বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এফডিআরের অন্তত ২৫০ কোটি টাকা সরানো হয়েছে। এই টাকা কেন সরানো হয়েছে? ঠিকঠাক জমা আছে কী? কেউ সুবিধা নিচ্ছে না তো? এমন নানা প্রশ্ন সামনে রেখে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন টকশোতে এসে এ নিয়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ দাবি করছেন, এফডিআরের কোনো টাকা ‘সরানো’ হয়নি। এই টাকা এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে ‘ট্রান্সফার’ করা হয়েছে।
১৯ এপ্রিল মঙ্গলবার ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীনের প্রশ্নের জবাবে বোর্ড প্রধান ফারুক আহমেদ আরো বলেন, ‘আমি যখন দায়িত্ব নিলাম তখন অনেক ব্যাংক খালি হয়ে যাচ্ছে। এই দুঃশ্চিন্তা থেকে আমার মাথায় প্রথম এসেছে তুলনামূলক নিরাপদ ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার করার বিষয়টি। কারণ কিছু একটা হয়ে গেলে বোর্ডের দায়ভার আছে। কিন্তু প্রধান ব্যক্তি হিসেবে প্রথম দায়ভার আমার। তবু অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করেই টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে।’
তবে ফারুক আহমেদ স্বীকার করেন, বোর্ডসভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কারণ এতো বেশি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেলে কাজটি করতে এক-দেড়মাস সময় লেগে যেতো। তখনকার ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতিতে সময় নষ্ট করতে চাননি, বলেন তিনি।
তার দাবি, প্রথমে নিরাপদ ব্যাংকে টাকা রাখার বিষয়টি ভেবেছেন। তারপর বেশি লাভ আসবে সেটাও ভেবেছেন। এখন যেসব ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে, সেসব ব্যাংক থেকে স্পন্সর পাওয়ার মাধ্যমে বিসিবি বাড়তি আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে- মন্তব্য করেন ফারুক আহমেদ।
এই টকশোতে একক অতিথি হিসেবে ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বোর্ড প্রধান ফারুক আহমেদ। যা নিউইয়র্ক সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। দেশের ক্রিকেটের সমসাময়িক নানা বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেন বিসিবি সভাপতি।
সম্প্রতি আল জাজিরায় কর্মরত বাংলাদেশি অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান কিছু নথি ফেসবুকে তুলে ধরে লিখেছেন, বিগত আমলে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় জমি কিনে বিশেষ কৌশলে রাষ্ট্র থেকে সুবিধা আদায় করে নিতো একটি গোষ্ঠী, এদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ফারুক আহমেদও। শামীম ওসমান এদের সহায়তা করতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, তার বাবাও ব্যবসায়ী ছিলেন। প্রধান নির্বাচক পদ ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি নিজে ব্যবসায় যুক্ত হন। বৈধ প্রক্রিয়ায় কিছু জমি-জমার ব্যবসা করেছেন। কিন্তু শামীম ওসমানের সঙ্গে কোনো ধরনের শখ্যতা ছিল না, দাবি করেন তিনি।
তার ভাষ্যমতে, ‘বাংলাদেশে জমি রক্ষার জন্য মালিকানার সাইনবোর্ড থাকা জরুরি। সেই হিসেবে নিজের বায়না করা জমিতে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। সবাইকে তাই ঢালাও অভিযোগ থেকে বিরত থাকতে বলবো।’
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের মাটিতে ক্রিকেট খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না সাকিব আল হাসান। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মামলার আসামি করা হয়েছে তাকে। এ নিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন, সাকিব দেশের মাটিতে বিদায়ী টেস্ট খেলতে পারলে খুব ভালো হতো। কিন্তু তার নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারের। আর মামলা সাকিবকেই লড়তে হবে। এক্ষেত্রে বিসিবির কিছুর করার নেই। বোর্ড থেকে শুধু সাকিবের ফিটনেস ও সময়ের বিষয়টি দেখার সুযোগ আছে- বলেন ফারুক আহমেদ।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। দেশের ক্রিকেটকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে, ক্রিকেটারের পাইপলাইন ঠিক করতে হলে চার-পাঁচ বছর সময় লাগবে বলে মনে করেন ফারুক আহমেদ। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, এরই অংশ হিসেবে অপপ্রচার করা হচ্ছে- এমন দাবি করে তিনি বললেন, ‘অনেকেই মনে করছেন কাজে জটিলতা তৈরি হলে দায়িত্ব থেকে চলে যাবো। কিন্তু চ্যালেঞ্জটা নিতে চাই আমি। তাই অক্টোবরে চেষ্টা করবো বিসিবির নির্বাচন করতে।’
নির্বাচিত হয়ে পূর্ণ মেয়াদের একজন সভাপতি হওয়ার আকাঙ্খার কথা জানালেন ফারুক আহমেদ। তিনি বললেন, ‘আমি যদি বিসিবিতে থাকি, ক্রিকেটে কোনো অনাচার থাকবে না। দেশের ক্রিকেট সঠিক পথে নিয়ে আসতে পারবো আশা করি।’