Thikana News
১৩ মার্চ ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

পুরোনো পথেই নতুন দল

পুরোনো পথেই নতুন দল সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রত্যয়, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্য নিয়ে তারুণ্যের উচ্ছলতা-নির্ভর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটানো হয়েছে। এই দলের উদ্যোক্তারা নিজেদের মাতৃভূমি বাংলাদেশপন্থী দাবি করে বাংলাদেশে ভারতপন্থী, পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির ঠাঁই হবে না বলে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও পরিবারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে মেধার ভিত্তিতে মূল্যায়ন ও বিভেদের রাজনীতির বদলে ঐক্যের নীতি নিয়েছেন তারা।
সদ্য পদত্যাগী উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে আহ্বায়ক ও আখতার হোসেনকে সদস্যসচিব করে ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে, ছাত্ররাজনীতিতে অচেনা, জাতীয় রাজনীতিতে অজানা ও অনভিজ্ঞ তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল সমস্যাসংকুল দেশ ও জাতির নেতৃত্ব দেওয়ার আকাঙ্খা ব্যক্ত করেছে। এই তরুণদের দলের প্রতি দেশের মানুষের, বিশেষত ভোটারদের সমর্থন আছে কি না বা তারা সামনে সমর্থন সংগ্রহ করতে পারবে কি না-অনাগত দিনই তা বলবে। তবে অভাবনীয় শিক্ষার্থী-গণজাগরণের মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করে শুধু বাংলাদেশ বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়ই নয়, গণতান্ত্রিক বিশ্বে নজির স্থাপনকারী তরুণেরা আগামীতে নির্বাচন, জনসমর্থন সংগ্রহে সফল হবেন বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল আশা করেন। পাশাপাশি তাদের মধ্যে এ ভাবনাও কাজ করছে, তারুণ্যের উচ্ছলতা পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে। পাশাপাশি অভিজ্ঞতারও মূল্যায়ন জরুরি। অতি উচ্ছ্বাস, অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম বড় বিপর্যয়ও ডেকে আনতে পারে। এ ক্ষেত্রে তরুণদের নিদারুণ সীমাবদ্ধতা নিঃসংকোচ থাকার অবকাশও দিচ্ছে না।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্র-জনতার বিশাল সমাবেশে তরুণদের প্রাণকাড়া সুমিষ্ট শব্দচয়নের বক্তব্যে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার পাশাপাশি তাদের মনে বেশ কিছু প্রশ্নও জেগেছে। প্রথম কথাই হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ড, ঢাকার পাশের জেলাগুলো, উত্তরাঞ্চল-দক্ষিণাঞ্চলসহ প্রতিটি জেলা থেকে বাস, মিনিবাস, ট্রাক, লঞ্চে করে হাজার হাজার লোককে ঢাকায় আনা, বাড়ি ফেরা, খাবারের জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থ কে কারা সংগ্রহ করল। শিক্ষার্থীদের বিপুল এ অর্থের উৎস কী? প্রথম ও প্রধান এ জিজ্ঞাসার বিশ্বাসযোগ্য উত্তরের মাঝেই আরও কিছু জিজ্ঞাসার জবাব পাওয়া যাবে। দলটির পক্ষ থেকে গতানুগতিকভাবে দাবি করা হয়েছে, জনসাধারণই নাকি তাদের অর্থের জোগান দিয়েছে।
নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে। অধিকাংশ আসনে তারা প্রার্থীও ঠিক করে ফেলেছে। সংগঠনের প্রধান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের নেতা নাহিদ ইসলামকে আগামী প্রধানমন্ত্রী বলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাজনীতিতে বিএনপিকেই তারা মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছে। জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক ময়দানে অন্যতম শক্তি হলেও জামায়াত তাদের প্রধান মিত্রশক্তি। আগামীতে প্রয়োজনে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় আসন ভাগাভাগি করা এবং জোটবদ্ধভাবে সরকার গঠন, দেশ পরিচালনার পরিকল্পনাও স্থির করে রেখেছে। অপরাপর ইসলামি দলগুলোকেও সঙ্গে নেওয়ার পক্ষে তারা। কৌশলগত কারণে প্রাথমিক পর্যায়েই তারা এসব নিয়ে মুখ খোলা থেকে নিজেদের নিবৃত্ত রাখছে।
