সকালে পাউরুটি অনেকের কাছেই একটি সহজ এবং ঝটপট নাশতা। কর্মব্যস্ত জীবনে এর বিভিন্ন পদ নাশতা হিসেবে খাওয়া হয়। কিন্তু প্রতিদিন সকালে পাউরুটি খেয়ে আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছি কিনা, তা অনেকেই জানেন না। ইটিং ওয়েলের এক প্রতিবেদনে এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
চিকিৎসকরা সাধারণত খালি পেটে ইস্ট-জাতীয় খাবার খেতে নিষেধ করেন। আর পাউরুটি ইস্ট দিয়েই তৈরি করা হয়। যারা নিয়মিত সকালে পাউরুটি খান, তাদের জানা উচিত যে এটি প্রতিদিন খাওয়ার মতো খাবার নয়। খালি পেটে এই খাবার খেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন পাউরুটি খেলে শরীরে যে প্রভাব দেখা দেয়:
কেউ যদি দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত পাউরুটি খান, তবে তা তার শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। এই অভ্যাস মস্তিষ্কে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, পাউরুটিতে থাকা কিছু যৌগ শরীরে প্রবেশ করলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। পাউরুটি প্রতিদিন খেলে শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই যাদের বয়স একটু বেশি, তাদের জন্য নিয়মিত পাউরুটি খাওয়া বেশি ক্ষতিকর বলে গবেষকরা মনে করেন।
পাউরুটিতে গ্লুটেনের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি খাওয়ার পর অনেকেরই পেটে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়। যাদের আগে থেকেই পেটে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে, পাউরুটি খেলে তাদের এই সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে।
পাউরুটি ময়দা থেকে তৈরি হয়, আর ময়দায় ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে। ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেট বেশি হলেও এতে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেল কম থাকে। তাই পাউরুটি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।
নিয়মিত পাউরুটি খাওয়া ওজন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এতে চিনি ও লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই প্রতিদিন খেলে ওজন বেড়ে যায়। এমনকি উচ্চ রক্তচাপের কারণও হতে পারে পাউরুটি, কারণ এই খাবারটিতে প্রচুর পরিমাণে চিনি ও লবণ ব্যবহার করা হয়।
তবে সব ধরনের পাউরুটিই যে খারাপ, এমনটা নয়। সম্পূর্ণ শস্যের পাউরুটি (Whole-wheat bread) বা মাল্টিগ্রেইন পাউরুটি তুলনামূলকভাবে বেশি পুষ্টিকর হতে পারে। এসব পাউরুটিতে ফাইবার, আয়রন, বি-ভিটামিন, ফোলেট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে। বিশেষ করে, গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ফোলেট অত্যন্ত জরুরি।
স্বাস্থ্যকর নিয়মে পাউরুটি: অন্যদিকে চিকিৎসকরদের মতে পাউরুটি যদি সঠিক উপায়ে খাওয়া হয়, তবে এটি শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। সম্পূর্ণ শস্যের পাউরুটিতে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা হজম, অন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পাউরুটিতে আয়রন, বি-ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, থায়ামিন, ম্যাঙ্গানিজ এবং জিঙ্কও পাওয়া যায়।
তবে, কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত:
রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি: পাউরুটি একটি কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ খাবার, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। বিশেষ করে সাদা পাউরুটি দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ চিন্তার কারণ। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাউরুটির সাথে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট বা প্রোটিন যোগ করা উচিত।
ক্লান্তি: পাউরুটি তাৎক্ষণিক শক্তি দিলেও, এতে পর্যাপ্ত ফাইবার বা প্রোটিন না থাকলে দ্রুত ক্লান্তি অনুভব হতে পারে।
সুতরাং, পাউরুটি পুরোপুরি বাদ দেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে, সাদা পাউরুটির পরিবর্তে সম্পূর্ণ শস্যের পাউরুটি বেছে নেয়া এবং এর সঙ্গে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও প্রোটিন যোগ করে খাওয়া উচিত। যেমন: পাউরুটিতে পিনাট বাটার, অ্যাভোকাডো বা সেদ্ধ ডিম দিয়ে খেলে তা সুষম নাশতা হিসেবে কাজ করতে পারে।
ঠিকানা/এএস