Thikana News
২৬ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
গরুর হাটে বিএনপি-এনসিপি-জামায়াত একাকার ►সেনায় ভয় সবার

নয়া ডামি-আমির বাঁকে বাংলাদেশ

নয়া ডামি-আমির বাঁকে বাংলাদেশ সংগৃহীত



 
জাতীয় ঐক্যে একমত না হলেও ভেজাল এবং ভাগযোগে বেশ সহমতে বড় রাজনৈতিক দলগুলো। ‘নির্বাচন ডিসেম্বরে না জুনে’ সারফেসে এ নিয়ে মস্ত বিরোধ দৃশ্যমান হলেও ভেতরে ভেতরে প্রায় সবাই ক্ষমতার ভাগযোগে এককাট্টা। সবারই চাওয়া যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আদায় করা। ড. ইউনূস সরকারের অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার মোহ নেই, তা নিশ্চিত হয়েই এ কৌশল চর্চা তাদের। ঘটনাচক্রে সেনাবাহিনী যেন ক্ষমতায় বসে না যায়, সেই সতর্কতাও সর্বোচ্চ মাত্রায়।
চলমান-বিদ্যমান সময়ে সে রকমের লক্ষণ না দেখলেও ভয় কাটছে না কারও। বড় অঘটনে কর্মসারা হয়ে ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীর মতো পরিণতির ভয় কম-বেশি সব দলেই, যা তাদেরকে একটি বোঝাপড়ার নির্বাচনের দিকেই টানছে। বিশাল জয়ে ক্ষমতায় আসতে পারলেও বেশি দিন টেকা কঠিন হবে, পচা শামুকে পা কাটবে- সেই হিসাব কষা শেষ বিএনপির। জামায়াত-এনসিপি চায় চাপে রেখে যদ্দুর বেশি সিট আয়ত্ত করা যায়। দ্বিকক্ষের সংসদ হলে তাদের আরও বাড়তি প্রাপ্তির খেয়াল। স্বামীর ভাগ্যে বড় কিছু না জুটলেও স্ত্রী-সন্তান বা স্বজনদের কোথাও সেট করার ভাবনাও চেপেছে কারও কারও মধ্যে। কারণ কেন্দ্র থেকে বিএনপি বিশাল ছাড় দিলেও নির্বাচনের মাঠে দাঁড়ানো বা জামানত রক্ষার অবস্থাও নেই অনেকের।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিএনপিসহ ৩০টি দলের দফায় দফায় বৈঠকের ফের আরও নানান জায়গায়। সংলাপে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাজনৈতিক সংস্কারের দিকনির্দেশনা এবং প্রতীক্ষিত ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার আলাপের কথা জানানো হলেও আসল বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত-একপথ সবারই। ওই পথের পদচিহ্ন নানান দফতরে-টেন্ডারে, সচিবালয়ের তদবিরে, আওয়ামী লীগ নেতাদের মিল-কারখানা হাতানোতে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বসা গরুর হাটেও। একসময় একচেটিয়া যা করেছে আওয়ামী লীগ। ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনে এ বছর কোরবানির পশুর হাটের ইজারা বেশি পেয়েছে বিএনপি। এর পরের পজিশনে জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টিÑএনসিপি বা তাদের ঘনিষ্ঠরা। এ কাজে চমৎকার সমঝোতা। এখন পর্যন্ত কোথাও গোলমাল ঘটেনি। কোথাও কোথাও পরস্পরকে বেশ বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই সব হয়েছে। কোথাও কোথাও বৈষম্য হলেও মেনে নেওয়া বা কম্প্রোমাইজের দৃষ্টান্ত রাখা হয়েছে। যার জেরে মুখে যত কথাই বলা হোক, বাস্তবে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ তথা দুর্নীতিবাজদের থেকে রেহাই মিলছে না জাতির।
আগের সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজ-দুর্নীতিবাজদের শূন্যস্থান পূরণে বেশি সময় লাগেনি। কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের মাঠের কর্মীদের সাইডলাইনে রেখে কিছু হাড্ডি ধরিয়ে কব্জায় নেওয়া হয়েছে। হাতে বা ভাতে মার না খেয়ে এভাবে টিকে যাওয়ার সুযোগে তারাও সন্তুষ্ট। গড়পড়তা কম-বেশি সবার আতঙ্ক সেনাবাহিনীতে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মাঠে থাকার পরও সেনাবাহিনী বেশি বল প্রয়োগে না যাওয়া তাদের সবার জন্যই