Thikana News
২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মেক্সিকো সীমান্তে আটকা বহু হতভাগ্য বাংলাদেশি

মেক্সিকো সীমান্তে আটকা বহু হতভাগ্য বাংলাদেশি সংগৃহীত
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন ক্র্যাকডাউনে অনেকেরই স্বপ্ন তছনছ হয়ে গেছে। আতঙ্কে দিন কাটছে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের। সাউদার্ন বর্ডারে অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত চারজন বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইস)। ট্রাম্প প্রশাসন যখন কঠোরতম অবস্থানে তখন মেক্সিকো-গুয়েতেমালা সীমান্তে অপেক্ষমান আমেরিকার স্বপ্নে বিভোর বহু বাংলাদেশি। 
সূত্র জানায়, মেক্সিকো সীমান্তে বাংলাদেশি যারা আমেরিকায় ঢোকার চেষ্টায় অপেক্ষা করছে, তাদের সংখ্যা কমপক্ষে দেড়শ হবে। তাদের বয়স ১৬ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত। তিন থেকে সাড়ে তিন মাস আগে দালালের মাধ্যমে প্রায় ১৫টি দেশ পাড়ি দিয়ে মেক্সিকো-গুয়েতেমালার তাফাচুলা সীমান্তে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত অধিক সুরক্ষিত থাকার কারণে তাদের সেখানেই মানবেতর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। না পারছে তারা বাংলাদেশে ফিরে যেতে, না পারছে আমেরিকায় ঢুকতে। কারণ দালালদের সঙ্গে চুক্তি করেই এসব বাংলাদেশি এ পর্যন্ত এসেছে। বরং দেশে ফিরে যাওয়াটা তাদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। 
একাধিক সূত্র জানায়, দেড়শ বাংলাদেশির মধ্যে বেশিরভাগই মেক্সিকো-গুয়েতেমালার তাফাচুলা সীমান্তে অপেক্ষা করছে। সেখানে তারা মানবেতন জীবনযাপন করছেন। 
জানা গেছে, দালালের পরামর্শ অনুযায়ী বাংলাদেশিরা মেক্সিকো-গুয়েতেমালার তাফাচুলা সীমান্তের কাছে সীমান্তরক্ষীদের কাছে আত্মসমর্পন করছেন। দেশটির আইন ভঙের কারণে তাদের ১৫ দিন ডিটেনটশন সেন্টারে রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মুক্তির পরও তারা সীমান্ত ছাড়ছেন না। কারণ দেশটির পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তাদের বহিস্কার করার আশঙ্কাই বেশী। গত তিন মাসে তারা গুয়েতেমালার বিভিন্ন সীমান্তের ডিটেনশন সেন্টারে পালাক্রমে আটক থাকছেন। তবে ডিটেনশন সেন্টারের বাইরের জীবন তাদের জন্য ভয়ঙ্কর এবং কঠিন মানবেতর। 
বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫টি দেশ পাড়ি দিয়ে চার মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে আসা নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির সন্তান শাহেদ আলী (ছদ্মনাম) জানান, তাকেও ৩-৪ মাস বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবন কাটাতে হয়েছে। চরম এক অনিশ্চয়তায় জীবন কেটেছে তার। তারপরও দেশে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। এই পথটি একপ্রকার একমুখী। এসময় বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের সাথে তার দেখা হয়েছে।
তিনি জানান, দালালকে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে তিনি আমেরিকায় এসেছেন। রাজনৈতিক কারণে দেশেও তার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এ কারণে ফসলি জমি বিক্রি করে এবং জমানো টাকা দালালের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, এখন আমেরিকা আসতে দালালরা সর্বনিম্ন ৪৫ লাখ টাকা নেয়। যে যত টাকা দেবে সে তত কম ঝুুঁকিতে আমেরিকায় যাবে। তবে এখন সীমান্ত কড়া নিরাপত্তায় থাকায় যারা আটকা পড়েছে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। 
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের তরুণ আহমেদ (ছদ্মনাম) জানান, তিনি এক বছর হলো আমেরিকায় এসেছেন। আসার পরই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। তার আশ্রয়ের আবেদনও গৃহীত হয়েছে। প্রথম ছয় মাস বেকার ছিলেন। ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পর এখন ফুড ডেলিভারির কাজ করছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ পাড়ি দিয়ে যতটা ঝুঁকি নিয়ে আমেরিকা এসেছি, তা কেউ আগে বুঝলে এ দেশটিতে আসতো না। 
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা আমার রুট সম্পর্কে আহমেদ জানান, বাংলাদেশ থেকে দালাল চক্র প্রথমে নিয়ে যায় ভারত, এরপর মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই ও কাতারে। এরপর পর্যায়ক্রমে তুরস্ক, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, পেরু, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, পানামা, কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস, গুয়েতেমালা হয়ে মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে। এরপর সুযোগ বুঝে আমেরিকায়। 
যারা এই পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসেন তাদের বেশিরভাগই নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের। কিছু আছে বৃহত্তর সিলেটের, জানান আহমেদ। 
একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ কড়াকড়ি হলেও দালালরা আদম পাচারে থেমে নেই। তারা নানাভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকানোর  প্রলোভন দিচ্ছে। এক্ষেত্রে এখন আর তারা সময় বেধে দিচ্ছে না। দালালরা আরো প্রলোভন দিচ্ছে- ট্রাম্পের এই কড়াকড়ি বেশীদিন থাকবে না। তখন তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারবে। দালালরা এটাও বলার চেষ্টা করছে যে এর আগেও ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকতে সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছিল। তখনো অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা অব্যাহত ছিল। তবে এবারের মেয়াদে অবৈধ অভিবাসীদের রুখতে ইমিগ্রেশন ক্র্যাকডাউন ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। মেক্সিকো সরকারকেও চাপে রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে আমেরিকায় ঢোকার চেষ্টা জীবনের ঝুঁকি ছাড়া আর কিছু নয়। 
 

কমেন্ট বক্স