Thikana News
২২ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

ফোবানার বিভেদ থামাতে পারেন এমন  কেউ কি আছেন এই কমিউনিটিতে?

ফোবানার বিভেদ থামাতে পারেন এমন  কেউ কি আছেন এই কমিউনিটিতে?
সঙ্কট আছে, সঙ্কট থাকলে তার সমাধানও আছে। কিন্তু সমাধান নেই শুধু ফোবানা সঙ্কটের। প্রতিবছর ফোবানায় ভাঙন ধরে। আর এই ভাঙনে টুকরো-টুকরো হচ্ছে বাংলাদেশি কমিউনিটি। এখন ফোবানার সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কারো কোনো প্রচেষ্টাই কাজে লাগছে না। বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এমন একজন ব্যক্তিও আর অবশিষ্ট নেই, যিনি ফোবানার বিভেদ বা বিভক্তি দূর করতে পারবেন। অর্থাৎ এমন কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি যার কথায় সবাই বিভেদ বা অনৈক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ ফোবানা সম্মেলন করবেন। এমনটি আশাও কেউ এখন আর করেন না। 
প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির ঐক্য ও সংহতির প্রতীক ছিল ফোবানা। কিন্তু এখন ফোবানা মানেই ভাঙন। নেতৃত্বের কোন্দলে ভাঙতে ভাঙতে কথিত ঐক্যের আহ্বানে গড়া ফোবানা এখন পাঁচ ভাগ হয়ে গেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ২০ মে শনিবার ভাগ হয়েছে গিয়াস আহমেদ ও শাহনেওয়াজের নেতৃত্বাধীন ফোবানা। একসময়ের একে-অপরের ঘনিষ্ঠ এই দুই কমিউনিটি লিডারের সম্পর্ক এখন দা-কুমড়োর। শুধু গিয়াস আহমেদ বা শাহনেওয়াজের সম্পর্ক নয়, একসময় ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কিন্তু ফোবানার কারণে একে অপরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের মধ্যেই। 
অন্য ফোবানার বিভক্তি নিয়ে উচ্চবাচ্য তুলনামূলক কম। তবে ফোবানা সম্মেলন নিয়ে গিয়াস আহমেদ ও শাহনেওয়াজের মধ্যকার বিভক্তির খবর সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। তাদের দুজনের নেতৃত্বের বিরোধে তাদের অংশের ফোবানাও শুধু বিভক্তিকেই বাড়ায়নি, ভীষণ তিক্ততার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। গত ১২ জুলাই শনিবার নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসে একটি পার্টি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফোবানার এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ সদস্য সচিব পদ থেকে শাহনেওয়াজকে অব্যাহতির ঘোষণা দেন। তার স্থলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৩৬তম ফোবানার কনভেনর জিআই রাসেলকে। এই ঘোষণার ফলে এতদিন এই অংশের ফোবানার বিরোধ নিষ্পত্তির যতটুকু সুযোগ অবশিষ্ট ছিল, তাও শেষ হয়ে গেল। এখন শাহনেওয়াজ কী সিদ্ধান্ত নেন তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৯ অথবা ২০ আগস্ট পর্যন্ত। পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে তিনি গিয়াস আহমেদকে বহিস্কার করতে পারেন, এমনটি শোনা যাচ্ছে সর্বত্র। 
এ বছর মোট কতটি ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে তা এই মুহূর্তে সঠিকভাবে বলা কঠিন। তবে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী- এ বছর ফোবানা সম্মেলন হবে কানাডার টরন্টো ও মন্ট্রিয়ালে এবং টেক্সাসের ডালাসে। সবগুলো ফোবানা সম্মেলনই অনুষ্ঠিত হবে ১-৩ সেপ্টেম্বর লেবার ডে উইকেন্ডে। প্রতিটি স্থানেই একাধিক সম্মেলন হবে নেতৃত্বের বিরোধে। 
১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর নেতৃত্বের কোন্দলে ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো বিভক্ত হয়ে যায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা)। গত ২৯ বছর ধরে বিভক্ত ফোবানার ব্যানারে পৃথক অনুষ্ঠান হচ্ছে। উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের স্বদেশ-সংস্কৃতির আলোকে ঐক্যবদ্ধ রেখে নতুন প্রজন্মে বাঙালিত্ব প্রবাহিত করা এবং মূলধারায় জোরালোভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সংকল্পে যে আলোকিত ফোবানার যাত্রা শুরু হয়েছিল, অনৈক্যের কারণে তা এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত। 
ফোবানার ভাঙন ঠেকাতে এবং ঐক্যবদ্ধ ফোবানা সম্মেলন করার প্রয়াসে অনেকেই বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু কারো চেষ্টাই কাজে আসেনি। আর এখন যতগুলো ফোবানা হয়েছে তাতে কেউ না কেউ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এমন কেউ অবশিষ্ট নেই, অর্থাৎ গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তি খুুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি ফোবানাকে ঐক্যবদ্ধ করতে উদ্যোগ নেবেন। আবার কেউ উদ্যোগ নিলে তার কথা সবাই শুনবেন, এমন ব্যক্তিও বাংলাদেশি কমিউনিটিতে দেখা যাচ্ছে না। 
ফোবানাকে ঐক্যবদ্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া বাংলাদেশি কমিউনিটির একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ঠিকানাকে জানান, আমাকে একবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তখন মাত্র বিভক্ত হয়েছে ফোবানা। আমি ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ কথা শোনেননি। সেই যে বিভক্তির ধারা, তা এখনো বহমান। এখন প্রতিবছর একটি করে বিভক্তির ‘বাচ্চা প্রসব’ করে ফোবানা। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন প্রবীণ রাজনীতিক বলেন, একসময় ফোবানা নিয়ে গর্ব করতাম। আর এখন বলতে লজ্জাবোধ হয়। একসময় আমরাই ফোবানা প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন ফোবানা ভাঙলো, নাকি ভেস্তে গেল, তাতে কিছুই আসে যায় না। 
ফোবানাকে এক করার আর সুযোগ আছে কী না জানতে চাইলে এই প্রবীণ রাজনীতিক বলেন, এখন কয়টা ফোবানাকে এক করবো। এখন তো ঘরে ঘরে ফোবানা। প্রকৃত অর্থে ফোবানায় কিছু দুষ্টু লোক ঢুকে পড়েছে। তাদের কব্জা থেকে ফোবানাকে বের করে আনা কঠিন। এই দুষ্টু লোকগুলো নিজেদের অনেক বড় কিছু মনে করেন। ফলে ফোবানা মানেই এখন বিভক্তি, উল্লেখ করেন ওই নেতা। 

কমেন্ট বক্স