তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি কমিউনিটি এখন আর আমেরিকান স্বপ্নের ছায়ায় নয়, বরং সেই স্বপ্নের অন্যতম রূপকার। নিউইয়র্ক শহরে আপনাদের উপস্থিতি, পরিশ্রম, মূল্যবোধ ও অবদান স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।
আজ বাংলাদেশি কমিউনিটি নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে বড় মুসলিম গোষ্ঠী। আমি যখন ব্রুকলিন, কুইন্স বা ব্রঙ্কসের বাংলাদেশি পাড়া-মহল্লায় যাই, তখন দেখি- ব্যবসা, পরিবার, বিশ্বাস আর শান্তির এক অনন্য পরিবেশ। আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে আপনারা শুধু নিজেদেরই উন্নয়ন করেননি, বরং পুরো শহরকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।’

মেয়র অ্যাডামস উল্লেখ করেন, ‘বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীরা এখন শুধু স্কুল-কলেজেই নয়, সিটির পুলিশ বিভাগেও যোগ দিচ্ছেন। আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অংশ নিচ্ছেন, ছোট ব্যবসা খুলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছেন, মসজিদে ধর্মাচরণ করছেন এবং সন্তানদের মূল্যবোধে গড়ে তুলছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমি বলি- দেশে পরিবার রেখে কেউ এখানে আসে, ভাষা বোঝে না, অমানিশার মধ্যেও পরিশ্রম করে, ছোট ব্যবসা গড়ে তোলে, সন্তানদের স্কুলে পাঠায়, স্বপ্ন দেখে- তখন বলুন তো, আমি কোন অভিবাসী গোষ্ঠীর কথা বলছি? বলা কঠিন, কারণ এটাই হলো সব অভিবাসীর গল্প। আর এই গল্প বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেই অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।’
মেয়র অ্যাডামস বাংলাদেশি কমিউনিটিকে এখনই জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আপনাদের সংগঠিত হওয়ার সময়। আপনারাই যাতে নিজস্ব প্রতিনিধিদের নির্বাচনে দাঁড় করাতে পারেন, সেই উদ্যোগ এখন থেকেই নিতে হবে। বাইরের কেউ যেন আর আপনাদের প্রতিনিধিত্ব না করে, বরং আপনাদের ভেতর থেকেই নেতৃত্ব উঠে আসুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা তরুণদের উৎসাহ দিন- শহর পরিচালনায় অংশ নিতে, প্রশাসনের অংশ হতে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে। সেই সঙ্গে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করুন। আপনারা যদি অন্যদের ওপর নির্ভর না করে নিজেরা সংগঠিত হন, তাহলে এই শহরে এবং দেশের বৃহৎ পরিসরে আপনারা নিজেরাই একদিন ভাগ্যনিয়ন্তা হয়ে উঠবেন। আপনাদের কমিউনিটির সেই সামর্থ্য আছে।’
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বলেন, ‘আমি এই কমিউনিটিকে ভালোবাসি। আপনাদের মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, পরিবার ও বিশ্বাসকে সম্মান করি। আমি দেখেছি, কোভিড-১৯-এর কঠিন সময়ে আপনারা কীভাবে মানুষকে সাহায্য করেছেন, কীভাবে সিটিবাসীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আপনারা এই শহরের গর্ব।’ অনুষ্ঠানে কমিউনিটির স্বনামধন্য সংগঠক মীর বাশারের ভূয়সী প্রশংসা করে মেয়র বলেন, ‘মীর প্রকৃতপক্ষে এই কমিউনিটির প্রতিনিধি। তার মতো নেতৃত্বই বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।’
আজীবন বাংলাদেশিদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে মেয়র বলেন, ‘আপনারা এখন শুধু আমেরিকান ড্রিম অনুসরণ করছেন না, বরং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছেন। এই শহরকে ভালোবাসুন, একে শক্তিশালী করুন এবং নিজেরা আরও সংগঠিত হয়ে নেতৃত্ব দিন। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, আজীবন থাকব।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, সাইটেশনপ্রাপ্ত সাবেক সংসদ সদস্য ও ঠিকানা পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এম এম শাহীন, বিশিষ্ট রিয়েলটর-ইনভেস্টর নুরুল আজিম, অটিজম-সাপোর্ট অর্গানাইজেশনের নির্বাহী পরিচালক জয়া করিম ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট নুসরাত বাজলি।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা তার বক্তব্যে মেয়রকে ‘বাংলাদেশ হেরিটেজ ডে’ আয়োজনের জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আতাউর রহমান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী গ্রেসি ম্যানশনে ‘বাংলাদেশ হেরিটেজ ডে’ আয়োজনের সুযোগ দেওয়ায় মেয়র ও তার সহযোগীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
এরপর মেয়র অফিসের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মীর বাশার তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ‘বাংলাদেশ হেরিটেজ ডে’ আয়োজনে সহযোগিতার জন্য নিউইয়র্ক বাংলাদেশ সোসাইটি এবং নুরুল আজিমকে ধন্যবাদ জানান।
এবারের ‘বাংলাদেশ হেরিটেজ ডে’ অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরী পরিষদ ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছাড়াও বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঠিকানা টিভির সিইও খালেদ মুহিউদ্দীন, সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক ও গোল্ডেন এজ হোমকেয়ারের সিইও শাহ নেওয়াজ, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা সম্পাদক ও টাইম টিভির সিইও আবু তাহের, সাপ্তাহিক প্রথম আলোর সম্পাদক ইব্রাহিম চৌধুরী, রূপসী বাংলা সম্পাদক শাহ জে চৌধুরী, আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বারের চেয়ারম্যান গিয়াস আহমেদ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ফাহাদ সোলায়মান, আশা গ্রুপের আকাশ রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মুকিত চৌধুরী, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট কাজি আযম, কামরুল ইসলাম সনি, আব্দুর রশীদ বাবু, বক্সার সেলিম, আহসান হাবিব, খলিল বিরিয়ানি হাউসের খলিলুর রহমান, নূরে আলম জিকু, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ময়নুজামান চৌধুরী, হক অ্যান্ড সন্সের একেএম হক, ইউএস-বাংলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি লিটন আহমেদ, বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সভাপতি ডা. ইনামুল হক ও সহসভাপতি ইউনুস সরকার, রূপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাওলানা ফখরুল ইসলাম মাসুম ও সাবেক সভাপতি মামুন মিয়াজী, আবদুস সামাদ টিটু, বৃহত্তর খুলনা সোসাইটির প্রধান উপদেষ্টা ডা. মাসুদুর রহমান ও সভাপতি ওয়াহিদ কাজী এলিন, সৈয়দ এনায়েত আলী, কাজী তোফায়েল ইসলাম, রাব্বি সৈয়দ, আমিন মেহেদী বাবু, রিয়েলটর নাঈম টুটুল, নওশাদ হায়দার, প্রাইম হোমকেয়ারের মোহাম্মদ আলী তানভীর ও রেহানা সিদ্দিক, সাংস্কৃতিক কর্মী সবিতা দাস সুতার প্রমুখ।
পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মেহেদী হাসান।
অনুষ্ঠানে সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করে ম্যানহাটনের ওহ ক্যালকাটা রেস্টুরেন্ট ও জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন রেস্টুরেন্ট।


মুশরাত শাহীন


