Thikana News
২৪ এপ্রিল ২০২৫
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
আওয়ামী লীগ-বিএনপির ইনডোরে গরম সংলাপ

নির্বাচনে দফতরহীন প্রধানমন্ত্রীর ফর্মূলা

নির্বাচনে দফতরহীন প্রধানমন্ত্রীর ফর্মূলা
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরোধী দলের আন্দোলনে ভয় না পাওয়ার অভয় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধীদের আন্দোলন ও বিদেশিদের তৎপরতা, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন-রেস্ট্রিকশনে সরকারের খাসপছন্দের আমলাদের মধ্যে নড়েচড়ে বসার পরিপ্রেক্ষিতেই তার এই অভয় বার্তা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট খবর আছে। একদিকে বিরোধীরা কিছু দলবাজ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর একাধিক তালিকা বিদেশি নানা মহলে দাখিল করে রেখেছে। অন্যদিকে এতে তালিকাভুক্ত এবং তালিকার বাইরের কিছু কর্মকর্তা ঘাবড়ে গিয়ে দলীয়পনা বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ হয়ে যাওয়ার কাজে নেমেছেন। তাদের কেউ কেউ বিরোধী দলের বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে খায়খাতিরসহ সংযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিষয়টি সরকারের জন্য অ্যালার্মিং। তা উতরাতে চান প্রধানমন্ত্রী। ফিরিয়ে আনতে চান আমলাদের মনোবল।
চিহ্নিত আমলা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ সরকারি কিছু বাঘা বাঘা ব্যক্তির তালিকা প্রণয়নের কথা বিএনপি কিছুদিন ধরে অস্বীকার করছে। এর আগে উচ্চকণ্ঠেই দলটির নেতারা ভয়জাগানিয়া তথ্যটি প্রচার করেছিলেন। পরিস্থিতির অনিবার্যতায় সম্প্রতি তা নাকচ করে চলছেন। আসলে ভেতরে ভেতরে তালিকার কাজটি তারা আরও বেশি করছেন। তালিকা প্রতিদিন আপডেট করা হচ্ছে। লন্ডন থেকে তারেক রহমানের মনিটরিংয়ে কাজটি হচ্ছে বিএনপির সাবেক আমলাদের নেতৃত্বে। এ পর্যন্ত অন্তত তিনটি তালিকার কাজ শেষ হয়েছে তাদের। এগুলোতে কাটাছেঁড়াও হচ্ছে। প্রথম তালিকায় রয়েছে পুলিশ এবং প্রশাসনের একেবারে মার্কা মারাদের নাম। বেশ দীর্ঘ তালিকাটি। ২০১৮ ও ২০১৪ সালে যারা বিভিন্ন জেলায় ডিসি-এসপির দায়িত্বে থেকে ভোটের বাক্স ভরার নেতৃত্ব দিয়েছেন। ঘোষিত মার্কিন ভিসানীতির আওতায় পড়ার উপযুক্ত তারা সবাই।
দ্বিতীয় তালিকাটি ছোট। সেখানে আছে প্রশাসনের যারা এমন কঠিন সময়েও বিএনপির পক্ষে সদয়। তারা সংখ্যায় কম। বিএনপির পক্ষে ভূমিকা রাখতে না পারলেও তারা বিপক্ষে কিছু করছেন না। নিজ নিজ জায়গা থেকে তারা বিএনপির কাছে সরকারের ভেতরের তথ্য সাপ্লাই দেন। তৃতীয় তালিকাও নাতিদীর্ঘ। এ তালিকার ব্যক্তিরা পেশাদার-নিরপেক্ষ। তারা না আওয়ামী লীগ, না বিএনপি। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার দফতরে এসব তালিকার কপি জমা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির ঠান্ডা চালের মাঝে গোলমাল পাকাচ্ছে আওয়ামী লীগের একটি অতি-উৎসাহী গ্রুপ। এরা সহিংসতায় লাভ দেখছে। গত ১৪ বছরে এরা আওয়ামী লীগ সরকারকে বিভিন্নভাবে শুধু বিব্রত নয়, বিপর্যয়েও ফেলছে। জটিল রাজনৈতিক সমীকরণের মুখে বালখিল্যতায় গোটা সরকারকে বাজে পরিণতির দিকে নিয়ে এসেছে। মিডিয়ার জন্য নানা উপাদেয়- মুখরোচক খোরাক দিয়ে তারা দলকেও নিয়ে এসেছে খাদের কিনারে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মাঝে পশ্চিমা দেশগুলোকে খেপিয়ে তোলার পাগলামিতেও ব্যাপক ভূমিকা তাদের।
