Thikana News
০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
অন্তর্বর্তী না তত্ত্বাবধায়ক

কার অধীনে জাতীয় নির্বাচন?

কার অধীনে জাতীয় নির্বাচন? ছবি: সংগৃহীত
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কার অধীন অনুষ্ঠিত হবেÑবর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায়? রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। আগে হবে কোন নির্বাচনÑজাতীয় সংসদ নাকি স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন, এ নিয়েও      প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের পারস্পরিক ভিন্নমত রাজনৈতিক অঙ্গনে সংশয় ও শঙ্কার জন্ম দিচ্ছে। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি চলতি বছরের মাঝামাঝি অর্থাৎ জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাচ্ছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর প্রচণ্ড বিরোধী। সবার আগে সংস্কার, তারপরই নির্বাচন চায় তারা। অন্যতম রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামী সংস্কারও চায়, নির্বাচনও চায়। তারা মনে করে, সব সংস্কার এখনই অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক সম্পাদনের প্রয়োজন নেই। জামায়াতে ইসলামীর জেনারেল সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পারওয়ার সাংবাদিকদের বলেছেন, সংস্কার করতে গিয়ে নির্বাচন দীর্ঘায়িত করা সমীচীন হবে না। জরুরি সংস্কারসমূহ ছয় মাসের মধ্যেই সম্পাদন করা সম্ভব। তার পরই হবে জাতীয় নির্বাচন। জামায়াতে ইসলামী চলতি বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন চায়।
অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিশাল পরিবর্তন আনয়নকারী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি মনে করে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার পরিপন্থী হবে। তাদের দাবি, কেবল ক্ষমতার পালাবদলের জন্য তারা গণ-অভ্যুত্থান সংগঠিত করেনি; রাজনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় সংস্কার, পরিবর্তনের ছোঁয়া যদি না-ই আসে, তাহলে কী লাভ হলো সহস্রাধিক জীবনের আত্মদানের ইতিহাস সৃষ্টিকারী ঘটনায়। তা কি শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা হবে না? বৈষম্যবিরোধীদের গভীর সংশয়-সন্দেহ, নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীনরা সংস্কার বলতে তেমন কিছু করবে না।
বিশ্বাস, সংশয়-সন্দেহের দোলাচলে দেশের রাজনীতি, রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। ক্ষমতাপ্রত্যাশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি ও জামায়াত এবং বৈষম্যবিরোধীদের বিপরীত অবস্থান পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে ইউএনডিপি বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চেয়েছে। জাতিসংঘের আবাসিক কার্যালয়ের সমন্বয়কারী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে কারিগরি সব রকম সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। জাতিসংঘের এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল আগামী মাসেই ঢাকায় আসবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে, তা বড় প্রশ্ন হয়ে আছে। ড. ইউনূস অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে সুন্দর, ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য, প্রশংসনীয় নির্বাচন করে ইতিহাস করতে চান। কিন্তু তাকেও বেশ কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের তিন শীর্ষ নেতা সরকারের উপদেষ্টা। বৈষম্যবিরোধীরা নির্বাচনে অন্যতম অংশীদার এবং নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রত্যাশী। তাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেও। তিনি নিজে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আর দৃশ্যত জড়িত হচ্ছেন না। যদিও বিগত সেনা-সমর্থিত ওয়ান ইলেভেনের পর তিনি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন প্রকাশ্যেই। এ পর্যায়ে তেমন প্রকাশ্য তৎপরতা দেখা না গেলেও তাকে যারা ক্ষমতায় বসিয়েছেন, তারা নির্বাচন করছেন। ৩০০ আসনেই তারা প্রার্থী দেবেন। আগামীতে বৈষম্যবিরোধীরা নির্বাচিত হলে বা বিএনপি-জামায়াতও বিজয়ী হয়ে যৌথভাবে ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্থানে বঙ্গভবনে বসাবেন, তার নিশ্চয়তা কোথায়। তবে এটা বলাই যায়, আগের মতো প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতা, সংগঠন সৃষ্টিতে উদ্যোগী ভূমিকায় দেখা না গেলেও ড. ইউনূস রাজনীতিতেই আছেন এবং তাকে কেন্দ্র করে আগামী দিনের রাজনীতি আবর্তিত হবে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। কারণ কয়েকজন সাবেক আমলা, অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এই অন্তর্বর্তী সরকারে থাকলেও এই সরকারের চরিত্র রাজনীতি-বহির্ভূত বলার সুযোগ নেই। অপরদিকে সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশ দিয়েছেন। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্য তারা তা দাবিও করে না। অথচ এই সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হলেই বাধা আসবে। জামায়াত নমনীয় অবস্থান নিলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা তা মেনে নেবেন না। অবিশ্বাস প্রকট আকারেই রয়েছে তাদের মধ্যে। বৈষম্যবিরোধীরা রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক তৎপরতা না চালালেও বিএনপির নেতাকর্মীসহ সাধারণভাবেও অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন, সংশয়-শঙ্কা থাকবে।
অন্যদিকে আরেক প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, সরকার জাতীয় নির্বাচন আগে করবে নাকি স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠান অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য জরুরি। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন সবগুলো সংস্থা ভেঙে প্রশাসক বসানো হয়েছে। উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদ মেয়াদোত্তীর্ণ নয়। তবে সরকার চাইলে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ছয় মাস পূর্বে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারে। বিএনপি-জামায়াতসহ কোনো রাজনৈতিক দলই তা চায়নি। তারা সবার আগে জাতীয় নির্বাচন চায়। ব্যতিক্রম হচ্ছে বৈষম্যবিরোধীরা। সর্বাগ্রে স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনের মাধ্যমে তারা সারা দেশে তাদের সাংগঠনিক অবস্থানের মাধ্যমে শক্তিশালী রাজনৈতিক-সাংগঠনিক ভিত গড়ে তুলতে আগ্রহী। বৈষম্যবিরোধীরা ও তাদের জাতীয় নাগরিক কমিটি মহানগর, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে দ্রুত সংগঠন গড়ে তোলার কাজ করছে। দলের নাম চূড়ান্ত না করেই তারা রাজনৈতিক ভিত ও নেতৃত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
আভাস পাওয়া গেছে, এ বছরের শেষ ভাগে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রায় পৌনে পাঁচ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করা হবে কয়েক দিনে। স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে নির্বাচনী আবহ তৈরি করাই সরকারের উদ্দেশ্য। এই নির্বাচনের পরপরই আগামী বছরে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে নীতিনির্ধারকেরা। অবশ্য স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হবে। তার আগে এ মাসের মধ্যে কমিশনগুলো সরকারের কাছে তাদের রিপোর্ট দেবে। এসব রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা এবং জাতীয় সরকার, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় সরকার একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা করবে। তার ভিত্তিতেই স্থির করা হবে কোন নির্বাচন আগে এবং কখন করা হবে।
 

কমেন্ট বক্স