এবারও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চূড়ান্ত ফয়সালা ভারতের হাত দিয়েই হবে-এ অপেক্ষায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিশ্ব বাস্তবতার তোড়ে ভারত এবার বাংলাদেশে ২০০৮, ১৪, ১৮ সালের মতো ওপেন হতে পারবে না-এমন গুঞ্জনে আশাহত নয় সরকার। এ-সংক্রান্ত কিছু সিগন্যাল তারা প্রাপ্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব হালনাগাদে মহাতৎপর থাকলেও শেষতক ফাইনাল রাউন্ডটা ভারতই খেলবে বলে আভাস আছে তাদের কাছে। সেই আশা-ভরসা পাচ্ছে দিল্লি সফররত আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলটি।
ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারির সঙ্গে তাদের বৈঠক বেশ ফলপ্রসূ। বিজেপির বিভিন্ন উচ্চপদস্থ নেতা এবং থিঙ্কট্যাঙ্কদের সঙ্গেও বৈঠক করছেন। বিজেপির কাছে তাদের মূল বার্তা হচ্ছে, বিএনপি কোনোমতে ক্ষমতায় এলে ভারত নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় পড়ে যাবে। বিজেপির সভাপতি জগত প্রকাশ নাড্ডা কথা দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে চায় বিজেপি। এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতার জন্য তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী তারা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয় শংকরের সঙ্গে বৈঠকেও একই ধরনের সায় মিলেছে। 
আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতার বৈঠক শেষ হওয়ার পরপরই ভারত সফরে যাবেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এর নেতৃত্ব দেবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তারাও বৈঠক করবেন বিজেপির বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে। এ ছাড়া জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে ৮ সেপ্টেম্বর ভারতে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার সাফল্য হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয়দের সমর্থনে এক দফা আন্দোলনে একতরফা কিছু হওয়ার পথ রুখে দেবে ভারত। ফাইনাল খেলাটা যথাসময়ে খেলবে ভারতই। বিএনপির জন্য সেটা আশঙ্কার বার্তা।
ভারতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন। ভারতের চোখে বিএনপি এ পথে বাধা। আর সহায়ক আওয়ামী লীগ। যার প্রমাণ গত ১৫ বছর বাংলাদেশে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জায়গা হয়নি। এটি ভারতের জন্য স্বস্তির। এ স্বস্তি বলবৎ রাখতে বিজেপি সরকারের কাছে আওয়ামী লীগ বিশ্বস্ত। এ বিশ্বস্তার অনুভূতি কংগ্রেসেরও। বিএনপির দিক থেকে তাই ভারতের বিশ্বস্ত হওয়ার একটি চেষ্টা চলছে নতুন মাত্রায়। পাশাপাশি চলছে অক্টোবরকে সামনে রেখে নানা প্রস্তুতি। ওই সময় ঢাকায় থাকবে একটি হাইপ্রোফাইলের মার্কিন প্রতিনিধি দল। এ সময় বিএনপির আন্দোলনটি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকাকে ঘিরেই বিএনপি সব আন্দোলনের কৌশল তৈরি করছে। অক্টোপাসের মতো আট বাহুতে সরকারকে কাবু করার ঘোর আশা তাদের। সরকার অক্টোবরে আর আগের মতো সুবিধা করতে পারবে না বলে হিসাব তাদের।
তাহলে যুক্তরাষ্ট্র বসে থাকবে? চেয়ে চেয়ে দেখবে? অথবা আবারও ভারতের চশমা দিয়ে বাংলাদেশকে দেখবে? বৈশ্বিক ও ভূ-রাজনীতিসহ নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবার বাংলাদেশ প্রশ্নে যে পর্যায়ে চলে এসেছে, সেখান থেকে ব্যাক করার অবস্থা নেই। বরং যুক্তরাষ্ট্রের ঘড়ি-চশমায় এবার বাংলাদেশকে দেখা লাগতে পারে ভারতের। ঢাকার কূটনীতিক পাড়ায় এ নিয়ে অনেক সমীকরণ। গুঞ্জনও প্রচুর। ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবার নতুন ফখরুদ্দীন ঠিক করে ফেলেছে বলে গুঞ্জনও আছে। যার ছাপ দেখা যাবে অক্টোবরে। সেই তুলনায় ঢাকার রাজনীতির বাতাস এখনো স্বচ্ছ। বিষয়টি কেবল রাজনৈতিক নয়। রাজনীতি একটা অনুষঙ্গ মাত্র। স্ট্র্যাটেজিক ইস্যুগুলোই মুখ্য। সেটা সফল করতে রাজনীতিকে টুলস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশীয় রোগের পুরো চিকিৎসা চলে গেছে বিদেশি ডাক্তারদের হাতে। ডেটলাইন ঠিক না হলেও সব পক্ষই ছক অনুযায়ী শক্তি জোগাচ্ছে। সুড়ঙ্গে ঢুকিয়ে ফেলা হয়েছে বাংলাদেশকে। বানিয়ে দেওয়া হয়েছে আইসিইউর রোগী। কেউ গভীর পর্যবেক্ষণ করছে। কেউ করছে নিবিড় পর্যবেক্ষণ। সুড়ঙ্গ বা আইসিইউ থেকে চাইলেই বের হওয়ার উপায় থাকে না রোগীর।
এদিকে একে একে খুলে যেতে বসেছে সরকারের দুর্নীতির প্যান্ডোরার বাক্স। এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া সিঙ্গাপুরে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যসহ বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিকানার অভিযোগ তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হল-মার্ক, সোনালী ব্যাংক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, সামিট ছাড়াও রূপপুর, পায়রা বন্দরের লুটপাটসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির ফাইলপত্র নাড়াচাড়া হচ্ছে নতুন ছকে। মন্ত্রী- এমপি-সচিবসহ ক্ষমতাধরদের শত শত কোটি টাকা তছরুপের নতুন নতুন ঘটনার সিরিজও প্রস্তুত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি দুর্বলতা এবং চলমান-ঘটমান বড় বড় দুর্নীতির সুযোগটাই নিচ্ছে বড় দেশগুলো। ঠিক এ রকম সময়ে তুলনামূলক কম আওয়াজে বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ। মার্কিন স্যাংশনকে দুর্নীতি দমনের হাতিয়ার মন্তব্য করে বিশেষ বিশেষ মহলকে লাল বার্তা দিয়ে গেছেন তিনি। রিচার্ড নেফিউ কাজ করেন বৈদেশিক সহায়তায় দুর্নীতি মোকাবিলা নিয়ে। গত ৫ জুলাই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন তাকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের গ্লোবাল অ্যান্টি-করাপশন কো-অর্ডিনেটর হিসেবে নিযুক্ত করেন। ঢাকায় এসে তিনি কথা বলেছেন দুদক কর্মকর্তাসহ একেবারে নির্দিষ্ট কয়েক জায়গায়। যতটুকু বলার বলে গেছেন। বাকি থাকছে করণীয়। বাংলাদেশের দুর্নীতিগ্রস্তদের জন্য যা হতে পারে মহাবিপদের। টাইমলাইনটাও কাছাকাছি।
 
                           
                           
                            
                       
     
  
 

 ঠিকানা রিপোর্ট
 ঠিকানা রিপোর্ট  
                                
 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                 
                                                     
                                                