প্রধানমন্ত্রী যখন দেশকে নির্বাচনমুখী করতে চাইছেন, তখন আওয়ামী লীগের কেউ কেউ বিএনপির সঙ্গে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় আগ্রহী। এতে রাজনৈতিকভাবে বেনিফিশিয়ারি হচ্ছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগসহ সরকার পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ শক্তিধর দেশগুলোর লাল চাহনিতে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। সর্বশেষ নিয়মিত ব্রিফিংয়েও বাংলাদেশে চলমান সহিংসতায় জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানান স্টেট ডিপার্টমেন্ট মুখপাত্র মিলার। বিএনপির ওপর হামলার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তও চেয়েছেন। নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের মতপ্রকাশ ও সমাবেশের অধিকার নিশ্চিতের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সহিংস পরিস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করা হয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফিংয়ে। এদিকে বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা বন্ধে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আগামী নির্বাচন ঘিরে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার শঙ্কাও করেছে সংস্থাটি। বিএনপির কর্মসূচির দিনে শান্তির কথা বলে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের সহিংস অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত করে অ্যামনেস্টি থেকে বলা হয়েছে, সমাবেশগুলোতে কেবল অনুমোদিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করতে। বিবৃতিতে কেবল প্রয়োজন হলেই বলপ্রয়োগ ও কোনোক্রমেই আগ্নেয়াস্ত্র ও রাবার বুলেট ব্যবহার না করারও আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। দাবি জানিয়েছে, বিরোধী নেতাদের ওপর হামলার সুষ্ঠু তদন্তেরও। সামগ্রিক এ পরিস্থিতি বিএনপিকে ক্রমশ আশাবাদী করে তুলেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের মনোভাব, সুশীল সমাজের সমর্থন, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, দলের মধ্যে সাংগঠনিক শৃঙ্খলার উন্নতি সেই আশাবাদের পারদ উপরে তুলছে। ঘটনা বুঝতে পেরে বিএনপির সঙ্গে যদ্দুর সম্ভব একটি সদ্ভাব গড়ায় আগ্রহী সরকার ও আওয়ামী লীগের একটি অংশ। রাজনীতির আউটডোরে উত্তাপের মাঝে ভেতরে ভেতরে সরকার এবং বিএনপির মধ্যে সমঝোতার এশটি কেমেস্ট্রি চান তারা। এই সমঝোতা বা বোঝাপড়ায় ভারত ও চীনের মধ্যস্থতা রয়েছে। এর জেরে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের একাধিক বৈঠকের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই বৈঠকগুলোতে নির্বাচনের একটি সমঝোতার রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া, তারেক জিয়াকে নির্বিঘ্নে দেশে ফেরার অনুমতি, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা এবং আটক নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবি তাদের আলোচনার টেবিলে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস, জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নির্বাচনকালীন সরকারে যারা মন্ত্রী থাকবেন, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, এমন বিষয়ও রয়েছে। প্রয়োজনে নির্বাচনকালে প্রধানমন্ত্রী দফতরবিহীন হয়ে যাবেন-এমন ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া কিছু নাকচ না করে তা ঝুলিয়ে রাখছেন। এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য তিনি দেখিয়ে দিচ্ছেন তারেক রহমানকে। সময় অনেক গড়িয়ে যাওয়ায় এখন সেই চেষ্টায় অনেকটাই অকুলান। এ ছাড়া সরকারপক্ষের কোনো ভালো কথায়ই আস্থা রাখতে পারছে না বিএনপি। অতীতের নানান অভিজ্ঞতায় একে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের নতুন চাতুরী হিসেবেই দেখছেন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। নিয়মরক্ষার নির্বাচনের কথা বলে ক্ষমতাকে আরও ১০ বছর টেনে আনা, বেগম জিয়ার সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে ফোন করা এবং পরে তা ফাঁস করে দেওয়া, সর্বশেষ গয়েশ্বর-আমানকে নিয়ে নোংরা নাটকীয়তায় তাদের এ সন্দেহ আরও পাকাপোক্ত।

কমেন্ট বক্স