জ্যামাইকায় দিন দিন বাড়ছে নানা অপরাধের ঘটনা। সেখানে নথিপত্রহীন মানুষদের বসবাস। জ্যামাইকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকাজুড়েই এখন হোটেলগুলোতে নথিপত্রহীনরা রয়েছে। এসব মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। এলাকার উঠতি বয়সী কিছু ছেলে যেমন আছে, তেমনি বাইরে থেকে এসেও অনেকে অপরাধ করছে। তাদের অনেকেই ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে। জ্যামাইকার ১৭৯ স্ট্রিট, ১৬৯ স্ট্রিট, পারসন্স বুলেভার্ড, জ্যামাইকা সেন্টারসহ বিভিন্ন স্টেশনে হোমলেসদের আনাগোনা বেড়েছে। সেখানে কর্নারে কর্নারে চলে গাঁজা, বিয়ার ও মদের আসর। ফলে পথচারীরা আতঙ্কে ভুগছেন। কখন কোন দিক থেকে কে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন, এর কোনো হদিস নেই। হোমলেসরা বিভিন্নভাবে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করে চললেও অনেকেই ভয়ে কিছু বলতে পারেন না। জ্যামাইকাবাসী বলছেন, এসব অপরাধ নির্মূলে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে এটি চরম আকার ধারণ করতে পারে। তারা আরও বলছেন, এই অপরাধীদের হাত থেকে বাঁচতে জ্যামাইকাবাসী ও এর আশপাশের এলাকার মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। সচেতনতা বাড়লে অপরাধীরা অপরাধ করে পার পাবে না।
এ বিষয়ে ডা. আল আমীন রাসেল বলেন, কিছুদিন ধরেই জ্যামাইকা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে আকস্মিক কিল-ঘুষি মারার ঘটনা। দেখা গেল, একজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন অথবা চলাফেরা করছেন, এর মধ্যে একজন মানুষ এসে হঠাৎ করেই কিল ও ঘুষি মেরে দিচ্ছে। কিছু বলা যায় না। পথচারীরা ভয় পান এই ভেবে যে কিছু বললে মার দেবে। ফলে কিল-ঘুষি খেলেও তারা প্রতিবাদ না করে চলে যান। আবার এমনও হয়, তাদেরকে কেউ চটাতে চায় না। এ জন্য কিল-ঘুষি দিলেও পুলিশে কল করেন না।
জানা গেছে, জ্যামাইকা অ্যাভিনিউতে গত সপ্তাহে দুপুরবেলায় এক ব্যক্তি ১৬৮ স্ট্রিটের একটি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। পাশেই ছিলেন একজন কৃষ্ণাঙ্গ। তিনি হঠাৎ করেই ওই পথচারীর গালে ঘুষি মারেন। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী বলেন, আমি তাকে কিছুই বলিনি। তিনি হঠাৎ করেই এসে ঘুষি মেরে দেন। আরও ঘুষি মারতে উদ্যত হন। তার এই আচরণে আমি হতবাক হয়ে যাই। তিনি পুলিশে খবর দেননি কেন জানতে চাইলে বলেন, আসলে এ ধরনের ঘটনায় পুলিশে খবর দিলে তেমন কাজ হয় না।
সূত্র জানায়, জ্যামাইকায় এখন বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। সেখানে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে। এসব অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের পাশে বখাটে ছেলেরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেয়। তারা মদ, বিয়ার, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক গ্রহণ করে। এসব রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করার সময় মানুষকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। কেবল তা-ই নয়, ইয়াং মেয়েদের দেখলে ওই ছেলেরা নানা ধরনের মন্তব্য করে। এসব ব্যাপারে পুলিশের কাছে কেউ কমপ্লেইন দিতে চায় না। কারণ অভিযোগ দিলেও তেমন কোনো লাভ হয় না। আজকে অভিযোগ দিলে পুলিশ যখন রেট দেবে, তখন তারা চলে যাবে। পরের দিন আবার সেখানে ফিরে এসে একই কাজ করে। আর পুলিশে জানাতে হলে যেহেতু নিজের ফোন নম্বর দিয়ে অভিযোগ দিতে হয়, এ কারণেও অনেকেই ভয়ে অভিযোগ দিতে চান না। দিনের পর দিন এগুলো চলছে। বিশেষ করে সামারেই বেশি হয়।
এদিকে জ্যামাইকার বিভিন্ন এলাকায় অপরিচিত মানুষের সংখ্যা এখন বেড়েছে। ফলে রাস্তায় মানুষ ভোরবেলা, বিকেলের পর সন্ধ্যা থেকে রাতের বেলা একা একা হাঁটতে ভয় পান। এ কারণে অনেকেই সন্ধ্যার পর বের হন না। আবার কিছু বড় ভবনের মেরামত কাজ করার জন্য সেখানে বিল্ডিংয়ের বাইরে স্কার্ফ হোল্ডিং লাগানো হয়। সে কারণে সেখানেও বিভিন্ন ধরনের মানুষ দাঁড়িয়ে থাকেন। এতে অন্যদের পথচলায় বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। অনেক সময়ে ভবনের সামনে মদ, বিয়ারের বোতল ফেলে যায়। গাঁজা, মদ খেয়ে চিৎকার-চেঁচামেচিও করে।
জ্যামাইকার এক বাসিন্দা জানান, কয়েক মাস আগে তিনি দেখেন তার বাড়ির পেছনে ব্যাকইয়ার্ডে রাতের বেলায় একজন বসে আছে। সে বসে বসে কী যেন খাচ্ছে আর কিছুক্ষণ পরপর পায়চারী করছে ও চিৎকার করে উঠছে। ওই ব্যক্তি আরও বলেন, আমার মনে হয়, সে চুরি কিংবা ডাকাতি করার সুযোগ খুঁজছিল। দেখছিল যে আমরা বাড়িতে আছি কি না। বাড়িতে না থাকলে চুরি করবে। এরপর যখন শব্দ করা শুরু করেছি, তখন সে পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, আমার সন্তানেরা আমার সঙ্গে থাকে না। একা থাকি, এ কারণে ভীষণ ভয় পেতাম। পরে বাড়িতে ক্যামেরা লাগিয়ে নিই। এখন আমার সন্তানেরা তাদের বাসা থেকেও ক্যামেরায় দেখতে পায় কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করছে কি না।
সম্প্রতি ম্যানহাটনে ছুরিকাঘাতে একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। অন্যদিকে গত ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ১৬৪ স্ট্রিটে জ্যামাইকার কাছে একটি গ্রোসারিতে এসে এক ব্যক্তি অর্থ চায়। তাকে অর্থ দেননি গ্রোসারির ক্যাশ কাউন্টারের ব্যক্তি। এরপর তাকে গুলি করে আহত করে। তারা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ আসে। ওই ব্যক্তি পুলিশকে লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে। ওই ঘটনায় পুলিশের এক সদস্য আহত হন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ধরনের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।