মেয়র এরিক অ্যাডামসের দুর্নীতির মামলা বাতিল নিয়ে বিতর্কের জেরে পদত্যাগ করলেন নিউইয়র্ক সিটির চার ডেপুটি মেয়র। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তারা। এর আগে বিভিন্ন সময় পদত্যাগ করেন প্রসিকিউটর ও ছয় জন আইনজীবী। সম্প্রতি নিজের দুর্নীতির অভিযোগ খারিজের বিনিময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের হাতে অভিবাসীদের তুলে দিয়ে সমঝোতা করার অভিযোগ ওঠে অ্যাডামসের বিরুদ্ধে। সিটি হলের সামনে সোমবারও মেয়রের পদত্যাগ দাবিতে গভর্নর ক্যাথি হোকুলের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। মেয়র অ্যাডামস জানিয়ে দিয়েছেন, পদত্যাগের কোনো পরিকল্পনা নেই তার।
এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির অভিযোগ জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট খারিজ করে দেয়ার পর, নতুন করে চাপের মুখে পড়েন মেয়র। বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে, সোমবার তার চার ডেপুটি মেয়র পদত্যাগ করেন। পদত্যাগকারীরা হলেন, ফার্স্ট ডেপুটি মেয়র মারিয়া টরেস স্প্রিনজার, ডেপুটি মেয়র ফর হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস অ্যান উইলিয়ামস-ইযম, ডেপুটি মেয়র ফর অপারেশন্স মীরা যোশী, এবং পাবলিক সেইফটি বিষয়ক ডেপুটি মেয়র চন্সি পার্কার।
তবে কবে থেকে তাদের পদত্যাগ কার্যকর হবে তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। প্রতিক্রিয়ায় মেয়র অ্যাডামস বলেন, নির্বিঘ্নে ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করতে ডেপুটি মেয়ররা আপাতত তাদের ভূমিকা পালন করবেন। নিজ স্বার্থে ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ডার যার টম হোম্যানের সাথে অভিবাসী বিষয়ে সমঝোতায় গেছেন মেয়র অ্যাডামস। এমন দাবি করে সোমবারও সিটি হলের সামনে অ্যাডামসের পদত্যাগ বা তাকে অফিস থেকে সরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, নিজের মামলা প্রত্যাহারের জন্য, সিটির বাসিন্দাদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে জিম্মি করেছেন অ্যাডামস। সিটি হলের সামনে মেয়র অ্যাডামসকে সরিয়ে দিতে গভর্নর ক্যাথি হোকুলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি ভোটাররা ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনলেও এখন তারা অন্য কাউকে এই পদে দেখতে চাচ্ছে। তবে মেয়র জানিয়ে দিয়েছেন, পদত্যাগের কোনো পরিকল্পনা নেই তার। অ্যাডামস মনে করেন, সিটির সিংহভাগ মানুষ এখনো তার সমর্থনে আছেন।
আইস’কে রাইকারস আইল্যান্ডে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার বিপরীতে হোম্যানের সাথে সমঝোতায় গেছেন মেয়র এরিক অ্যাডামস, এমন দাবিতে সমর্থন জানিয়ে ইতোমধ্যে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন প্রসিকিউটরও পদত্যাগ করেছেন।তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ডার যার টম হোম্যান।
এদিকে নিউইয়র্ক সিটির সাবেক মেয়র বিল ডি ব্ল্যাযিও মনে করেন, ট্রাম্প নিউ ইয়র্ক সিটির ক্ষতি করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে মেয়র অবস্থান নেবেন, সিটির বাসিন্দাদের এমনটা নিশ্চিত করতে না পারলে অ্যাডামসের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পরতে পারে।
তবে অ্যাডামসের বিরুদ্ধে খারিজ করা দুর্নীতির মামলাটিকে দুর্বল বলে মনে করেন ব্ল্যাজিও। বর্তমানে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন সাবেক এই মেয়র।
এদিকে আইস’কে রাইকারস আইল্যান্ডে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার বিপরীতে হোম্যানের সাথে সমঝোতায় গেছেন মেয়র এরিক অ্যাডামস, এমন দাবিতে সমর্থন জানিয়ে ইতোমধ্যে জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের কয়েকজন প্রসিকিউটরও পদত্যাগ করেছেন। তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ডার জার টম হোম্যান।
এদিকে এ সপ্তাহের শুরুতে বন্ডির ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমিল বোভে ম্যানহাটনের ফেডারেল প্রসিকিউটরদের অ্যাডামসের বিরুদ্ধে মামলা বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
উল্লেখ, অ্যাডামস গত বছর জালিয়াতি ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। অ্যাডামসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কিছু সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে তুরস্কের নাগরিকদের কাছ থেকে এক লাখ ডলারের বেশি মূল্যের উপহার গ্রহণ করেছিলেন। তবে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। বোভে যুক্তি দেন যে, অ্যাডামসের বিরুদ্ধে মামলাটি মেয়রের অবৈধ অভিবাসন এবং সহিংস অপরাধ মোকাবেলা করার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করেছে - যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল নীতি।
বোভে এবং বিচার বিভাগের দুইজন আইনজীবী স্বাক্ষরিত মামলা খারিজের আবেদনে বলা হয়, ‘এই মামলা চলমান থাকলে তা জননিরাপত্তা, জাতীয় নিরাপত্তা এবং ফেডারেল অভিবাসন নীতির জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে।’
তবে বিচার বিভাগের অনেক কর্মকর্তা বিশেষ করে ম্যানহাটনের প্রধান প্রসিকিউটর ড্যানিয়েল সাসুন এই সিদ্ধান্তকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। সাসুন গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন, এবং তার ছয়জন সহকর্মীও তাকে অনুসরণ করেন। তিনি বলেন, ‘মামলাটি খারিজ করা একটি অতিশয় ও বিপজ্জনক নজির।’
সাসুন তার পদত্যাগপত্রে দাবি করেন, অ্যাডামসের আইনজীবীরা বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ‘কুইড প্রো কুয়ো’ (লেনদেনমূলক চুক্তি) প্রস্তাব দিয়েছেন, যেখানে বলা হয় যে মামলাটি খারিজ করা হলে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রয়োগে সাহায্য করবেন।
তবে ডেমোক্র্যাট অ্যাডামস এই দাবি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি নিউইয়র্কবাসীকে স্পষ্টভাবে জানাতে চাই: আমি কখনো- কিংবা আমার পক্ষে কেউ- আমার ক্ষমতার বিনিময়ে মামলাটি বন্ধ করার কোনো প্রস্তাব দেইনি। কখনো না।’
১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার এক বিবৃতিতে অ্যাডামস দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে তদন্তটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এটি তার সমালোচনামূলক অবস্থানের কারণে করা হয়েছে। কারণ তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিবাসন নীতির সমালোচনা করেছিলেন।
অ্যাডামস ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এবং ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে প্রবেশের কয়েকদিন আগে ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এদিকে, ট্রাম্প কোনোভাবে মামলাটি খারিজ করার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে বোভে তার চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে, মামলাটি খারিজ করার নির্দেশ নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সরাসরি নীতি বাস্তবায়নের অংশ।