা মন্থর পদক্ষেপ দেশ ও দেশের মানুষের বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।