Thikana News
১৪ মার্চ ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫
বর্তমান কমিটির দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে মসজিদের ভূমিদাতার উত্তরসূরি জিতুর মামলা

হবিগঞ্জের ‘ভাদৈ জামে মসজিদের’ নাম পরিবর্তনে ক্ষুব্ধ মুসল্লিরা

হবিগঞ্জের ‘ভাদৈ জামে মসজিদের’ নাম পরিবর্তনে ক্ষুব্ধ মুসল্লিরা ছবি সংগৃহীত
হবিগঞ্জ শহরতলির সুপ্রসিদ্ধ গ্রাম ভাদৈ। এই গ্রামে আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে ‘ভাদৈ জামে মসজিদ’ নামে সর্বপ্রথম একটি মসজিদ স্থাপিত হয়। গ্রামের বাসিন্দা প্রয়াত আনজব আলীর ওয়াক্ফকৃত ভূমিতে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। দীর্ঘ ছয় দশক ধরে গ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এই মসজিদে নামাজ আদায় করে আসছেন। অভিযোগ উঠেছে, বিগত দুই বছর আগে মসজিদ কমিটির বর্তমান দায়িত্বশীলরা মসজিদটির নাম পরিবর্তন করে ‘আল মদিনা জামে মসজিদ’ নামকরণ করেন। এ ঘটনায় মসজিদটির মুসল্লিরা চরম ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। তারা মসজিদের পূর্বের নাম বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে এই অভিযোগে গত বছরের ২০ মার্চ হবিগঞ্জের সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন মসজিদটির ভূমিদাতার উত্তরসূরি মো. সৈয়দ মিয়া জিতু। তিনি ভাদৈ গ্রামের বাসিন্দা ও গোপায়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত ইছাক মিয়ার ছেলে এবং ভূমিদাতা প্রয়াত আনজব আলীর নাতি। মামলায় বর্তমান আল মদিনা মসজিদের সভাপতি ও হবিগঞ্জ শহরের জিসান ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী মো. এম এ রাজ্জাক, সহসভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. রমজান আলী এবং সেক্রেটারি মো. মুকিত মিয়াকে আসামি করা হয়েছে। মামলা করার আগে সৈয়দ মিয়া জিতু গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি উল্লিখিত ব্যক্তিদের একটি আইনি নোটিশও পাঠান। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করায় জিতু আদালতের শরণাপন্ন হন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২০২১ সালের ৯ জুন মসজিদটি নতুনভাবে নির্মাণের পর উল্লিখিত আসামিরা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে ‘ভাদৈ জামে মসজিদের’ পরিবর্তে ‘আল মদিনা জামে মসজিদ’ নামকরণ করেন। এতে ভাদৈ গ্রামের সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তারা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না কেউ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ‘আল মদিনা জামে মসজিদ’ নামেই এটি উদ্বোধন করা হয়।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, উল্লিখিত মসজিদের পাশে ‘আল মদিনা একাডেমি’ নামে একটি বাণিজ্যিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার পরিচালনায় রয়েছেন এম এ রাজ্জাক, মো. রমজান আলী ও মো. মুকিত মিয়া। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় নিজেদের বাণিজ্যিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামেই মসজিদের নামকরণ করেন। পরবর্তী সময়ে এই প্রভাবশালীরা মসজিদটিকে আল মদিনা একাডেমির সম্পদ হিসেবে দাবি করতে পারেন বলে গ্রামবাসীর আশঙ্কা।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, এই মামলার বাদী সৈয়দ মিয়া জিতু ২৮ পঞ্চায়েত হবিগঞ্জ দক্ষিণের ১ নং বার পঞ্চায়েতের তালিকাভুক্ত একজন সদস্য হওয়া সত্ত্বেও এবং তার পরিবারের ওয়াক্‌ফকৃত ভূমিতে ভাদৈ জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হলেও কৌশলে তাকে মসজিদ পরিচালনা কমিটিতে রাখা হয়নি।

মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, ৬০ বছর পূর্বে ভাদৈ গ্রামে কোনো জামে মসজিদ ছিল না। তবে জুম্মাঘর নামে পরিচিত একটি নামাজের স্থান ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুসল্লিসংখ্যা বাড়ায় একটি বড় মসজিদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন গ্রামবাসী। এরপর এই মামলার বাদীর দাদা হাজী আনজব আলী ভাদৈ জামে মসজিদের নামে দুই দাগে মোট ১৪ শতক ভূমি মৌখিকভাবে ওয়াক্‌ফ করে দেন। পরে ১৯৯০ সালে তার ওয়ারিশগণ তা দলিল করে দেন। এরপর গ্রামবাসীর অর্থায়নে পাকা ছাদবিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যার নাম ‘ভাদৈ জামে মসজিদ’। ওয়ারিশগণের দেওয়া দলিলে উল্লেখ করা হয়, ওয়াক্‌ফকৃত ভূমির সার্বিক দায়িত্ব অর্পণ করা হলো ভাদৈ জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লির ওপর। মোতাওয়াল্লি ব্যতীত ওয়াক্‌ফকৃত ভূমিটি অন্য কেউ ভোগ, রক্ষণাবেক্ষণ, তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা করতে পারবে না।

মামলা ও আইনি নোটিশ সম্পর্কে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আফরোজ মিয়া (আফগান) জানান, প্রায় ৬০ বছর আগে ভাদৈ জামে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ভাদৈ জামে মসজিদ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সময়ে কমিটি পরিবর্তন হয়েছে। তবে মসজিদের নাম পরিবর্তন করা হয়নি। বর্তমান সভাপতি মো. এম এ রাজ্জাক, সহসভাপতি মো. রমজান আলী ও সেক্রেটারি মো. মুকিত মিয়া মসজিদ পরিচালনা কমিটিতে নিজেদের লোকদের স্থান দেন। গ্রামের মান্যগণ্য অনেক ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা হয়নি।

এ ব্যাপারে ভাদৈ গ্রামের মুসল্লিরা জানান, আমাদের গ্রামের নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখা হয়েছিল। আল্লাহর ঘর মসজিদের সঙ্গে আমাদের গ্রামের নামটি যুক্ত ছিল। কিন্তু ব্যবসায়িক কারণে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আমাদের গ্রামের নাম কেটে দিয়েছেন, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

মামলার বাদী মো. সৈয়দ মিয়া জিতু বলেন, আমাদের পরিবারের দানকৃত ভূমির ওপর নির্মিত মসজিদের নাম বিশেষ উদ্দেশ্যে পরিবর্তন করেছেন প্রভাবশালীরা। বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসা করার চেষ্টা করলেও তারা সাড়া দেননি। তাই বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমি চাই, ঐতিহ্যবাহী ভাদৈ গ্রামের নামেই মসজিদটির নাম বহাল থাকুক। আমার বিশ্বাস, আদালতে সুবিচার পাব।

কমেন্ট বক্স