Thikana News
০৬ জুন ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫

হঠাৎ কেন আবার ওকার শব্দদূষণ?

হঠাৎ কেন আবার ওকার শব্দদূষণ?



 
একা আর কতো? শেখ হাসিনা আর কতো করবেন? খুব বেশি কিছু তো নয়, এই মুহূর্তে ড. ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার ডাকা নতুন কর্মসূচির একটা ভয়েজ কল ফাঁস হলেই রাজনৈতিক দলগুলো আবার হাসিনার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু হাসিনা একা আর কত করবেন! তিনি কি শান্তিতে একটু বিশ্রামও নিতে পারবেন না? তার বিরুদ্ধে ঐক্য ধরে রাখার দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হবে? 
টানা দশটা মাস ধরে এ কাজ শেখ হাসিনাকে একাই করতে হচ্ছে। বলতে হচ্ছে চট করে চলে আসার কথা। আজগুবি ঘোষণা দিতে হয় জিরো পয়েন্টে বা ৩২ নম্বরের সামনে জড়ো হতে। আর কতো? এক সময় দিনে কয়েক বেলা করে নানা ছড়া-কবিতা, আবৃত্তি করা ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদরা রিলাক্সে বিদেশ করছে। আর দেশে মার খাচ্ছে, জেলে যাচ্ছে, নানা বন-বাঁদাড়ে লুকিয়ে জান বাঁচাচ্ছে ত্যাগী কর্মীরা। তারা ত্যাগ করতেই থাকবে? ত্যাগ করার আর কারো কিছু নেই? থাকতে পারে না? 
এ পর্যায়ে এসে কিছু অসাধারণ শব্দ ত্যাগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেই খিঁচুনি কতোদিন শোনে না মানুষ! অবশেষে শোনা গেলো অডিও। হোক না শব্দ দূষণ। জানালেন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫টা ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন তিনি। কী কষ্ট! যন্ত্রণা! ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়ালের এক্সিকিউটিভ এডিটর অমল সরকারকে দেয়া এক সাক্ষাৎকার। শেখ হাসিনার পতনের পর এই প্রথম কোনো গণমাধ্যমে তার কথা বলা। বেশ ইন্টারেস্টিং না? 
লুকিয়ে থাকার ঘটনা বর্ণনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘এ বিষয়ে দেশে-বিদেশে এবং ভারতবর্ষে সবার কাছে পরিষ্কার। ৫ আগস্ট সেদিন ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ যে ছাত্র উত্থান, সে সময় আমি খুবই ভাগ্যবান, সেদিন আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল না। মৃত্যু থেকে অনেক কাছে ছিলাম। আমারই সংসদ এলাকার আমার নিজের বাসাকে এড়িয়ে পার্শ্ববর্তী আরেকটা বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। তখন চারদিক থেকে মিছিল আসছিল। এটা আসলে ছিল প্রধানমন্ত্রীর (সাবেক) গণভবন কেন্দ্রিক। আমরা অবাক হলাম যে, সংসদ এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে এবং একটা ‘লুটপাটের লুম্পেন স্টাইল’-এ কতগুলো ঘটনা ঘটে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের লোক আসে এবং এদের মধ্যে বেশিরভাগই মনে হয়েছে- এটা কোনো রাজনৈতিক অভ্যুত্থান। এটা ‘লুটপাটের অভ্যুত্থান’।’’...তিনি বলেন, ‘‘আমি যে বাসাটায় ছিলাম, তারা সে বাসাতেও হামলা করে। তারা জানতো না যে, সেখানে আমি আছি। আমার বাসা তারা ‘লুটপাট’ করেছে, কিন্তু যে বাসায় আমি গিয়ে আশ্রয় নিলাম, সেখানে হামলা করবে আমি ভাবতে পারিনি। দেখলাম অনেক লোকজন ঢুকে পড়েছে। তারা ভাঙচুর ও ‘লুটপাট’ করতে থাকে। আমি আমার স্ত্রীসহ বাথরুমে লুকিয়ে ছিলাম। অনেকক্ষণ ছিলাম, প্রায় ৫ ঘণ্টা। তারপর একটা পর্যায়ে তারা বাথরুমের ভেতরেও কমোড-বেসিন এগুলো ‘লুটপাট’ করেছে। আমার ওয়াইফ বাথরুমের মুখে দাঁড়িয়ে, বারবার সে বলছিল আমি অসুস্থ, এ কথা বলে তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। একটা পর্যায়ে তারা বাথরুমে যেগুলো আছে, সেগুলো লুট করার জন্য জোরপূর্বক প্রবেশের হুমকি দেয়। সে সময় আমার ওয়াইফ জিজ্ঞাসা করলো কী করবো- বললাম, খুলে দাও। তারপর ৭-৮ জন ছেলে ঢুকলো। খুবই আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। হঠাৎ তারা আমার দিকে তাকিয়ে, নেত্রী চলে গেলো আপনি যাননি কেনো?” 
