Thikana News
২১ নভেম্বর ২০২৪
  1. ই-পেপার
  2. চলতি সংখ্যা
  3. বিশেষ সংখ্যা
  4. প্রধান সংবাদ
  5. আমেরিকার অন্দরে
  6. বিশ্বচরাচর
আমেরিকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

অন্ধকার কারাপ্রকোষ্ঠের স্থলে শ্বেতপাথরের ওভাল অফিসে ট্রাম্প

অন্ধকার কারাপ্রকোষ্ঠের স্থলে শ্বেতপাথরের ওভাল অফিসে ট্রাম্প
অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের দৃষ্টিতে আমেরিকার রাজনৈতিক অঙ্গনের সর্বাপেক্ষা সমালোচিত এবং দুবার অভিসংশনের দায় থেকে ভাগ্যচক্রে রেহাই পাওয়া সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেমোক্র্যাটিক শিবিরের এবারের পুরোপুরি যুদ্ধপ্রস্তুতির ময়দানে নবনির্বাচিত ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদচারণ ঘটেছিল চরম দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-সংশয়-সন্দেহ এবং এক সাগর অনিশ্চয়তাকে ভর করে। বলতে গেলে, শিরে অবধারিত সংক্রান্তি নিয়েই উত্তাল-তরঙ্গ এবং পাহাড়সমান প্রতিকূলতার ঊর্মিমালাবিক্ষুব্ধ নির্বাচনী সাগর একক প্রচেষ্টায় সাফল্যের সঙ্গে পাড়ি দিয়ে ট্রাম্প তরী কিনারায় ভিড়িয়েছেন। এবারের নির্বাচনী বৈতরণি উতরাতে গিয়ে ট্রাম্প বলিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য অবলম্বন খুঁজে পাননি। অপরিসীম বুকের পাটা, যাবতীয় ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলার বজ্রকঠোর সংকল্প, প্রতিকূলতার নিকট মাথানত না করার ধনুর্ভাঙাপণ এবং অপরিসীম ধৈর্যই ট্রাম্পিত মঞ্জিলে মকসুদে পৌঁছে দিয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০২১ সালে হোয়াইট হাউস ত্যাগের পর থেকে পর্ণ তারকা ড্যানিয়েল স্টর্মের মুখ বন্ধ রাখার শর্তে তাকে গোপনে প্রদত্ত অর্থ বা হাশমানি, কর ফাঁকি, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিল দাঙ্গা, শপথ নিয়ে মিথ্যা বলাসহ নানাবিধ মামলা-মোকদ্দমার রাহুবন্ধনে বিগত চারটি বছর আঁটসাঁট বাঁধা ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের জীবন। নিউইয়র্কের বিভিন্ন আদালতের কাঠগড়ায় একাধিক ফেলনি মামলার আসামি হিসেবে নিয়মিত হাজিরা দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (২০১৭ থেকে ২০২১) রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠেছিল।
তাই সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভাগ্যলক্ষ্মী মুখ তুলে না তাকালে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট (২০ জানুয়ারি ২০২৫) ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্যাপিটল হিলের শ্বেতপাথরের ওভাল অফিসের পরিবর্তে হাশমানি মামলার দণ্ডিত অপরাধী হিসেবে অন্ধকার কারাপ্রকোষ্ঠের নির্জন কক্ষে বাকি জীবন কাটাতে হতো। অদৃষ্টের ঐন্দ্রজালিক শক্তির বলেই আমেরিকার ১২০ বছরের ঐতিহাসিক রেকর্ড ভঙ্গ করে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (৭ কোটি ৪৬ লাখ) প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে (৭ কোটি ৯ লাখ) প্রায় ৩৭ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। অধিকন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী হ্যারিসের ২২৬টি বা ৪২% ইলেকটোরাল ভোটের বিপরীতে ট্রাম্প ৩১২টি বা ৫৮% ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন। রিপাবলিকান পার্টি সিনেটের ৫৪টি আসন এবং কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় ট্রাম্প স্বয়ং বিশ্বের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী রাষ্ট্রের কমান্ডার-ইন-চিফের দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন।
নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের জ্যামাইকা হাসপাতালে জন্মগ্রহণকারী ট্রাম্প ফ্রেড ট্রাম্প ও মেরি আনে ম্যাকলয়েড ট্রাম্প দম্পতির চতুর্থ সন্তান। কুইন্সের জ্যামাইকা এস্টেটের পারিবারিক পরিবেশে যমজ বোন মেরি আনে ফ্রেড জুনিয়র ও এলিজাবেথ এবং ছোট ভাই রবার্টের সঙ্গে পিতা-মাতার স্নেহসান্নিধ্যে তিনি বড় হন। লেখাপড়ার হাতেখড়ি থেকে সপ্তম গ্রেড পর্যন্ত ট্রাম্প প্রাইভেট কিউ-ফরেস্ট স্কুলে এবং অষ্টম থেকে একাদশ গ্রেড পর্যন্ত নিউইয়র্ক মিলিটারি একাডেমি প্রাইভেট বোর্ডিং স্কুলে অধ্যয়ন করেন। হাইস্কুল সমাপনান্তে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হোয়ারটন স্কুলে বদলি হওয়ার আগ পর্যন্ত ট্রাম্প দুই বছরের জন্য ফোর্ডহামস হিল ক্যাম্পাসের লিবারেল আর্টস কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৯৬৮ সালের মে মাসে তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হোয়ারটন স্কুল থেকেই অর্থনীতিতে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৬৬ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে চাইলেও শারীরিক অক্ষমতার কারণে তার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় ১৯৭১ সালে পারিবারিক রিয়েল এস্টেট ব্যবসার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন এবং বহুতলবিশিষ্ট ভবন, গগনচুম্বী হর্ম, ক্যাসিনো, হোটেল, গলফ কোর্স নির্মাণে মনোনিবেশ করেন। ১৯৯০ এর দশকে তার অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে লালবাতি জ্বলে। ১৯৭৭ সালে ট্রাম্প চেজ মডেল জেলনিকোভাকে বিয়ে করেন। ওই সংসারে ট্রাম্প দম্পতির ডোনাল্ড জুনিয়র (জন্ম ১৯৭৭), ইভাঙ্কা (জন্ম ১৯৮১) ও এরিক (১৯৮৪) নামের তিন সন্তান রয়েছে। অভিনেত্রী মেরিয়া মাপলসের সঙ্গে অভিসারের সংবাদ রাষ্ট্র হয়ে পড়ায় ১৯৯০ এর দশকে ট্রাম্প দম্পতির ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ১৯৯৯ সালে ট্রাম্প ও ম্যাপলস বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৯৩ সালে তাদের সংসারে কন্যা টিফানির জন্ম হয়। ২০০৫ সালে ট্রাম্প স্লোভানিয়ার মডেল মেলানিয়া কনাসকে বিয়ে করেন। মেলানিয়া ও ট্রাম্প দম্পতির ব্যারন নামে ২০০৬ সালে জন্ম নেওয়া এক পুত্রসন্তান রয়েছে। ২০০৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ট্রাম্প দ্য অ্যাপ্রেনটিস শীর্ষক রিয়েলিটি টেলিভিশন সিরিজে বিনিয়োগ করেন এবং ভাগ্যের মোড় ঘুরিয়ে দেন। কর্মব্যস্ত ও বর্ণাঢ্য ব্যবসায়িক জীবনে ট্রাম্প ছয়বার ব্যয়সায়িক দেউলিয়াপনাসহ চার সহস্রাধিক আইনি জটিলতার মুখোমুখি হন। ১৯৮৭ সালে ট্রাম্প রিপাবলিকান হিসেবে, ১৯৯৯ সালে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাফিলিয়েট অব দ্য রিফর্ম পার্টির ইন্ডিপেন্ডেন্ট সদস্য হিসেবে, ২০০১ সালে ডেমোক্র্যাট হিসেবে, ২০০৯ সালে রিপাবলিকান হিসেবে, ২০১১ সালে আন-অ্যাফিলেটেড এবং ২০১২ সালে রিপাবলিকান হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০০ সালে রিফর্ম পার্টির প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারিতে ট্রাম্প তিন মাস প্রচারণা চালানোর পর সরে দাঁড়ান। ২০১২ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতিপক্ষ হিসেবে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে (সিপ্যাক) যোগ দিয়েছিলেন। পরে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত থাকেন। ২০১৫ সালের জুনে ট্রাম্প প্রার্থিতা ঘোষণা করেন এবং ২০১৬ সালের মার্চে রিপাবলিকান দলীয় ফ্রন্টরানার ও মে মাসে রিপাবলিকান মনোনয়ন লাভ করেন।
প্রকৃত প্রস্তাবে ২০১৬ সালে রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার পর ট্রাম্প দূরদৃষ্টি ও উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন এবং সৃজনশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বিশেষত, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলীয় প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করে ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। লব্ধপ্রতিষ্ঠ রিয়েলটর হিসেবে সমগ্র আমেরিকায় সুপরিচিত ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তার রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি ও জৌলুশ আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে