বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা ও বিতর্ক। নির্বাচন কবে হবে- এই প্রশ্ন ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান, মতপার্থক্য ও উদ্বেগ ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন সংস্কার ও ভোটাধিকারের প্রশ্নে জটিল বিতর্কের মুখোমুখি। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, আগামী বছরের জুনের পরে নির্বাচন কোনোভাবেই যাবে না, এটা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে জাতির প্রতি অঙ্গীকার। ১৬ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। তবে বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, প্রধান উপদেষ্টা কোনো নির্দিষ্ট সময় দেননি এবং ডিসেম্বরের পর নির্বাচন হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বলে তারা সতর্ক করেছেন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও আগেই নির্বাচন চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়াই উপযুক্ত সময়, কারণ জুনের পরে বর্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নির্বাচনকে বিঘ্নিত করতে পারে। অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, বিএনপিপন্থী প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। তারা নির্বাচন সংস্কার, বিচার ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ধরে নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, প্রাক-প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে এবং অক্টোবরের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু হবে।
এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা ও আলোচনা তুঙ্গে রয়েছে। এই বিভাজনের মধ্যেই সর্বমহলে প্রশ্ন উঠেছেÑকোন পথে দেশের রাজনীতি? আগে সংস্কার নাকি নির্বাচন- কোন পথে এগোবে দেশ? এসবের উত্তর হয়তো সময়ই দেবে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব হওয়া উচিত। কারণ, নির্বাচন যত বেশি পেছাবে, তত বেশি ঝুঁকি বাড়বে। অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও নির্বাচিত সরকার ছাড়া বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বিএনপি ও জামায়াত দূরত্ব মোটামুটি ঘুচিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ বিএনপি ডিসেম্বরে আর জামায়াত মোটামুটি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে জানুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে বলে আমি মনে করি। জামায়াতের এ অবস্থার কারণ তারা মনে করছে একা কুলিয়ে উঠতে পারবে না। আবার যারা মনে করছে নির্বাচন পিছিয়ে দিলে তারা গুছিয়ে উঠতে পারবে, তাদের বিষয়ে আমি মনে করি নির্বাচন যত বেশি পেছাবে তত বেশি ঝুঁকি বাড়বে। জনগণের সাপোর্ট যে এ সময় তাদের পক্ষে থাকবে, এটা নাও হতে পারে। ইতিমধ্যে সাত-আট মাসে জনগণের মনোভাবের অনেক পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। এ বিশেষজ্ঞের মতে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মনে করছে, সরকার বলেছে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। সে ক্ষেত্রে কোনো বিনিয়োগকারীই এ স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে না। সবাই চায় তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ থাকুক। কারণ কে ক্ষমতায় আসছে তাদের পলিসি কী হবে সেটা কিন্তু বিনিয়োগকারীরা বলতে পারছে না। নির্বাচন যত বেশি দেরি হবে দেশের অর্থনীতিতে তত বেশি প্রেশার বাড়বে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় গণতান্ত্রিক দেশগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে স্থায়ী সরকার চাচ্ছে। যাতে তারা বিনিয়োগের জন্য আস্থা পেতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তো বলেই দিয়েছে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া তারা বড় ধরনের বিনিয়োগে যাবে না।