এমন কিচ্ছার সাথে ওবায়দুল কাদের আরো যোগ করেন, ‘... তাদের মধ্যে কী উদয় হলোÑ আমি জানি না। তারা আমাকে বলে, আপনার ছবি তুলবো। তারপর ছবি তুলতে শুরু করলো, সেলফি নিচ্ছিলো। এই ছাত্রদের অনেকে হয়তো আমাকে চিনতো। কী কারণে যে আক্রমণাত্মক মনোভাবটা ছিল, সেটা নিমিষেই শীতল হয়ে গেলো! তখন ঠান্ডা মেজাজি কথা বলছিল। এদের মধ্যে এক পর্যায়ে একটা গ্রুপ চেয়েছিল আমাকে রাস্তায় সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে। কেউ কেউ আবার এটাও চেয়েছিল যে, জনতার হাতে তুলে দিতে। এটা অবশ্যই তখন একটা মানসিকভাবে ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়েছিল। এরপর একটা শার্ট, এদের ব্যাচ, লাল পতাকাশোভিত ব্যাচ লাগিয়ে কালো একটা, একটা মাস্ক মুখে দিয়ে আমাকে হাঁটতে হাঁটতে সংসদ এলাকা থেকে বড় রাস্তা, গণভবন অভিমুখী রাস্তায় নিয়ে যায়। ওখানে নিয়ে হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা ট্যাক্সি আসে, একটা ইজি বাইক। সেটা খালিই ছিল। ওখানে গাড়ি-ঘোড়া কিছুই ছিল না। হঠাৎ করে কেন যেনো এসে পড়লো। হয়তো আমার ভাগ্য। এরা দুইজনে আমাকে ও আমার ওয়াইফকে নিয়ে অটোতে উঠলো। আর বলতে লাগলো। পথে তো অসংখ্য মানুষ। চেকআপ চেকআপ সব জায়গায়। বলতে লাগলো আমাদের চাচা-চাচি অসুস্থ হাসপাতালে নিচ্ছি। ডিস্টার্ব করবেন না। এই করে করে নিয়ে গেলো। অনেক দূরে একটা জায়গায়। এটা ভাবতেও পারিনি যে, ওরা বাথরুমে ঢুকলো, সে বেঁচে থাকাটা সেদিন পরম সৌভাগ্যের বিষয়। আনস্পেকটেডলি বেঁচে গেছি। দিস ইজ দ্য ইম্পর্ট্যান্ট। ...ছেলেরা যেকোনোভাবে আমাদেরকে আর্মির হাতে তুলে দিতে পারতো। রাস্তায় অসংখ্য মানুষ। সেখানে অনেকেই তো আছে আমাদের অপজিশন। মেরে ফেলতে পারতো।’ 
এরপর কোথায় ছিলেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের শোনালেন সে কি বর্ণনা। ...আমি বাংলাদেশেই ছিলাম তিন মাসের মতো। আমার একটা উদ্দেশ্য ছিল- ওখান থেকে কিছু করা যায় কিনা। কিছু একটা করা যায় কিনা। সংগঠিত করা যায় কিনা। বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক অসন্তোষ, কর্মচারীদের অসন্তোষ। প্রতিদিনই এগুলো লক্ষ্য করতাম। ক্ষোভগুলো তখন রাস্তায় নেমে আসছিলো। বিশেষ করে গার্মেন্টস। সে সময় ভাবলাম- এদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু করা যায় কিনা। এই চিন্তাতেই তিন মাস পেরিয়ে গেলো। এরপর একে একে সবাই অ্যারেস্ট হচ্ছি। আমি তো নেত্রীর পরের, তখনই দুইশো বারটা খুনের মামলায় আমি আসামি হয়ে গেছি। এই অবস্থায় অনেকে বললো, আবার এখান থেকেও অনেক অনুরোধ যাচ্ছিলো আমি যেনো সতর্কভাবে এদিকে চলে আসি। এভাবেই চিন্তা করলাম যে, আমার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। অনেকগুলো ওষুধ খেতে হয়। আমি ধরা পড়লে ওষুধ খাওয়াবে কে?
শুনতে কি আদৌ ভালো লাগছে, এসব কিচ্ছা-বয়ান? টানা কতোগুলো বছর কতোই না শুনিয়েছেন? তারপরও দীর্ঘবিরতীতে শোনার আলাদা একটা অনুভূতি। আর বেশি কিছু?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা। 

কমেন্ট বক্স