যুক্তরাজ্যের কাউন্টেস অব চেস্টার হাসপাতালের নার্স লুসি লেটবি সাতটি শিশুকে হত্যা করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। হাসপাতালটির নবজাতক ইউনিটে তিনি কর্মরত ছিলেন। বলা হচ্ছে, আধুনিক সময়ে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় শিশু সিরিয়াল কিলার এখন লুসি লেটবি।
এ বিষয়ে ১৮ আগস্ট শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩৩ বছর বয়সী লুসি ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত মাত্র এক বছরের মধ্যেই ছয়টি শিশুকে হত্যার পদক্ষেপ নেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে শিশুদের ইনজেকশনে বাতাস ঢুকিয়ে দিতেন এবং জোর করে অন্যের দুধ পান করানো ছাড়াও দুই নবজাতকের শরীরে ইনসুলিনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করেছিলেন।
বিচারে সর্বশেষ রায়ের দিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে অস্বীকার করেন লুসি। প্রায় ৭৬ ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনার পর ৮ আগস্ট বিচারক প্যানেল প্রথম অভিযোগের রায় পড়েছিলেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন লুসি। ১১ আগস্ট দোষী সাব্যস্ত করে দ্বিতীয় রায় পড়ার সময়ও মাথা নিচু করে কেঁদেছিলেন তিনি।
এই বিচারের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশে ইতিপূর্বে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সর্বশেষ বিবিসিকে প্রতিবেদন প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ২০২২ সালের অক্টোবরে লুসি লেটবির বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। সে সময় প্রসিকিউশন তাকে ‘বিপথগামী’ হিসেবে আখ্যা দেয় এবং বলে যে নিজের হত্যাচেষ্টাগুলোকে গোপন করার জন্য তিনি সহকর্মীদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছিলেন।
হাসপাতালে শিশুদের অকালমৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে দুই বছর তদন্তের পর চেস্টারের পুলিশ লুসিকে অভিযুক্ত করে। ২০১৫ সালের জুন মাসের আগে ওই হাসপাতালটিতে প্রতিবছর গড়ে তিনটির কম শিশুর মৃত্যু হয়েছিল।
১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই বিচারকে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘতম হত্যা-সংক্রান্ত বিচার বলা হচ্ছে। আগামী সোমবার ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্টে লুসি লেটবির দণ্ড ঘোষণা করা হবে।
সিনিয়র ক্রাউন প্রসিকিউটর প্যাস্কেল জোনস বলেছেন, নার্স (লুসি) তার অপরাধ গোপন করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন। বিভিন্ন উপায়ে যেভাবে তিনি বারবার শিশুদের ক্ষতি করেছিলেন।
প্যাস্কেল আরও বলেন, তিনি (লুসি) তার শিক্ষাকে বিকৃত করেছেন এবং ক্ষতি, শোক এবং মৃত্যু ঘটাতে তার নৈপুণ্যকে অস্ত্র বানিয়েছেন।
লুসি লেটবি নবজাতক ওয়ার্ডে নার্স থাকা অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় চার হাজার শিশুর যত্নের পর্যালোচনা করছেন গোয়েন্দারা। ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত তিনি কাউন্টেস অব চেস্টার হসপিটালে কর্মরত ছিলেন। এর মধ্যে ২০১২ ও ২০১৫ সালে কিছুদিনের জন্য তিনি লিভারপুলের মহিলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। তাই লিভারপুলের ওই হাসপাতালটিতেও লুসি কাজ করা অবস্থায় কোনো অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ছিল কি না খতিয়ে দেখবে চেস্টারের পুলিশ।
চেস্টার হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটের প্রধান পরামর্শদাতা ডক্টর স্টিফেন ব্রেইরি ২০১৫ সালের অক্টোবরে প্রথমবারের মতো লুসি লেটবিকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তবে সে সময় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পরবর্তীকালে আরও পাঁচটি শিশুকে আক্রমণ করে দুজনকে হত্যা করেছিলেন লুসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কীভাবে লুসি লেটবি এত দিন ধরে এত শিশুকে হত্যা ও ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছেন—তা নিয়ে তদন্ত করছে বিবিসি প্যানোরমা এবং বিবিসি নিউজ।
ঠিকানা/এনআই