নিউইয়র্কে বয়স্ক মানুষদের অনেকেরই পরিবারে যত্নআত্তি ও সেবাযত্ন আগের তুলনায় বেড়েছে। এর পেছনে বেশির ভাগ পরিবারে বাবা- মায়ের প্রতি সন্তানের সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মমত্ববোধ কাজ করে। অনেক পরিবারেই বয়স্ক মানুষেরা এই সেবাযত্ন পাচ্ছেন, কারণ এখন বয়স্ক মানুষেরা হোম কেয়ার সেবা পাচ্ছেন। হোম কেয়ারের বদৌলতে সন্তানেরা কিংবা পুত্রবধূরা সেবা করার মাধ্যমে অর্থ আয় করছেন। এ জন্য আগে যে বয়স্ক মানুষটি অনেক সংসারের বোঝা ছিলেন, সেই মানুষটি এখন আর বোঝা নন। এখন অনেক আদরের ও যত্নের। তাকে দেখাশোনা করার জন্য সংসারে বাড়তি কিছু অর্থ আসছে। বয়স্ক মানুষের জন্য যে অর্থ খরচ হচ্ছে, তার বেশি অর্থ হোম কেয়ার থেকে আসছে। যেসব বয়স্ক মানুষের জন্য বেশি ঘণ্টা পাচ্ছেন ছেলেমেয়েরা, তাদের বেশ ভালো অর্থ আসছে। ৪০ ঘণ্টা অথবা এর চেয়ে বেশি ঘণ্টাও কাজের সুযোগ রয়েছে।
আবার বয়স্ক মানুষের পরিবারের যে সদস্য তাকে দেখাশোনা করছেন, তিনি ছেলে, মেয়ে, ছেলের বউ, মেয়ের জামাই অথবা পরিবারের অন্য কোনো সদস্য হলে এবং তারা একই ঠিকানায় বসবাস করলে হোম কেয়ার খাত থেকে তারা আয়ের অর্থ ট্যাক্স মওকুফ সুবিধাও পেয়ে থাকেন। আলাদা বাসায় বা আলাদা ঠিকানায় থাকলে ট্যাক্স মওকুফ সুবিধা মেলে না। হোম কেয়ার পাওয়ার পর যারা মিলেমিশে একসঙ্গে থাকছেন ও মানিয়ে নিচ্ছেন, তাদের সমস্যা হচ্ছে না। তবে যারা মানিয়ে নিতে পারছেন না, সেখানে প্রতিনিয়িমত বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে।
জানা গেছে, হোম কেয়ার পাওয়া মানুষদের অনেকেরই ভোগান্তি হচ্ছে। কারণ হোম কেয়ারের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ তারা সংসারে ব্যয় করলেও যার জন্য অর্থ পাচ্ছেন, সেই বয়স্ক ব্যক্তিটির যথাযথ সেবা হচ্ছে না। মাঝে মাঝে অবস্থা এমন হয়, ঘরেও তাকে রাখা যাচ্ছে না, বাইরে রাখতে হচ্ছে। এমনই একটি ঘটনা সম্প্রতি জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নিউইয়র্কের একজন বয়স্ক মা এখানকার সিনিয়র সিটিজেনের সমবয়সী। বয়স বেশি হওয়ার কারণে তিনি অনেক কিছুই নিজে নিজে করতে পারেন না। এ রকম অবস্থা দেখিয়ে হোম কেয়ার সেবা নিচ্ছেন তার পরিবারের এক সদস্য। তারা দেখাচ্ছেন যে একই ঠিকানায় থাকেন কিন্তু এখন স্ত্রীর কারণে তার মাকে বাসায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তাকে বাসা থেকে অন্যত্র রাখার চেষ্টা চলছে। তার জন্য খোঁজা হচ্ছে আলাদা বাসা।
সূত্র জানায়, বয়স্ক মায়ের জন্য ২৪ ঘণ্টার বেশি হোম কেয়ার সেবা পাচ্ছেন ছেলে। ছেলে দুই রুমের একটি বাসা নিয়ে এখানে বসবাস করেন। ছেলের পরিবার আছে। বাসা ছোট, এ কারণে মাকে বাসায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এটি একমাত্র কারণ নয়। কারণ তার স্ত্রী চাইছেন না, স্বামীর মা তার সংসারে থাকুক। এ নিয়ে পারিবারিক বিরোধ তৈরি হচ্ছে। এ কারণে ছেলেটি মানসিকভাবে ভীষণ কষ্ট ও চাপে আছেন। স্ত্রী ও মায়ের টানাপোড়েনের কারণে ছেলে ভয়ে আছেন। স্ত্রী পুলিশে অভিযোগ দিলে সমস্যা হবে। এমনও হতে পারে, জেলে যেতে হতে পারে। এই ভয়ে মাকে বাসা থেকে বাইরে কোথাও রাখার নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন।
অসহায় সন্তানটি চেষ্টা করছেন মায়ের যাতে সামান্যতম কষ্ট না হয়, সে জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় খোঁজা। তিনি মনে করেন, তার মা রান্না করতে পারেন, টুকটাক কাজকর্ম করতে পারেন। অথচ তিনি জানেন যে তার মা অনেক কাজ একা করতে পারেন না বলেই তার সাহায্যকারী প্রয়োজন, এ জন্য তিনি হোম কেয়ার পাচ্ছেন। তার পরও চাইছেন এমন যদি কাউকে পেতেন, সেই পরিবারের সঙ্গে তার মা থাকতে পারবেন। অর্থ একটু বেশি লাগলেও যাতে সেখানে ভালো থাকতে পারেন। প্রয়োজনে ছেলেটির এমনও সিদ্ধান্ত রয়েছে, মায়ের জন্য যদি আলাদা একটি বাসা কিংবা রুমের ব্যবস্থা করতে পারেন, তাহলে বাইরে থেকে খাবার কিনে মাকে দিয়ে আসবেন। তবু তিনি সংসারে অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে চান।
সূত্র জানায়, মা ও স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে ছেলেটি এখন ভীষণ চিন্তিত। তার অবস্থা এখন এমন, তিনি অনেক কিছুই মনে রাখতে পারছেন না। তিনি ভীষণ মানসিক চাপে আছেন। এই চাপ সহ্য করাটা তার জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কারণ তাকে এখানে অর্থ উপার্জন করতে হচ্ছে। সংসারের ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। স্ত্রীও কাজ করেন। সব মিলিয়ে মাকে নিয়ে তিনি অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। ঠিক কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। এ রকম অবস্থার মধ্যেই প্রতিটি দিন পার করছেন।
সূত্র জানায়, কিছু কিছু পরিবারের এ ধরনের সমস্যা রয়েছে। স্ত্রীর সঙ্গে মায়ের সম্পর্কের অবনতির কারণে জন্মদাত্রী মাকে নিজের ঘরে রাখতে পারছেন না। অন্যের ঘরে আশ্রয় খুঁজতে হচ্ছে। মা ও স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপোড়েনের যুদ্ধে অসহায় ছেলেটিকে সব যন্ত্রণা নীরবে সহ্য করে ভয়ে ভয়ে চলতে হচ্ছে।