২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার আকস্মিক পদত্যাগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার পর জনগণের অসন্তোষ ও দেশজুড়ে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভের জের ধরে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতের হিন্দন এয়ারফোর্স বেসে অবতরণ করেন। তার এই প্রস্থান শুধু বাংলাদেশকেই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়নি, বরং ভারতের জন্যও তা বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারত বহুদিন ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যা বাংলাদেশে তাদের প্রভাবশালী অবস্থান নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়াবলিতে ভারতের বিভিন্ন ভূমিকাকে কেন্দ্র করে বহুবার বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। হাসিনার পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ভারত। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কোনো সরকার ক্ষমতায় এলে তা হতে পারে ভারতের জন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। কেননা নতুন নেতৃত্ব হয়তো ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে পারে বা ভারতকে নিজেদের সীমা ছাড়িয়ে হস্তক্ষেপের সুযোগ না-ও দিতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ অনুসন্ধান করা অত্যন্ত জরুরি। প্রথমত, বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতের ভূমিকা নিয়ে যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও অসন্তোষ বিদ্যমান, তা পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত। ভারত সব সময়ই বাংলাদেশে সীমান্ত হত্যা, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, অমীমাংসিত চুক্তিসমূহ এবং বাণিজ্য বৈষম্যের মতো বিষয়গুলোতে সুসমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। এসব কারণে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্বিতীয়ত, একটি নতুন সরকার গঠিত হলে ভারতের উচিত সেই সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য শান্তিপূর্ণ এবং কূটনৈতিক পন্থা অবলম্বন করা। সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের আগ্রাসী মনোভাব বা একতরফা নীতি পরিবর্তন করা জরুরি। কেননা এই মনোভাব অতীতে বাংলাদেশের জনগণের মাঝে ভারত সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে সমান সম্মানজনক সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া উচিত, যা বাংলাদেশকে স্বাধীনভাবে তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে এবং পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করতে সহায়ক হবে।
তৃতীয়ত, ভারতকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পক্ষে কাজ করতে হবে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অত্যন্ত উত্তাল হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের উচিত বাংলাদেশে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা, যাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অক্ষুণ্ন থাকে এবং জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তদুপরি নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারত যদি সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রদর্শন করে, তবে দুই দেশের জনগণের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি হবে।
এই পরিস্থিতিতে ভারতের বাংলাদেশে অতীতের সম্পর্ক পরিচালনার ভুলগুলো পুনঃপর্যালোচনা করা এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে নতুন সরকার বা নেতৃত্বের সঙ্গে সুস্থ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। এটি না করলে ভারত শুধু বাংলাদেশেই নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে তার আঞ্চলিক অবস্থান ও নেতৃত্বকেও ঝুঁকিতে ফেলবে।
হাসিনার সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক : একটি বিপজ্জনক দ্বন্দ্ব
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসনের অধীনে ভারত বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব গড়ে তোলে, যেখানে হাসিনাকে একটি নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে দেখা হয়। ভারত তাকে এমন একজন নেতা হিসেবে চিহ্নিত করে, যিনি সন্ত্রাসবাদ দমন, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং অভিন্ন নদীগুলোর পানি ভাগাভাগি নিয়ে মতবিরোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ভারতের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী।