নানা ঘটন-অঘটনের জন্ম দেয়। অবশ্য ২০১৬ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগ থেকেই ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপসহ একাধিক অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। ফলে ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কংগ্রেশনাল তদন্ত অনুষ্ঠিত হয় এবং ট্রাম্পকে অভিসংশনের প্রস্তাব সিনেটে প্রেরণ করা হয়। আবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ট্রাম্পের অন্যের পরামর্শের প্রতি তেমন কর্ণপাত না করায় কেবিনেট সদস্যদের সিংহভাগ তার কর্মকাণ্ডে চরম অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং অনেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন ও অনেকে বরখাস্ত হন। বিশেষত, একক সিদ্ধান্তে আমেরিকান নাগরিকদের কিছু সংখ্যক মুসলিম দেশ ভ্রমণের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা, আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ, সীমান্তে দুগ্ধপোষ্যসহ শতাধিক শিশু-কিশোরকে অবৈধ পিতা-মাতার কাছ থেকে নির্মমভাবে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা, ২০১৭ সালের ট্যাক্স কাট অ্যান্ড জব অ্যাক্ট, অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট ইত্যাদি পদক্ষেপ ট্রাম্পকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ, বিশেষত শতাব্দীর ভয়াবহ প্রাণঘাতী করোনা মহামারি মোকাবিলায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অনীহা সর্বোপরি ড. অ্যান্থনি ফাউসির সঙ্গে মতানৈক্য ট্রাম্পকে চরম লেজেগোবরে পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেয় এবং তার জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটারের পারদ হিমাঙ্কের নিচে নেমে আসে।
চরম অবনতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে ২০২০ সালের নির্বাচনে আমেরিকার প্রচারমাধ্যমগুলো ডেমোক্র্যাটিক দলীয় প্রার্থীর প্রতি জোরালো সমর্থন জানায় এবং ডেমোক্র্যাটিক দলীয় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, ক্লিনটন প্রমুখ জো বাইডেনের পক্ষে আদাজল খেয়ে লাগেন। ডেমোক্র্যাটিক শিবিরের সমষ্টিগত প্রচেষ্টার কাছে ঢাল-তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সরদারতুল্য রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ট্রাম্পের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অবশেষে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ও নির্বাচনী ফলাফল বানচালের প্রচেষ্টায় ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা সংঘটিত করে সমূহ বিপদের উত্তপ্ত কড়াই থেকে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ডে বেচারা ট্রাম্পের উত্তরণ ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একমাত্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই দুবার অভিসংশনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনার জন্য ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টির প্রশ্নে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ তদন্তে কংগ্রেসকে বাধা দেওয়ায় ২০১৯ সালে এবং ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারির দাঙ্গার দায়ে মোট দুবার অভিসংশনের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তবে সিনেট ট্রাম্পকে উভয় মামলায় খালাস দিয়েছিল। স্টর্ম ড্যানিয়েলসকে হাশমানি পরিশোধ মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকেই নিউইয়র্কের জুরিবৃন্দ ২০২৪ সালে ফেলনি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। ক্লাসিফায়েড ডকুমেন্ট বেঠিকভাবে পরিচালনা এবং ২০২০ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের দায়েও ট্রাম্পকে ফেলনি অভিযোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ ছাড়া যৌন হয়রানি, নিন্দাবাদ ও আর্থিক জালিয়াতির দায়ে সিভিল মোকদ্দমায় ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
