ঢাকায় গুলিস্তানে ফুটপাত দিয়ে কখনো হেঁটেছেন? এমন প্রশ্ন শুনে আপনি কী বলবেন? হাঁটা দায়। কারণ ফুটপাত অবৈধ দখলে থাকে। ফুটপাতে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে হকাররা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি- ঢাকার হকারি স্টাইলের দেখা মিলেছে এই মার্কিন মুল্লুকে। এটা ঐতিহ্য নাকি ‘খাসলত’, বলা মুশকিল হলেও নিউইয়র্কে বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের কিছু সড়কের ফুটপাত দিয়ে এখন হাঁটাচলা করা দায় হয়ে পড়েছে। ফুটপাতে চলতে না পেরে ভুক্তভোগীরা গালি দিতেও ছাড়ছেন না। কিন্তু তাতেও সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না। সিটি প্রশাসন জরিমানা করছেন। এ যেন কুম্ভকর্ণ। কোনোভাবেই ঘুম ভাঙছে না। দিন দিন ফুটপাতের দখল বেড়েই চলেছে। এলাকার পরিবেশও বিষিয়ে উঠেছে।
এত গেল ফুটপাত দখলের কথা। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের বিভিন্ন ফুটপাতে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চটপটি ও ফুচকার দোকান। এলাকাবাসী সিটিতে বহু অভিযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু তাতেও দুর্ভোগ কমছে না, বরং তা দিন দিন বাড়ছেই। বলতে গেলে অসহনীয় ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে ৭৩ স্ট্রিটে। কিছুদিন আগে নিউইয়র্ক সিটি এই স্ট্রিটের নাম দেয় ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’।
ভুক্তভোগীরা বলছেন- জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটের ফুটপাতের করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। ৭৩ স্ট্রিট ও ৩৭ অ্যাভিনিউর কর্ণার থেকে শুরু হয় ভারতীয় মালিকানাধীন একটি সুপারশপের ‘অত্যাচার’। তাদের পুরো কাঁচাবাজার ফুটপাতের ওপর। নিজের সীমানার বাইরে এসে ফুটপাতের দুই পাশ দখল করে পণ্যের পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে পথচারিদের সীমাহীন কষ্ট হচ্ছে চলাচলে। বিশেষ করে ছোট শিশুদের বহনকারী স্ট্রলার নিয়ে ওই এলাকা কোনোভাবেই পাড়ি দেবার জো নেই। আবার যারা হাঁটতে অক্ষম তাদের ওয়াকার নিয়ে চলাচলও অসম্ভব।
এদিকে ভারতীয় মালিকানাধীন একটি গ্রোসারির দেখাদেখি এবং নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশি মালিকানাধীন দু-একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের সব পণ্য গ্রোসারির বাইরে এনে সজিয়ে রাখছে। পথচারিরা চলাচল করতে না পেরে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছেন। এসব নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু কোনো কিছুই গায়ে মাখছেন না সংশিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
দু-একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ব্যবসায়ীর হকারি স্টাইলে ব্যবসা করার মনোভাবে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা, যারা এই প্রবাসে কষ্ট ও সংগ্রাম করে নিজেদের ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তারা বলছেন, আমাদের লজ্জা হয় এই ভেবে যে দু-একজন বাংলাদেশি ন্যাক্কারজনকভাবে ব্যবসায় নেমেছে।
৭৩ স্ট্রিটের স্বনামধন্য বাংলাদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হাজবাজার গ্রোসারির অন্যতম কর্ণধার মনসুর চৌধুরী ঠিকানাকে জানান, কিছু বাংলাদেশি একবারেই নিয়ম মেনে ব্যবসা করছেন না। এটা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য লজ্জার। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি ৭৩ স্ট্রিটে একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু দু-একজন ব্যবসায়ী এটাকে গুলিস্তান বানিয়ে ফেলেছে।
মনসুর চৌধুরী বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছি। কিন্তু কিছু লোক রাতারাতি সবকিছু করতে চায়। ফলে তারা নিয়মকানুন মানছে না। একজন আরেকজনকে দোষারোপ করছে। যেমন- অমুক করছে বলে তমুক অনিয়ম করছে। এতে বাংলাদেশিদেরই বদনাম হচ্ছে। কারণ দিনশেষে আমাদের পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। এটা কাম্য নয়।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মনসুর চৌধুরী অভিযোগ করেন- দু-একজন ব্যবসায়ী আছেন যারা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের ডাকাডাকি করেন। এলাকাটিকে একেবারেই গুলিস্তান বানিয়ে ফেলেছেন তারা। তিনি বলেন, নিজেরা নিজেদের সম্মান না বাঁচালে কেউ আমাদের শেখাতে আসবে না।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের (জেবিবিএ) সভাপতি হারুন ভূঁইয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি ঠিকানাকে বলেন, শুধু ৭৩ স্ট্রিট নয়, জ্যাকসন হাইটসের প্রতিটি সড়কের ফুটপাতে দোকানপাট বেড়েছে। ইসলামিক পণ্য বিক্রির জন্য নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসন কিছু ব্যক্তিকে অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এসব লোক এই সুযোগে ফুটপাতে সব ধরনের পণ্য বিক্রি করছে। ফলে যারা হাজার হাজার ডলার ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করছে তারা মাস শেষে লোকসান গুণছেন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তারা ফুটপাতে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসছেন। তবে বাংলাদেশিরা যতটা না ফুটপাতে পণ্য রাখছেন, তার চেয়ে কয়েকগুণ পণ্য দিয়ে ফুটপাত দখল করছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।
হারুন ভূঁইয়া বলেন, জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি ফুচকার দোকান ছিল। এখন ১০টি ছাড়িয়ে গেছে। শত শত মানুষ ফুটপাতে বসে ফুচকা খাচ্ছে। ফলে পথচারিদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, শুধু জ্যাকসন হাইটস নয়, জ্যামাইকার ১৬৫ স্ট্রিট থেকে ১৬০ স্ট্রিট ও হিলসাইড অ্যাভিনিউর মধ্যবর্তী ফুটপাতে অবৈধভাবে পণ্যের পসরা সাজিয়ে ব্যবসা করছে কিছু ব্যবসায়ী। এসব অবৈধ পন্থা থেকে বেরিয়ে আসতে কে কাকে বোঝাবে, অর্থাৎ বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাধবে কে?


ঠিকানা রিপোর্ট