এই অংশীদারিত্বের স্বার্থে ভারত হাসিনার সরকারকে যথেষ্ট পরিমাণে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান করে আসছিল। হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং ইসলামি উগ্রবাদ দমন করতে তার প্রশাসনের সক্ষমতা ভারত উচ্চ প্রশংসায় বিবেচনা করেছিল। কিন্তু এই সহযোগিতার প্রক্রিয়ায় ভারত বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে প্রায় চোখ বন্ধ রেখেছিল। বাস্তবিক অর্থে, এই অংশীদারিত্বটি ছিল কৌশলগত এবং বাস্তববাদী। ঢাকায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এবং ধর্মীয় উগ্রপন্থা রোধে ভারত হাসিনার সরকারের ওপর নির্ভর করছিল। তবে এ ধরনের সহযোগিতা হাসিনার সরকারের সঙ্গে ভারতের অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে এবং বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের একটি বড় অংশকে ভারত থেকে দূরে সরিয়ে ফেলে।
শেখ হাসিনার সরকারকে ভারতের অতিরিক্ত সমর্থন এবং দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে নীরবতা, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ভারতের উচিত ছিল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আবেগ ও মতামতকে যথাযথভাবে বিবেচনা করা এবং ভারসাম্যপূর্ণ একটি কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করা।
বাংলাদেশিরা কেন ভারতের প্রতি অসন্তুষ্ট
বাংলাদেশের অনেক নাগরিকের মধ্যে ভারত সম্পর্কে গভীর ক্ষোভের মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ভারতের দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ। শেখ হাসিনার শাসনামলে, বিশেষ করে বিতর্কিত নির্বাচনগুলোর সময় ভারতের দৃশ্যমান সমর্থন অনেকের কাছে সরকার কর্তৃক ভিন্নমত দমনের জন্য ভারতীয় সমর্থন হিসেবে দেখা গেছে। ভারতের এ ধরনের ভূমিকা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর হস্তক্ষেপের প্রমাণ হিসেবে প্রতিফলিত হয়েছিল, যা দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
আরেকটি বড় বিতর্কিত বিষয় হলো পানি ভাগাভাগি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি নদী ভাগাভাগি রয়েছে এবং এই নদীগুলোর পানি শেয়ারিং চুক্তি নিয়ে বহুদিন ধরেই নানা রকমের মতবিরোধ চলছে। বাংলাদেশের অনেকেই মনে করেন, ভারত এই চুক্তিগুলোর পুরোপুরি সম্মান জানায় না এবং তাদের অনুকূলে সিদ্ধান্ত নেয়। বিশেষত, ভারত যখন একপেশে সিদ্ধান্ত নেয় বা পানিপ্রবাহের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, তখন বাংলাদেশে পানি সংকট সৃষ্টি হয়, যা কৃষি এবং পানীয় জলের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
অর্থনৈতিক সম্পর্কেও বাংলাদেশি জনগণের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। ভারত বাংলাদেশে অবকাঠামো এবং উন্নয়ন খাতে বড় পরিমাণে বিনিয়োগ করেছে, তবে অনেক বাংলাদেশির ধারণা, এই বিনিয়োগের বেশির ভাগ সুবিধা ভারতের পক্ষেই চলে যাচ্ছে। তারা মনে করেন, ভারত তার কৌশলগত স্বার্থের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে, যা বাংলাদেশের প্রকৃত উন্নয়ন বা জনগণের কল্যাণে সহযোগিতা করার পরিবর্তে ভারতের নিজস্ব স্বার্থ ও প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে। এমনকি ভারতের বিভিন্ন প্রকল্পে বাংলাদেশের কিছু অংশগ্রহণকারী এবং কোম্পানি অনেক সময় ভারতের স্বার্থের পক্ষে কাজ করে, যা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের জন্য আশঙ্কা ও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ভারতের ভুল হিসাব এবং আঞ্চলিক প্রভাব
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পরিচালনার ক্ষেত্রে ভারত যে ভুলগুলো করেছে, তা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি অতিরিক্ত সমর্থন ও তার শাসনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতি একধরনের অন্ধ সমর্থন দেখিয়েছে, যা বর্তমানে ভারতের জন্য এক বড় ধরনের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসিনার শাসনামলে ভারত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিনিময়ে তার সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনগুলোকে উপেক্ষা করেছে এবং এই নীতি বর্তমানে বিপদে পড়েছে। হাসিনার আকস্মিক পদত্যাগ এবং পার্লামেন্টের বিলুপ্তি ভারতের জন্য একটি বড় ধাক্কা, কারণ তারা এখন তার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্রকে হারানোর মুখোমুখি হয়েছে।
এ ছাড়া চীনের প্রভাব বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ভারতের জন্য একটি গুরুতর কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসিনার শাসনকালে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উষ্ণ করতে শুরু করেছিল। