Thikana News
২৭ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

বাংলাদেশের সাইজ কেবল বাড়ছে?

বাংলাদেশের সাইজ কেবল বাড়ছে?
বেশ বাজার পেয়েছে বাংলাদেশের সাইজ বাড়বে বলে আশা জাগানিয়া খবরটি। যখন যেখানে প্রকাশ হয়, তখনই মানুষ চেটেচুটে খাওয়ার মতো গ্রহণ করে একই খবর। প্রশ্ন করার ফুসরতও পায় না- কবে বাড়বে বাংলাদেশের আয়তন? কোন দিক দিয়ে বাড়বে? লম্বায়, না চ্যাপ্টায়? জঙ্গলে, না পানিতে?    
এ ধরনের খবর শুনতেও আলাদা তৃপ্তি। গড়পড়তা তথ্য হচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে লবণাক্ত পানির বুক চিড়ে জেগে ওঠা চরে বাংলাদেশের আয়তন প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বঙ্গোপসাগরের যে জায়গা দিয়ে এক সময় ভটভট করে মাছ ধরার ট্রলার চলতো, সেই জায়গা দিয়ে এখন ট্রাক, টেম্পো, রিকশা চলে। এক হিসেবে কেবল সন্দ্বীপের আশপাশেই এভাবে স্থলভূমি বেড়েছে ৪৭৫ বর্গকিলোমিটার। মানে জলভাগ পরিণত হচ্ছে স্থলভাগে। বোঝা গেলো ব্যাপারটা? এভাবে আর কোথায় কোথায় সাইজ বাড়ছে আমাদের? 
মেঘনা অববাহিকা ও উপকূলজুড়ে তৈরি হয়েছে অর্ধশতাধিক দ্বীপচর। এসব জায়গায় এভাবে গড়ে প্রতি বছর দেশের স্থলখণ্ড বেড়েছে প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার। এ ছাড়া ভাটির সময় মাথা তুলে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে ছয় শতাধিক ডুবোচর, যার মোট আয়তন ১ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি। ১৭ কোটির বেশি জনসংখ্যার ভার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটারের ক্ষুদ্র দেশটি। মানুষ বাড়ছে নিয়মিত। সঙ্গে যোগ হয়েছে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর একটা আবাসিক হিল্লা তো তবে হতেই পারে?
উপকূলজুড়ে চর জাগার বিষয়টি উঠে এসেছে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান- স্পারসোর ‘ল্যান্ড এরিয়া এক্সপানশন ইন দ্য ইস্টার্ন পার্ট অব মেঘনা এসটুয়েরি সিন্স দ্য ১৯৯০’ শীর্ষক গবেষণায়। ড. মাহমুদুর রহমানের এ গবেষণায় ব্যবহার এবং বিশ্লেষণ করা হয়েছে ১৯৮৯ এবং ২০২৫ সালের স্যাটেলাইট ছবি। এর তথ্য বলছে, সন্দ্বীপসহ আশপাশে ১৯৮৯ সালে বসবাসযোগ্য স্থায়ী ভূমি ছিল ৩২৮ বর্গকিলোমিটার। ২০২৫ সালে বেড়ে তা হয়েছে ৭২৬ বর্গকিলোমিটার। এ ছাড়া ৩৬ বছর আগের ৩৩৫ বর্গকিলোমিটার ডুবোচর এখন হয়েছে ৪১৩ বর্গকিলোমিটার। সেগুলোর কোথাও কোথাও বহু মানুষ ঘরবসতি বানিয়েছে। আর কী লাগে? 
লাগে, আরো কিছু লাগে। ভূমি থাকলেই হয় না। তা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমানে কাজে না লাগানো পর্যন্ত এটি সম্পদ নয়। একটি ছোট্ট ভূখণ্ডে বিপুল জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে ভূমির সদ্ব্যবহার ও নতুন ভূমি সৃষ্টির উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। দেশের উপকূলীয় অঞ্চল এবং নদ-নদী থেকে প্রাপ্ত সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূমি পুনরুদ্ধার ও টেকসই উন্নয়নে যে পদক্ষেপ দরকার, তা কি নেয়া হচ্ছে? যেসব এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে চর জেগে উঠছে, সেখানে ক্রসবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভূমি উদ্ধার এবং বনায়ন করে তা স্থায়ী করা সম্ভব। নেদারল্যান্ডস এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সাগর তীরবর্তী এলাকা থেকে ব্যাপক পরিমাণ জমি উদ্ধার করেছে। বাংলাদেশেও পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো নদীগুলো প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ পলি বহন করে সাগরে নিয়ে যায়। এসব পলিতে নদীতে প্রচুর চর জাগছে। বিশেষ করে মেঘনা মোহনায় নোয়াখালী জেলায় গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চর সৃষ্টি হয়েছে। পঞ্চাশের দশক থেকেই এই ধারা চলমান-বহমান। আবার কিছু চর সাগরে বিলীনও হয়ে গেছে। এতে কি বাংলাদেশের আয়তন কমছে? 
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা। 

কমেন্ট বক্স