স্বস্তির। আবার সেনাবাহিনী এ ভূমিকায় অনেক দিন থাকবে, সেই শঙ্কামুক্তও নয়। শিগগিরই বা সহসা সেনাবাহিনী মাঠ থেকে সরবে, তেমন আভাসও নেই। বরং সাম্প্রতিক সময়ে সেনাসদস্যরা কোথাও কোথাও অ্যাকশনে নামছেন। এতে আক্রান্ত হচ্ছে বিএনপি-এনসিপি নামধারীরা। রংপুরে এনসিপি নেতা সারজিস আলমকে মুখের ওপর কড়া মেসেজ দিয়েছেন এক ব্রিগেডিয়ার, যা বড় রকমের সিগনেফিকেন্ট। এ ছাড়া যে সরকার বা যে পক্ষই কখনো সেনাবাহিনী মাঠে নামিয়েছে, তাদেরই আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশি। এর সর্বশেষ উদাহরণ ৫ আগস্ট। তা দেশ স্বাধীনের পরও।
স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ দেশে চোরাচালান, ঘুষ, দুর্নীতি, রিলিফ চুরি, খুন, হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি, হাইজ্যাক, ব্যাংক ডাকাতিসহ সকল অপকর্মের মাধ্যমে চরম এক অরাজকতার সৃষ্টি করে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহ দমন এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন। সেনাবাহিনীর তরুণ মুক্তিযোদ্ধা অফিসার এবং সৈনিকেরা সর্বশক্তি দিয়ে চোরাচালান বন্ধ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কাজে নেমে পড়েন। তাদের আন্তরিকতায় অল্প সময়ের মধ্যেই জনগণের মনের মধ্যে আশার সঞ্চার করে। সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীর কাছে উন্মোচিত হয় আওয়ামী লীগের চরিত্র। কতক জায়গায় সেনা অফিসার ও জওয়ানদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের দুঃখজনক ঘটনার অবতারণাও হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হলে বিপদ আরও বাড়ে। ঘটনার ধারাবাহিকতায় যোগ হয় ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি। এর বহু পর ২০০২ সালে বিএনপি অপারেশন ক্লিনহার্ট চালিয়েও দলের বিপর্যয় ডেকে আনে।
অপারেশন ক্লিনহার্ট পরিচালনায় সেনাবাহিনীকে নামানো হলে ১৯৭৩ সালের মতো এর সদস্যরা সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখার সুযোগ পান। কারা বেআইনি কাজ করে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, তা তাদের নজরে আসে। সমানে ঘায়েল হতে থাকেন তখনকার ক্ষমতাসীন দল বিএনপির বাঘা বাঘা ক্যাডাররা। প্রথম দিনের অভিযানে গ্রেফতার হাজার দেড়েকের বেশির ভাগই ছিলেন বিএনপির নেতাকর্মী। অপারেশন ক্লিনহার্টে সেনাবাহিনী বিভিন্ন জায়গায় যাদের আটক করে, তাদের মধ্যে অন্তত ৪০ জনের বেশি হেফাজতে মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের এক-তৃতীয়াংশ বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মী। ৮৪ দিন অভিযান পরিচালনার পর সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
অনেক বছরের ব্যবধানে আবার মাঠে সেনাবাহিনী নামান শেখ হাসিনা। উদ্দেশ্য ছিল তার ফ্যাসিবাদী শাসন বহাল রাখা। চব্বিশ সালের ১৯ জুলাই দিনভর সহিংসতায় অন্তত ৬৬ জন নিহতের পর মধ্যরাতে দেশব্যাপী কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। মূল উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনটি বরবাদ করা। ক্রমেই হয়েছে উল্টোটা। ‘নো ফায়ার’ ডিক্লারেশনে সেনাবাহিনী ঘুরে দাঁড়ায়। পতন নিশ্চিত হয়ে ৫ আগস্ট এক কাপড়ে পালাতে হয় শেখ হাসিনাকে। এবারের প্রেক্ষিত ভিন্ন। ক্ষমতাসীনরা নির্দলীয়। তাদের ক্যাডার বা পাণ্ডা লীগ বা দল নেই। অতিরিক্ত বল প্রয়োগে না গিয়ে মাঠে আছে সেনাবাহিনী। তারা সরেজমিনে দেখছে, জানছে। এ বাস্তবতা বিএনপি-এনসিপি-জামায়াত, মব, কথিত তৌহিদি জনতা সবার জন্যই রেড সিগন্যালের মতো।

কমেন্ট বক্স