এনসিপির কমিটি গঠন নিয়ে শুরুতেই প্রকাশ্যে হাতাহাতি, মারামারির ঘটনা রাজনৈতিক মহলকে দুর্ভাবনায় ফেলেছে। এই ঘটনা মানুষকে হতাশ করেছে। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে তারা একই ভাষায় মোকাবিলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এই হিংসাশ্রয়ী প্রবণতা নিয়ে নিজেদেরকেই তারা কতটা সংহত করতে পারবেন, তা নিয়েও সংশয়-শঙ্কা রয়েছে।
আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে প্রাধান্য দিয়ে ছাত্রসংগঠনও গঠন করেছেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরম দৈন্যে দেশের পরিবর্তনপিয়াসী সাধারণ মানুষের কাছে রাজনৈতিক নেতৃত্বে গুণ ও মানগত পরিবর্তন গভীরভাবে প্রত্যাশিত ছিল। দুঃসহ জীবনযন্ত্রণা, নীতিহীন রাজনীতির নিষ্ঠুর শিকার এই জনগোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত সর্বাত্মক সমর্থন পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এখন রাজনৈতিক দল গঠন করে ক্ষমতালিপ্সা পূরণের দুর্মর আকাক্সক্ষা পূরণে সেই জনগোষ্ঠীর সক্রিয় সমর্থন শিক্ষার্থীরা পান কি না বা কতটা পান, তা পর্যবেক্ষণসাপেক্ষ। তবে দল গঠনপ্রক্রিয়ার সূচনাতেই তাদের মধ্যে যে হিংসাত্মক প্রতিযোগিতা দেখা গেল, তাতে রাজনৈতিকভাবে সচেতনরা  হতাশ হয়েছেন। তাদের মতে, দেশের রাজনীতির পুরোনো পথেই এগোচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি। পতিত আওয়ামী লীগ ও তার প্রধান সহযোগী জাতীয় পার্টিসহ বাম দলগুলোর বড় অংশ এবং এদের বাইরে থাকা ক্ষমতাপ্রত্যাশী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী তাদের কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
নবগঠিত রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে যারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তারা সবাই বয়সে তরুণ। অনেকে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন বা শিক্ষাজীবনের শেষ প্রান্তে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তারা কেউ পরিচিত নন। শিক্ষার্থীদের দুজন এখনো সরকারের উপদেষ্টা রয়েছেন। উপদেষ্টারা নানাভাবে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক ও ছাত্রসংগঠন সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে সংগঠিত করতে যথাযথ ভূমিকা রাখছেন। সরকারে অবস্থানরত দুই উপদেষ্টা ছাড়াও গোটা অন্তর্বর্তী সরকারই শিক্ষার্থীদের সৃষ্ট। স্বভাবতই তারা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা দিচ্ছেন, দেবেনও বলে শিক্ষার্থীরা আশা করেন।
বৈষম্যবিরোধীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয় তাদের জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহের নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবির ঘটনায়। জিয়াউর রহমান, এরশাদ-সবাই আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের রাজনৈতিক দল গঠন করেন। শিক্ষার্থীরাও তাদের মনোনীত সরকারকে ক্ষমতায় রেখে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান গড়ে তুলছেন এবং শক্তিশালী করছেন।
একই প্রক্রিয়ায় বিএনপিরও জন্ম হয়েছিল। তারা জানে, এই প্রক্রিয়ায় স্থানীয় নির্বাচন ও দল গঠন করতে দিলে বা দল গঠিত হলে তার ক্ষতিকর প্রভাব-প্রতিক্রিয়া তাদের ওপরই বর্তাবে। তাই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রবল বিরোধী। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধীরা অল্প সময়ের মধ্যেই স্থানীয় সরকার সংস্থাসমূহের নির্বাচন করিয়ে নেবে বলে অনেকে মনে করেন। নিজেদের সংহত রাজনৈতিক অবস্থানের মাধ্যমে তারা নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন বা ক্ষমতার নিয়ামক হবেন। এতে করে স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধীদের যাবতীয় কার্যক্রম ক্ষমতাকেন্দ্রিক। বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতের মতো দলের বিপরীতে জনমত তাদের পক্ষে পাওয়ার ব্যাপারে তারা আশাবাদী। তাদের কার্যক্রম দিয়ে জনসমর্থন লাভের পথে না গিয়ে জন্ম হওয়ার আগেই তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

কমেন্ট বক্স