মুখে লাগানোর নতুন এক ধরনের ই-ট্যাটু তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত কাজ করা থেকে রক্ষা করবে এটি।
গবেষকেরা বলছেন, তাদের তৈরি ট্যাটু মুখে লাগানো যায়, আর এটি বুঝতে পারে কখন মস্তিষ্ক খুব বেশি চাপ নিচ্ছে বা পরিশ্রম করছে। কারণ মানুষের মস্তিষ্ক অনেক সময়ই বেশি কাজ করে, যা শরীর বা মন দুটোর ওপরই প্রভাব ফেলে।
নতুন এ ইলেকট্রনিক ডিভাইসটি মুখে বসানো যেতে পারে এবং আগের মতো বড় ও ভারী হেলমেট বা হেডগিয়ার ছাড়াই মনের চাপ বা মানসিক ক্লান্তি মাপতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
গবেষকরা বলছেন, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার, ট্রাক চালক এবং যেসব পেশার মানুষকে দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখতে হয় তারা এটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে দুর্ঘটনা বা ভুল হবার ঝুঁকিও কমবে।
কোনো কাজ ভালোভাবে করতে হলে মাথার ওপর বেশি চাপ না থাকাই ভালো। যাতে কেউ অতিরিক্ত চাপে না পড়ে আবার একেবারে বিরক্ত বা অলস হয়েও না পড়ে। তবে সমস্যা হচ্ছে, এ ধরনের ভারসাম্য খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন।
বর্তমানে এ বিষয়ে গবেষণা করতে হলে, সাধারণত মানুষকে কোনো কাজ শেষ করার পর দীর্ঘ জরিপ বা প্রশ্নাবলীর মাধ্যমে জানতে হয় তাদের কেমন লেগেছে বা কতটা চাপ অনুভব করেছেন তারা।
এ গবেষণার লেখক ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট অস্টিনের’ অধ্যাপক ন্যানশু লু বলেছেন, “মানুষের বিবর্তনের চেয়েও অনেক দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে প্রযুক্তি। আমাদের মস্তিষ্কের সক্ষমতা এই গতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারার ফলে খুব সহজেই বেশি চাপের মধ্যে পড়ে যায়।
“সর্বোচ্চ সক্ষমতার জন্য একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মানসিক চাপ দরকার, যেটা মানুষভেদে ভিন্ন হতে পারে।”
গবেষকরা বলছেন, এ সমস্যার সমাধানে সাহায্য করতে পারবে এ ‘ই-ট্যাটু’। যন্ত্রটি কাজ করে মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ ও চোখের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে। সাধারণত এসব তথ্য মাপতে হলে মাথায় একটা জটিল ক্যাপ পরাতে হয়, যেটায় থাকে অনেকগুলো ইলেকট্রোড। তবে এ নতুন প্রযুক্তি ট্যাটুর মতো হালকা। এতে রয়েছে ছোট ব্যাটারি ও সেন্সর, যেগুলো মাথায় সেঁটে দেওয়া যায়।
গবেষকদের মতে, এসব সেন্সর অত্যন্ত পাতলা ও নমনীয়, যার মানে হলো এগুলো পরিধানকারীর মুখের গড়নের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে যেতে পারে। ফলে ই-ট্যাটু থেকে পাওয়া তথ্য হয়তো আগের সেই বড় ও জটিল হেলমেট বা ক্যাপের চেয়েও ভালো হতে পারে।
গবেষক ন্যানশু লু বলেছেন, “বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে সেইসব বড়সড় ক্যাপের মধ্যে অনেক সেন্সর থাকলেও, সেগুলো কখনোই পুরোপুরি পরিষ্কার সিগনাল ধরতে পারে না, কারণ প্রত্যেক মানুষের মাথার গঠন আলাদা।
“আমরা অংশগ্রহণকারীদের মুখের গঠন পরিমাপ করে ব্যক্তিগতভাবে মানানসই ই-ট্যাটু তৈরি করেছি, যাতে এসব সেন্সর সবসময় সঠিক জায়গায় থাকে ও ভালোভাবে সিগনাল পায়।”
এ প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা করতে ৬ জন অংশগ্রহণকারীর মুখে ই-ট্যাটু লাগান এবং তাদের স্মরণশক্তি পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা, যেখানে তাদের মস্তিষ্ক কতটা চাপে আছে ও তারা কতটা ক্লান্ত– এসব কিছু ই-ট্যাটুর মাধ্যমে পরিমাপ করা সম্ভব হয়েছে।
অংশগ্রহণকারীদের যখন মস্তিষ্কের চাপ বাড়তে থাকে তখন তাদের মধ্যে থিটা ও ডেল্টা ব্রেইনওয়েভ বেড়ে যায়। যা থেকে ইঙ্গিত মেলে, বুদ্ধিবৃত্তিক চাপ বা মস্তিষ্কের কাজের চাহিদা অনুভব করছেন তারা। একই সঙ্গে তাদের মধ্যে আলফা ও বিটা ব্রেইনওয়েভও বাড়ে, যা তাদের ক্লান্ত হয়ে পড়ারই ইঙ্গিত দিয়েছে। এতে বোঝা গিয়েছে, এ প্রযুক্তি সত্যিই মানুষের মানসিক অবস্থা ধরতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, এ একই পদ্ধতি ব্যবহার করে তারা বুঝতে পারবেন কখন মস্তিষ্ক অতিরিক্ত চাপের মধ্যে আছে বা কষ্ট পাচ্ছে। ফলে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে এমন এক কম্পিউটার মডেল তৈরি করা যেতে পারে, যা আগাম জানতে পারবে কখন মস্তিষ্ক বেশি কাজ করছে বা চাপ নিচ্ছে।
‘এ ওয়্যারলেস ফোরহেড ই-ট্যাটু ফর মেন্টাল ওয়ার্কলোড এস্টিমেশন’ শিরোনামে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ডিভাইস’-এ।
ঠিকানা/এসআর