গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আত্মপ্রকাশ ঘটে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। দলটির হাল ধরেছেন জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে অন্যতম সংগঠক মো. নাহিদ ইসলাম। ওইদিন ১৭১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। চমক দেখিয়ে আত্মপ্রকাশ করা এনসিপি এরই মধ্যে দুই দফায় ২১৬ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে। তবে এ কমিটি আরও বর্ধিত করা হবে। তা ছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির ৪৩০-এর অধিক জেলা-উপজেলা কমিটি বিদ্যমান রয়েছে। কমিটিগুলো এনসিপির কমিটি হিসেবেই কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা জুলাই স্পিরিটকে ধারণ করে কেউ যোগ দিতে চাইলে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সংবিধান সংস্কার করে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে জোরালো বক্তব্য দেন দলের শীর্ষ দুই নেতা। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা মনে করি, জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াই সূচনা করেছে। একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে। সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, তরুণেরা স্বপ্ন দেখে আগামী বাংলাদেশ নতুন এক সংবিধানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। সেই স্বপ্ন নিয়ে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।
এই দুই শীর্ষ নেতার বক্তব্য স্পষ্ট বার্তা দেয়, দেশের বিদ্যমান সংবিধান সংস্কারের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন চায় তারা। তবে এনসিপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কার্যক্রম, সরকারের কাছে দাবি, জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোসহ বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, রোজার ঈদের পরই দলটির সাংগঠনিক গতিশীলতা বাড়ানো হবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠিত হবে। এর আগে দলটির সদস্য অন্তর্ভুক্তির কাজ শুরু হবে। অফলাইন ও অনলাইন দুভাবেই চলবে সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রম। দলটি ঈদের পরই ‘রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা’ প্রকাশ করবে। অ্যাজেন্ডায় ৩০ থেকে ৪০টি দফা থাকতে পারে। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নাগরিক অধিকার, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ থাকবে; যাতে এনসিপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে দেশের কী ধরনের পরিবর্তন আনবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকে। এরই মধ্যে রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। অ্যাজেন্ডা তৈরির কাজটি দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তদারক করছেন।
এনসিপির নেতারা জানান, তারা এখন দল নিবন্ধনের দিকে নজর দিয়েছেন। এ জন্য সারা দেশের ৩০টির মতো জেলা এবং দুই শতাধিক উপজেলায় সাংগঠনিক কমিটি, দলীয় কার্যালয় খুলবেন। প্রতি থানায় দুই শতাধিক ভোটারের সমর্থন পেপারস জমার কাজ করছেন। এ ছাড়া দলের গঠনতন্ত্র, লোগো এবং পতাকার ছবি, দলের তহবিলের উৎস, ব্যাংক হিসাব জমা দিতে কাজ করছেন। সব ঠিক থাকলে চলতি মাসের মধ্যেই তারা নিবন্ধনের সব কাজ শেষ করতে পারবেন। সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে কমিটিগুলো রয়েছে, তারাই আপাতত নতুন দলের পক্ষে কাজ করছেন।
এনসিপির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে এনসিপি। দলটিতে তারুণ্যের অগ্রাধিকার থাকলেও মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্র সাংগঠনিক দক্ষতা, জনপ্রিয়তাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। দলটিতে যোগ দেওয়ার জন্য অনেকেই যোগাযোগ করছেন। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন ব্যক্তিও রয়েছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ঈদের পরে সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির আকার বাড়ানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য গণপরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনের ক্ষেত্রে যদি মনে হয় আমাদের ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া প্রয়োজন বা সম্ভব, তাহলে আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেব। আবার সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রায়োরিটি হবে নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং গণপরিষদ নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়া।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের বিচার এবং জুলাই সনদ প্রকাশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই করতে হবে। জুলাই সনদ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সব দলের কাছে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু সুপারিশের সঙ্গে অনেকেই একমত। গণপরিষদ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না হলে এনসিপি কী করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে শারমিন বলেন, সংবিধান সংস্কার তো করতেই হবে। এখন সম্ভব না হলে আমাদের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডায় থাকবে। আমরা ঈদের পরই রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা প্রকাশ করব।
কোটা আন্দোলন দিয়ে শুরু। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত। বড় সাফল্যের পর রাজনীতির মাঠে তরুণ ছাত্ররা। তবে রাজপথে নবীন এই দল কতটুকু সফলতা পায়, সেটাই দেখার অপেক্ষায় রাজনৈতিক মহলসহ দেশবাসী।