যাহোক, ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের দাপ্তরিক কর্মসূচির অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে ঘুণেধরা অভিবাসন নীতিমালা সংস্কার। ট্রাম্প জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন প্রথা বিলোপ করবেন। অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ট্রাম্প প্রশাসন শুরুতেই সীমান্ত গালাসিল করবে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে সর্বশেষ প্রয়োগ হওয়া ও ১৭৯৮ সালে প্রণীত দ্য অ্যালাইন অ্যাক্ট বাতিলপূর্বক ইতিহাসের সর্বাধিক ১ কোটি ১০ লক্ষাধিক অবৈধ অভিবাসীকে সহসা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হবে। রাষ্ট্রের কোটি কোটি ডলার সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ট্রাম্প বিদ্যমান ক্যাচ অ্যান্ড রিলিজ (গ্রেপ্তার করো ও ছেড়ে দাও) ব্যবস্থা বাতিল এবং রিমেইন ইন মেক্সিকো (মেক্সিকোতে থেকে যাও) ফিরিয়ে আনবে। অধিকন্তু টাইটেল ৪২ পুনর্বহাল করে পাবলিক হেলথের অজুহাতে অবৈধদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা প্রথার ইতি ঘটাবেন। স্যাংচুয়ারি সিটিজ (সংবিধিবদ্ধ নগরী) নীতিমালা বাতিলের জন্য ট্রাম্প কংগ্রেসে একটি বিল প্রেরণের আশা ব্যক্ত করেছেন। এ ছাড়া অতিরিক্ত ১০ হাজার সীমান্তরক্ষী এজেন্ট নিয়োগ এবং বিদ্যমান এজেন্টদের মজুরি ১০% বৃদ্ধি এবং জনপ্রতি ১০ হাজার ডলার রিটেনশন এবং সাইনিং বোনাস প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ করতে কংগ্রেসের প্রতি ট্রাম্প অনুরোধ জানাবেন। সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সহায়-সম্পদ জব্দ করে সেই সম্পদ ভয়ানক অপরাধে নিহতদের স্বজনদের মধ্যে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদানের প্রস্তাবও করেছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর খুনি হিসেবে প্রমাণিত অভিবাসীদের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের সুস্পষ্ট ঘোষণাও দিয়েছেন ট্রাম্প। আমেরিকান নাগরিকদের জন্য কতিপয় মুসলিম রাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনঃপ্রবর্তন ছাড়াও ট্রাম্প গাজার বাস্তুহারাদের ক্ষেত্রে ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর এবং সকল অভিবাসীর জন্য কতিপয় আইডিওলজিক্যাল স্ক্রিনিং প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন। ফেডারেল অ্যাবরশন ব্যান (ফেডারেল সরকার কর্তৃক গর্ভপাত নিষিদ্ধ) আইনের বিরুদ্ধে ট্রাম্প ভেটোদানের ঘোষণা দিয়েছেন এবং গর্ভপাতের ব্যাপারে সিদ্ধান্তদানের ক্ষমতা প্রতিটি স্টেটকে দেওয়ার কথা বলেছেন। মূল্যস্ফীতির ইতি ঘটানো ছাড়াও ট্রাম্প ট্রাম্প শ্রমিক সম্প্রদায় এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঐতিহাসিক ট্যাক্স কাট বা কর মওকুফের ঘোষণা দিয়েছেন। টিপস বা বকশিশ, ওভারটাইম এবং সোশ্যাল সিকিউরিটি বেনিফিটের ওপর কর মওকুফ ছাড়াও ট্রাম্প পিতা-মাতা কিংবা ঘনিষ্ঠজনদের ভরণপোষণকারী পরিবারগুলোকে ট্যাক্স ক্রেডিট দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, অযাচিত কর পরিহার, অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্টসহ সর্বক্ষেত্রে যুগোপযোগী ও কাক্সিক্ষত সংস্কারের বজ্রদীপ্ত শপথ উচ্চারণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। উপসংহারে বলতে চাই, স্বার্থের ঘেরাটোপে আচ্ছাদিত বর্তমান বিশ্বের সর্বত্রই হানাহানি, যুদ্ধবিগ্রহ, রক্তক্ষয়, ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানুষের অবয়বধারী বিশ্বগ্রাসে উদ্যত সিন্দাবাদের একচোখা দৈত্যদের ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত রয়েছে। এমনতর বাস্তবতায় ঘাত-প্রতিঘাতে জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় বিশ্বজুড়ে শান্তির মৃদুমন্দ মলয় বয়ে যাক-এই কামনা রইল।
লেখক : সহযোগী সম্পাদক, ঠিকানা, নিউইয়র্ক।

কমেন্ট বক্স