Thikana News
২৪ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

ভারত-বাংলাদেশ আলোচনায় শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে উত্তেজনা

ভারত-বাংলাদেশ আলোচনায় শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে উত্তেজনা ছবি সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরানোর প্রসঙ্গে বঙ্গোপসাগর সংলাপে ভারত ও বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তবে পরে হাস্যরসের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে উষ্ণতা ছড়িয়েছেন দুই পক্ষের আলোচকেরা।

ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে শনিবার (১৬ নভেম্বর) ‘ব্রিজিং ডিভাইডস : নেভিগেটিং দ্য কমপ্লেক্সিটিস অব ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ রিলেশন্স’ শিরোনামে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে এই বিশেষ অধিবেশন হয়। এই অধিবেশনটি ‘চ্যাথাম হাউস পলিসি’র আওতায় অনুষ্ঠিত হয়। এর অর্থ হলো নির্দিষ্ট কোনো আলোচকের নাম দিয়ে নির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য বা উদ্ধৃতি প্রকাশ করা যাবে না। সার্বিক আলোচনা প্রকাশ করা যাবে।

সংলাপে বাংলাদেশি আলোচকদের একজন পরামর্শ চান, ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার বিষয়ে বাংলাদেশের করণীয় কী? ভারতীয় দুজন আলোচক বলেন, বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় এগোনোর পর তা নিয়ে আলোচনা করা যায়। এ বিষয় নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে ভারতীয় এক আলোচকের এই বক্তব্যে সবাই হো হো করে হেসে ওঠেন।

সেই প্রসঙ্গ সংক্ষেপে তুলে ধরতে সংলাপ শেষে এক্স প্ল্যাটফর্মে হাজির হন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর কূটনৈতিক সম্পাদক সুহাসিনী হায়দার। তিনি এক পোস্টে লেখেন, ৫ আগস্টের পর ভারত ও বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিক, গবেষক ও সাংবাদিকদের মধ্যে প্রথম সাক্ষাৎ। কিছু উত্তেজিত মুহূর্ত এবং উষ্ণতা।’

আলোচনার টেবিলের এক পাশে ছিলেন বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ, নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবীর, চাকমা সার্কেলের প্রধান দেবাশীষ রায়, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, যুক্তরাষ্ট্রের কোলগেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নাভিন মুরশিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) গবেষণা ফেলো শাফকাত মুনির।

অপর পাশে ছিলেন ভারতের সাবেক কূটনীতিক ও ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত, মিলেনিয়াল ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রি ও অ্যাগ্রিকালচারের প্রেসিডেন্ট অনিল ত্রিগুনায়ত, সাবেক সেনা কমান্ডার অরুণ কে সাহনি, ভারতের সাবেক কূটনীতিক অশোক সাজনহর, ভারতের ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিসের গবেষণা ফেলো শ্রুতি এস পট্টনায়ক এবং ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর কূটনৈতিক সম্পাদক সুহাসিনী হায়দার।

সংলাপে বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ছয়টি দিক নিয়ে আলোচনা হয়—সীমান্ত হত্যা, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, রোহিঙ্গা সংকট, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ও সাম্প্রতিক রাজনীতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ। আলোচনা সঞ্চালনা করেন সিজিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো পারভেজ করিম আব্বাসী।

দুই ঘণ্টার মতো সময়ের আলোচনার শেষ দিকে বাংলাদেশি একজন আলোচক ভারতীয়দের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশে প্রায় দেড় হাজার মানুষের হত্যার ঘটনার পর শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন। এ হত্যার দায় তার। ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশের এখন কী করা উচিত?

জবাবে ভারতীয় এক আলোচক কয়েকটি বিষয়ে বললেও শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু বলেননি। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা না হলে অন্য কোনো বিষয়ে কথা হবে না—এই মানসিকতা পরিহার করা দরকার।

এরপর এক বাংলাদেশি আলোচক বলেন, দুই ঘণ্টার আলোচনায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি একজন আলোচক শেখ হাসিনার প্রসঙ্গটি তুললেন। কিন্তু ভারতীয় আলোচক জবাব এড়িয়ে গেলেন। তখন ভারতীয় আলোচক বলেন, তিনি প্রশ্ন বোঝেননি।

তার মন্তব্যের পর বাংলাদেশি আলোচক শেখ হাসিনা প্রসঙ্গ নিয়ে আবার কথা বলেন। তিনি বলেন, একজন স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার পর ভারত সরকার কর্মকর্তা পাঠিয়ে তাকে রিসিভ (গ্রহণ) করেছে। এমনটি তিনি আগে কখনো দেখেননি।

এ পর্যায়ে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা প্রসঙ্গে ভারতীয় ওই আলোচক বলেন, দ্বিপক্ষীয় বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ এখনো শেখ হাসিনাকে ফেরত চায়নি। ফেরত চাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

ভারতীয় আরেকজন আলোচকও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিষয়ে যত কথা এসেছে, তা সংবাদমাধ্যমে, মানুষের আলোচনায়। আদালতে বিচার এখনো শেষ হয়নি। বাংলাদেশ সরকারও ভারতের কাছে তাকে ফেরত চায়নি। ফেরত চাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত।

বাংলাদেশি আলোচকদের মধ্যে শুরুতে যিনি শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন, তিনি এ পর্যায়ে বলেন, তিনি কোনো প্রশ্ন করেননি। শুধু পরামর্শ চেয়েছিলেন।

তখন ভারতীয় এক আলোচক বাংলাদেশি আলোচকের উদ্দেশে বলেন, তিনি যদি বাংলাদেশের সরকারে থাকেন, কোনো সময় প্রয়োজন হলে ভারতে আশ্রয় নিতে চান, ভারত তাকেও আশ্রয় দেবে। তার এই বক্তব্যের পর সবাই হেসে ওঠেন।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। তখন থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন।

ঠিকানা/এনআই

কমেন্ট বক্স