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (ইজও) অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে এবং চীনের সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়নে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চীনের প্রতিযোগিতামূলক অর্থায়ন ও উন্নয়ন খাতে তার সক্ষমতা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশকে আকর্ষণ করছে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। ভারতের কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলো এখন আরও জটিল হয়ে উঠছে, কারণ বাংলাদেশের নতুন সরকারের চীনের দিকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভারতের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে ভারতকে বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে হবে এবং চীনের প্রতি বাংলাদেশের ঝোঁককে মোকাবিলা করার জন্য নতুন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। ভারতের জন্য এখন সময় এসেছে ভুলগুলো শুধরে নিয়ে বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন ও আরও সংলাপ বৃদ্ধি করার।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কীভাবে উন্নত করা যায়
বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো সত্ত্বেও ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ পেয়েছে। এই সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক :
১. বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো : ভারতের উচিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করা। বাংলাদেশকে সম্মান করা, তার সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো ভবিষ্যতে সম্পর্ক মেরামতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
২. পানি ভাগাভাগি সমস্যার সমাধান করা : ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় দ্বন্দ্বের একটি হলো পানি ভাগাভাগি। দুই দেশের মধ্যে ৫৪টি আন্তসীমান্ত নদী রয়েছে এবং বাংলাদেশ প্রায়ই অভিযোগ করেছে যে ভারত তার সঙ্গে পানি ভাগাভাগির চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করছে না। বিশেষ করে, গঙ্গা ও তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। ভারতকে আন্তরিকভাবে এই পানি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে এবং দুই দেশের জন্য উপযুক্ত ও টেকসই সমাধান বের করতে হবে।
৩. অর্থনৈতিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা : ভারত বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হলেও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতকে বাংলাদেশের সঙ্গে এমন কিছু প্রকল্প চালু করতে হবে, যাতে বাংলাদেশের জনগণ সরাসরি লাভবান হতে পারে। ভারতের অর্থনৈতিক সহায়তা, যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং শ্রমবাজারে সুবিধা প্রদান বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং ভারতীয় পণ্যগুলোর জন্য নতুন বাজার তৈরি হবে, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।
৪. জনসাধারণের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করা : ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যা কেবল সরকারি স্তরের সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও শ্রদ্ধা প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। ভারতকে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারত-বিরোধী মনোভাব হ্রাস করার জন্য যথেষ্ট বিনিয়োগ করতে হবে, বিশেষ করে যুবসমাজের মধ্যে। শিক্ষা, সাংস্কৃতিক বিনিময়, যুব কর্মসূচি এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নত করা যেতে পারে।
৫. ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা : বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা কখনো কখনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে এবং ভারতকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর হামলা, হয়রানি বা তাদের অধিকার লঙ্ঘন ভারতীয় কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক মহলে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। ভারতকে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য সরকারকে উৎসাহিত করতে হবে এবং এসব ঘটনায় ভারতের পক্ষ থেকে সাহায্য ও সমর্থন প্রদান করতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং তাদের অধিকার রক্ষা করা শুধু মানবাধিকার রক্ষার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের স্বচ্ছতা এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি জোরালো করবে।
উপসংহার
বর্তমান পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে, তা ভারতের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যেখানে তাকে কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য ভারতকে সহনশীলতা, সমঝোতা এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। পানির বিভাজন, বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক কৌশলগত সম্পর্কের মতো সমস্যা সমাধানে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ভারতকে তার নিজস্ব কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করতে হবে, যেন দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি রক্ষা করা যায়।
-ডালাস, টেক্সাস